ফের রাজনৈতিক সংকটের ঘনঘটা

মন্ত্রিত্ব নিয়ে টানাটানিতে পদত্যাগ লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর

বণিক বার্তা ডেস্ক

নতুন সরকার গঠন প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ালেন লেবাননের সদ্য মনোনীত প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আদিব। সংস্কারের পক্ষে তীব্র জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন তিনি। খবর বিবিসি রয়টার্স।

রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দুই দিক থেকেই মুখ থুবড়ে পড়া লেবাননকে উদ্ধারের মিশনে নেমেছিলেন আদিব। কিন্তু কাজটাকে যত শক্ত মনে করা হয়েছিল, বাস্তবে দেখা গেল তার চেয়েও কয়েক গুণ কঠিন। ফলে দায়িত্ব গ্রহণের আগেই হাল ছেড়ে দিতে হলো তাকে। নির্দলীয় সরকার গঠনে বাধা, বিশেষ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কে পাবেন, তা নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে না পেরে শপথ নেয়ার আগেই পদত্যাগ করলেন তিনি। এতে সরকার গঠনে ফ্রান্সের মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া মুখ থুবড়ে পড়ায় ১৯৭৫-৯০-এর গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে গভীর সংকটে পড়ল লেবানন।

বার্লিনে বৈরুতের সাবেক রাষ্ট্রদূতকে গত ৩১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভা গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তিনি অবিলম্বে সংস্কারকাজ শুরু করবেন। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি উদ্ধার প্যাকেজ প্রার্থনা করেছিলেন। তবে সুন্নি মুসলিম রাজনীতিবিদের প্রচেষ্টা ভেস্তে যায় পার্লামেন্টে শিয়া মুসলিম ব্লকের কাছে। অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব কাকে দেয়া হবে, তা নিয়ে জটিলতার সূত্রপাত হয়। শিয়া গ্রুপ হিজবুল্লাহ আমাল গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চাচ্ছিল। তারা নিজ নিজ পক্ষ থেকে নতুন অর্থমন্ত্রীর নাম প্রস্তাব করে এবং আদিব যে পদ্ধতিতে সরকার গড়তে চান, তার বিরোধিতা শুরু করে। সংকট সমাধানে মোস্তফা আদিব জ্যেষ্ঠ শিয়া নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করলেও ইতিবাচক ফল আসেনি। শেষ পর্যন্ত নিজেই নতুন সরকার গড়ার দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন তিনি। এর ফলে আরো জটিল হয়ে উঠল লেবাননের পরিস্থিতি।

শনিবার লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক ভাষণে আদিব ঘোষণা দিয়েছেন, নতুন সরকার গঠনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিচ্ছেন তিনি।

গত আগস্ট বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ১৯০ জনের প্রাণহানি, ছয় হাজারের বেশি আহত আর শহরের অর্ধেকটা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর ব্যাপক চাপে পড়ে দেশটির তত্কালীন সরকার। তাদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগগুলো নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। নিয়ে টানা আন্দোলনের মুখে মাত্র ছয়দিনের মাথায় পদত্যাগে বাধ্য হয় হাসান দিয়াবের নেতৃত্বাধীন সরকার।

কিন্তু সরকারের পতন হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই লেবাননের পরিস্থিতি বদলে যাবে, সেই আশা করেননি কেউ। কিছুদিন আগে লেবাননের প্রেসিডেন্ট নিজেই বলেছেন, মোস্তফা আদিব সরকার গড়তে না পারলে একপ্রকার জাহান্নামে পরিণত হবে লেবানন। এমন সংকটের কিছু প্রমাণ এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে। গত অক্টোবরের তুলনায় লেবানিজ মুদ্রার মান কমে গেছে প্রায় ৮০ শতাংশ।

লেবাননের জটিল রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী হবেন একজন সুন্নি মুসলমান, প্রেসিডেন্ট পদ পাবেন ম্যারোনাইট খ্রিস্টান এবং সংসদের স্পিকার পদ যাবে শিয়া মুসলিমদের কাছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হওয়ার পর জটিল প্রথা ভেঙে নির্দলীয় সরকার গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন আদিব। দেশ পুনর্গঠনে স্বাধীনভাবে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গড়তে চেয়েছিলেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন