ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা নেই খাজুরা আশ্রয়ণ প্রকল্পে

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, বরিশাল

ছিন্নমূল মানুষের নিরাপদ বসবাসের জন্য ১৯৯৯ সালে বরিশালের কলাপাড়া উপজেলায় কুয়াকাটা ইউনিয়নের ফাঁসিপাড়া গ্রামে তৈরি করা হয় খাজুরা আশ্রয়ণ প্রকল্প শুরু থেকে ১০টি ব্যারাকের ৬০টি পরিবারে বসবাস করছে প্রায় ৩০০ মানুষ। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্পটি স্থাপনের দুই দশকের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও সংস্কার না করায় বেহাল হয়ে রয়েছে অবকাঠামোগুলো। রয়েছে সুপেয় পানি সংকটবেহাল ঘর ব্যবহার অনুপযোগী শৌচাগার, নেই চলাচলের রাস্তা। প্রশাসনের উদাসীনতায় ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা পাচ্ছেন না এ প্রকল্পের বাসিন্দারা।

সম্প্রতি খাজুরা আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, ১৯৯৯ সালে স্থাপন করা প্রকল্পে বতর্মানে ৬০টি পরিবারের তিন শতাধিক মানুষ বসবাস করছে। প্রকল্পের আওতায় ১০টি ব্যারাকে ৬০টি কক্ষ রয়েছে। শুরুতে ৩৬টি শৌচাগার ছিল। সংস্কারের অভাবে চার বছর ধরে ৩০টি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। মোটামুটি ভালো থাকা ছয়টি শৌচাগারে প্রতিদিন সকালে বাসিন্দাদের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। এখানে বসবাসকারীদের জন্য ছয়টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হলেও দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়েছে চারটি। দুটি নলকূপ ভালো থাকলেও মাঝেমধ্যে বালি লবণাক্ত পানি ওঠে। খাবার পানি আনতে হয় অনেক দূর থেকে। গোসল করতে হয় পাশের খালের ময়লাযুক্ত পানিতে। শৌচাগার পানির সমস্যা বাসিন্দাদের ভোগাচ্ছে বছরের পর বছর। এখানে বসবাসকারীদের আলীপুর বন্দরে যেতে ২০০৩ সালে নির্মাণ করা হয় খাজুরা আয়রন সেতু। কিন্তু ২০১৭ সালে সেতুটি ভেঙে যায়। এর পর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা চাঁদা তুলে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচল করছেন।

এদিকে চলাচলের জন্য রাস্তা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে ব্যারাকের এক পাশ থেকে অন্য পাশে যেতে হাঁটুসমান কাদা মাড়াতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আশ্রয়ণ প্রকল্পের এসব সমস্যা সমাধানে একাধিকবার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অথচ নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি ছোটে। নির্বাচন শেষ হলে সেই প্রতিশ্রুতি কেউ রাখে না।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক বাসিন্দা বলেন, একটি রাস্তা নির্মাণের জন্য জনপ্রতিনিধিরা দিনের পর দিন আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। রাস্তা আর হচ্ছে না। আশ্রয়ণ প্রকল্পের উঠান আর ঘরের মেঝে সমান। বর্ষায় জোয়ার বৃষ্টির পানি ঘরে প্রবেশ করে।

সময় সাংবাদিককে উদ্দেশ করে তারা বলেন, আপনি যদি বর্ষাকালে আসতেন তাহলে দেখতেন আমরা কত দুর্ভোগে আছি। ভুক্তভোগীদের দাবি, দফায় দফায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ধর্ণা দিলেও এগিয়ে আসেনি কেউ। ফলে আজও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসবাসকারীদের।

ফাঁসিপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হাওলাদার বলেন, বর্তমানে টয়লেট নলকূপের সমস্যা আমাদের ভোগাচ্ছে। জরুরিভিত্তিতে এগুলো সংস্কার করা দরকার।

সাধারণ সম্পাদক সুধীর চন্দ্র দাস বলেন, আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে ঘরগুলো উঁচু করে মাটি ভরাট না করলে ঘরে থাকা যাবে না। স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল হোসেন কাজী বলেন, আশ্রয়ণবাসী বিভিন্ন সমস্যায় আছেন। সমস্যা দূর করার জন্য আমি চেষ্টা করছি।

লতাচাপলী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, আশ্রয়ণবাসীর টয়লেট নলকূপের সমস্যা সমাধানের জন্য চাহিদাপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আমি চেষ্টা করছি একটি মডেল আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ার।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মাদ শহীদুল হক বলেন, নলকূপের সমস্যা অচিরেই দূর হবে। টয়লেট ঘর সংস্কারের বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন