মোংলা বন্দর

এক মাসেও উদ্ঘাটন হয়নি নিষিদ্ধ পণ্য আমদানির রহস্য

বণিক বার্তা প্রতিনিধি খুলনা

মোংলা বন্দরে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে চার কনটেইনার আমদানি নিষিদ্ধ পোস্তদানা খালি কনটেইনার জব্দের ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেছে। ঘটনায় খালি কনটেইনার অবৈধ পণ্য আনার সঙ্গে জড়িত শিপিং এজেন্টসহ তিন আমদানিকারকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলারও এক মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

বন্দর ব্যবহারকারীদের একটি সূত্র জানায়, এর আগেও চক্রের মাধ্যমে ঘোষণাবহির্ভূত বড় চালান মোংলা বন্দরের মাধ্যমে খালাস হয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি কাস্টমসের শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ খতিয়ে দেখলে এসব তথ্যের সত্যতা মিলবে।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ আগস্ট মোংলা কাস্টম হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইমদাদুল হক বাদী হয়ে চার কনটেইনার বোঝাই পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকার ১০/বি সোয়ারিঘাট রোড, কোতোয়ালির মেসার্স তাজ ট্রেডার্স শিপিং এজেন্টসহ আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-(বি)- (বি) ধারায় এবং খানজাহান আলী রোড খুলনার শিপিং এজেন্ট কিউসি লজিস্টিক লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৪২০ ৪০৬ ধারায় মোংলা থানায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলার পর এক মাস পেরিয়ে গেলেও শিপিং এজেন্ট বা আমদানিকারক কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এতে কারা ঘটনায় জড়িত বা কী পরিকল্পনা করে এসব আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য মোংলা বন্দর দিয়ে খালাসের চেষ্টা করা হয়েছিল তা অজানাই থেকে যাচ্ছে। তবে কাস্টমসের গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান কাস্টমসের কর্মকর্তারা।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কনটেইনারবাহী বিদেশী জাহাজটি মালয়েশিয়া থেকে ছেড়ে এসে সিঙ্গাপুরে যাত্রাবিরতির পর গত আগস্ট মোংলা বন্দরের জেটিতে কনটেইনার খালাস শেষ করে দ্রুত চলে যায়। তবে জাহাজ বন্দরে নোঙরের আগেই কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য এনে রাতের আঁধারে বন্দরের লোকদের যোগসাজশে কনটেইনার সিল ভেঙে মালামাল লুকিয়ে রাখা হবেএমন গোপন খবর আসে। তাই বন্দরের জেটিতে খালাসের পরই ওই আমদানিকারকদের আনা চারটি কনটেইনার শনাক্ত নজরদারিতে রাখে কাস্টমস। ১২ আগস্ট আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠির মাধ্যমে কনটেইনার চারটি উন্মুক্তভাবে খুলে কায়িক পরীক্ষা করার জন্য চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু আমদানিকারক শিপিং এজেন্ট না আসায় গত ১৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় চারটি কনটেইনার খুলে আমদানি নিষিদ্ধ হাজার ৬৬৯টি বস্তায় ৬৮ হাজার ২৬৫ কেজি পোস্তদানা পাওয়া যায়। এর মূল্য প্রায় ১১ কোটি টাকা বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া শিপিং এজেন্ট মেসার্স কিউসি লজিস্টিক লিও মেসার্স সোবাহান আল্লাহ ট্রেডার্সের নাম ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে মালয়েশিয়া থেকে জাহাজ এমভি সান গিওরগিওর মাধ্যমে প্যামম্পার, ডায়াপার ন্যাপকিন আমদানি ঘোষণায় আনা কনটেইনারসংশ্লিষ্ট সবার সামনে গত ১৮ আগস্ট কায়িক পরীক্ষার জন্য খুললে সেটি খালি পাওয়া যায়। কিন্তু কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, ওই আমদানিকারক নামে কোনো পণ্য আমদানি করেননি বা তার নামে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টও নেই। তাই প্রতারণার দায় শিপিং এজেন্টর বিরুদ্ধে মোংলা থানায় মামলা করে কাস্টমস।

মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, মোংলা বন্দরে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।

মোংলা কাস্টম হাউজের কমিশনার হোসেন আহমদ বলেন, আমি যোগদান করার পর থেকেই বন্দর জেটি এলাকায় আমদানীকৃত কনটেইনারে কায়িক পরীক্ষা ছাড়া কোনো পণ্য এখান থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। আর যেসব আমদানিকারকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে, যাতে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন