চাঁদের মাটি সংগ্রহে একটি কোম্পানিকে ১ ডলার দেবে নাসা, তাও তিন কিস্তিতে!

বণিক বার্তা অনলাইন

চাঁদ থেকে শিলাখণ্ডের ছোট একটি নমুনা সংগ্রহ করার দায়িত্ব পাওয়া একটি কোম্পানিকে মাত্র ১ ডলার দেবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। কলোরাডোভিত্তিক ওই কোম্পানির সঙ্গে এভাবেই চুক্তি হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সেই টাকা দেয়া হবে তিন ধাপে!

অবশ্য চান্দ্র রেগলিথ বা চাঁদের মাটি সংগ্রহণের জন্য চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে নাসা। এর মধ্যে লুনার আউটপোস্ট একটি, যাদের বিনিময়ে ১ ডলার দেয়া কথা বলা হয়েছে চুক্তিতে। সব মিলিয়ে চারটি কোম্পানির সঙ্গে মোট ২৫ হাজার ১ ডলারে চুক্তি করেছে নাসা।

আর্টেমিস প্রোগ্রামের এই মাটি ব্যবহার করবে নাসা। ২০২৪ সালের মধ্যে একজন পুরুষ ও একজন নারীকে চাঁদে পাঠানোর কর্মসূচি এই আর্টেমিস।

নাসা এই কর্মসূচিকে একটি বাণিজ্যিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করছে। পৃথিবী গ্রহের বাইরের সম্পদ সংগ্রহ, বিক্রয় এবং ব্যবহারের জন্য একটি ব্যবসায়িক মডেল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের অংশ হিসেবেই এভাবে প্রতীকী চুক্তি করছে প্রভাবশালী এই মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি।

এই কর্মসূচিতে যুক্ত হওয়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক মাস্টেন স্পেস সিস্টেম এবং টোকিওভিত্তিক আই-স্পেস ও তার ইউরোপীয় সহযোগী।

৫০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম চাঁদের মাটি সংগ্রহের বিনিময়ে সংস্থাগুলোকে আলাদাভাবে অর্থ দেবে নাসা।

নাসার একজন মুখপাত্র এক বিবৃবিতে বলেন, কোম্পানিগুলো নমুনা সংগ্রহ করে আনবে এবং সেই সঙ্গে দৃশ্যমান প্রমাণ তাদের দেখাতে হবে। এরপর চুক্তি অনুযায়ী সেটির মালিকানা হস্তান্তর করে নাসাকে দেয়া হবে। 

নাসার কর্মকর্তারা বলছেন, চুক্তির অর্থের পরিমান এতো কম হওয়ার কারণ হলো নাসা শুধু নমুনাটির জন্য অর্থ পরিশোধ করবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থার উন্নয়ন বা পরিবহন ব্যয় বহন করবে না।

কলোরাডোভিত্তিক লুনার আউটপোস্ট মূলত একটি রোবটিক্স প্রতিষ্ঠান। তারা চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে শিলার নমুনা সংগ্রহ করবে। লুনার আউটপোস্টের প্রধান নির্বাহী জাস্টিন সাইরাস বিবিসিকে বলেন, ২০২৩ সালে মিশন পরিচালনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আমরা কয়েকটি ল্যান্ডার সংস্থার সঙ্গে কাজ করছি, যাতে আরো আগেই কাজটি করা যায়। 

এই কর্মসূচির পেছনে টাকাটিই কিন্তু মূল বিষয় নয়। ফলে নাসা কতো টাকা দেবে সেটি কোম্পানিগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই মিশনের অনেক বৈজ্ঞানিক সুফল রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে সম্পদ সংগ্রহের একটা অনুশীলন হয়ে যাবে।

লুনার আউট পোস্টের সাইরাস বলছে, মহাকাশ অভিযান সম্পর্কে মানুষের সাধারণ ধারণার এক বাঁকবদল হবে এই কর্মসূচির মাধ্যমে। 

সংস্থাটি অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিনের সঙ্গে আলোচনা করছে। এছাড়াও চন্দ্র অভিযানে প্রস্তুতি নিতে থাকা আরো কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলছে।

নাসার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জাপানের আই-স্পেস ২০২২ সালের মধ্যে চাঁদের উত্তর-পূর্বের নিকটবর্তী অংশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে। এর জন্য তারা ৫ হাজার ডলার নেয়ার প্রস্তাব করেছে।

মহাকাশ বিশেষজ্ঞ সিনিয়াড ও’সুলিভান বলেন, এক ডলারের এই নামমাত্র মূল্যের চুক্তিটি কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করছে। এখানে উদ্ভাবনের আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব নয়, পৃথিবীর সীমার বাইরে ক্রেতা ও বিক্রেতার একটি বাজার তৈরির ব্যবসায়িক এবং আইনি মানদণ্ড তৈরির একটি উদ্যোগ হিসেবে দেখতে হবে।

তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির টাকা তিন ধাপে পরিশোধ করবে নাসা। চুক্তিমূল্যের মোট অর্থের ১০ শতাংশ দেয়া হবে চুক্তির পরপরই, মহাকাশযান উৎক্ষেপণের পর দেয়া হবে ১০ শতাংশ এবং সংগৃহীত নমুনা যাচাই করার পর বাকি ৮০ শতাংশ দেবে নাসা। 

সাইরাস মজা করে বলেন, আর হ্যাঁ, আমাদের সঙ্গে চুক্তির এই এক ডলারও কিন্তু তিন কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে। অর্থাৎ দুই ধাপে দশমিক ১০ ডলার এবং শেষ ধাপে পাবো দশমিক ৮০ ডলার!

গতকাল বৃহস্পতিবার নাসার পক্ষ থেকে এই ঘোষণা এসেছে। ঠিক এই সময়ই চাঁদের মাটি সংগ্রহের লক্ষ্যে চীন তার নিজস্ব মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করেছে। 

চীনের চ্যাঞ্জ-৫ চন্দ্রযান এরই মধ্যে চাঁদের মাটি সংগ্রহ করেছে। বর্তমানে সেটি পৃথিবীর পথে রয়েছে।

সূত্র: বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন