সড়ক নিরাপত্তায় উদ্যোগ অসংখ্য, বাস্তবায়ন সামান্যই

নিজস্ব প্রতিবেদক

সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে কম-বেশি ২০টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর সংস্থা। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে দুর্ঘটনা কমাতে সবারই রয়েছে নিজস্ব প্রকল্প কর্মসূচি। কেউ সড়ক বানালে, কেউ বানায় ফুটপাত। উড়ালসড়ক, এক্সপ্রেসওয়ে, ফুটওভারব্রিজ, বাস বে কিংবা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তিঅবকাঠামো উন্নয়নে প্রকল্পের শেষ নেই। শুধু অবকাঠামো উন্নয়নই নয়, পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা, যানজট হ্রাসের জন্যও রয়েছে অসংখ্য প্রকল্প, কর্মসূচি সুপারিশ। তবে এসবে কাজের কাজ যে কিছুই হয়নি, ঘর ছেড়ে রাস্তায় বের হলেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। দুর্ঘটনা, যানজট, হয়রানিসহ নানা রকম বিশৃঙ্খলা নিয়েই আজ দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস।

সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২০১৮ সালের আগস্টে ২০টি নির্দেশনা দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এর মধ্যে রয়েছে বাস চলাচলের সময় দরজা বন্ধ রাখা, স্টপেজ ছাড়া ওঠানো বন্ধ, চালক সহকারীর পরিচয়পত্র প্রদর্শন, মোটরসাইকেলে সর্বোচ্চ দুজন আরোহী এবং হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক, ফুটওভারব্রিজ বা আন্ডারপাসের আশপাশে রাস্তা পারাপার বন্ধ রাখা, ফুটপাত হকারমুক্ত রাখা, রুট পারমিট ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলোকে দ্রুত ধ্বংস করা। দুই বছর পর এসে চালক সহকারীর পরিচয়পত্র প্রদর্শন, মোটরসাইকেলে সর্বোচ্চ দুজন আরোহী এবং হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক ছাড়া আর কোনো নির্দেশনাই বাস্তবায়ন হয়নি। সড়ক আইন বাস্তবায়ন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১১ দফা সুপারিশ, এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন, সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ তহবিল বোর্ডসহ অসংখ্য উদ্যোগ এসেছে সড়ক খাতে নিরাপত্তা শৃঙ্খলা আনতে। যদিও এসব উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেছে সামান্যই।

সড়ক নিরাপত্তায় লিডিং অর্গানাইজেশন হিসেবে কাজ করে সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগ। বিভাগটির পাঁচটি সংস্থার মধ্যে তিনটি সংস্থা সরাসরি সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে। সড়ক পরিবহনে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, শৃঙ্খলা এবং সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করামোটা দাগে তিনটি প্রধান কাজ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তবে সংস্থাটির বিরুদ্ধে শৃঙ্খলার বদলে বিশৃঙ্খলা তৈরির অভিযোগই বেশি। আনফিট গাড়িকে রাস্তায় চলাচলের অনুমতি, অদক্ষ চালককে লাইসেন্স দেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগে জর্জরিত সংস্থাটি।

অন্যদিকে দেশের সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ উন্নয়নের দায়িত্ব সড়ক জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের। নিরাপদ সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরি সেগুলো চলাচল উপযোগী রাখার দায়িত্ব সংস্থাটির। বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থার তথ্য বলছে, বাংলাদেশের সড়ক অবকাঠামোর মান বিশ্বে একেবারে তলানিতে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ সড়ক অবকাঠামো কেবল নেপালের। দেশের সর্বত্র ভাঙাচোরা সড়ক, ভুল নকশা, ভুল পরিকল্পনায় নির্মাণ করা সড়ক-মহাসড়কের দায় কোনোভাবেই সওজ অধিদপ্তর এড়াতে পারে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা আশপাশের এলাকাগুলোয় নিরাপদ চলাচল পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সম্পর্কিত উন্নয়ন কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্ব ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) তবে এখনো বলতে গেলে কাগুজে সংস্থার মতোই রয়ে গেছে ডিটিসিএ।

মহাসড়ক বিভাগের তিন সংস্থার বাইরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সিটি করপোরেশন পৌরসভা, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পুলিশের একাধিক বিভাগ, গৃহায়ন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সড়ক নিরাপত্তার কাজে সম্পৃক্ত।

দুর্বল সড়ক অবকাঠামো, নকশাগত ত্রুটি, প্রয়োজনীয় ফুটপাত না থাকা, সড়কের পাশে হাটবাজার গড়ে তোলা, অবৈধ দখল, অবৈধ পার্কিং, আনফিট গাড়ি, অদক্ষ চালকদেশের সড়ক পরিবহন খাতে সমস্যার যেন শেষ নেই। এসবের দায় নিয়ন্ত্রক বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর ওপরই চাপাচ্ছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক . সামছুল হক। তার মতে, এসব সংস্থা তাদের ওপর অর্পিত রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছে বলেই খাতটিতে আজকে এত সমস্যা। এজন্য তিনি সংস্থাগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন