ভুয়া চুক্তি দেখিয়ে ব্যাংকের ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ

একদিনে এক ট্রাকে ১৫ হাজার টন গম পরিবহন!

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারের সঙ্গে খাদ্য সরবরাহের ভুয়া চুক্তি দেখিয়ে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ করেছেন মো. টিপু সুলতান নামে এক ব্যক্তি, যিনি ঢাকা ট্রেডিং হাউজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। ২০১২ সালে নেয়া ঋণের বর্তমান স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩০ কোটি টাকা, যা আদায়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে তথ্য উঠে এসেছে।

দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য বলছে, মো. টিপু সুলতান বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখায় ঢাকা ট্রেডিং হাউজের নামে একটি হিসাব খোলেন। এতে প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে পুরানা পল্টনের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণির আল-রাজি কমপ্লেক্সের ১৫ তলা। ব্যাংকটির একই শাখায় নতুনভাবে এলসি লিমিট এবং এলটিআর ঋণ মঞ্জুরের জন্য আবেদন করেন টিপু সুলতান। এজন্য তিনি একটি এমওইউর কপি ব্যাংকে নিয়ে আসেন, যেখানে দেখানো হয় স্থানীয় বাজার থেকে ১৫ হাজার টন গম সংগ্রহ করে তা খাদ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে সরবরাহ করা হবে। প্র্রকৃতপক্ষে ওই এমওইউ নথি ভুয়া ছিল বলে অডিট ফার্ম জি. কিবরিয়া অ্যান্ড কোং-এর অডিট প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে।

গ্রাহকের ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যাংকিং পদক্ষেপ গ্রহণ, সরবরাহ ডকুমেন্টের সত্যতা যাচাই-বাছাইকরণ ঋণের শ্রেণীকরণ সঠিক হচ্ছে কিনা তা নিরীক্ষার লক্ষ্যে অডিট ফার্ম জি. কিবরিয়া অ্যান্ড কোংকে নিয়োগ করেছিল ব্যাংক। নিয়োগকৃত অডিট ফার্ম ২০১৫ সালের ২০ নভেম্বর পর্যন্ত নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করে খসড়া প্রতিবেদন দাখিল করে। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গ্রাহক টিপু সুলতান জাল রেকর্ডপত্র ব্যাংকে উপস্থাপন করে তা দিয়ে কোনো মালপত্র সরবরাহ ব্যতীত অর্থ উত্তোলন এবং তা আত্মসাৎ করেন।

শুধু তা- নয়, ঢাকা ট্রেডিং হাউজের নামে হিসাব খোলার সময় আপ টু ডেট ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা হয়নি। কেওয়াইসিতে টিন নম্বর সংযোজন করা হয়নি। কেওয়াইসির পরিচয় দানকারী তথ্য সঠিক ছিল না। কেওয়াইসির গ্রাহক টিপু সুলতানের পিতার নাম এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লেখিত পিতার নাম এক নয়। ২০১২ সালের এপ্রিল তিনি ঢাকা ট্রেডিং হাউজের এলটিআর অ্যাকাউন্ট (নং: ৮৪১০০০০০৮৪) খোলেন এবং একই বছরের এপ্রিল সেই ঋণসংক্রান্ত ২৫ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়। ২২ কোটি লাখ টাকা ছাড় হয়। ২৫ কোটি টাকার ঋণটি খুব দ্রুতই অনুমোদন করা হয়। এক্ষেত্রে গ্রাহকের পরিশোধ প্রক্রিয়া, দক্ষতা সক্ষমতা যাচাই করা হয়নি। সেই ঋণের স্থিতি এখন ৩০ কোটি টাকা বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

দুদকের অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, যে এমওইউর ভিত্তিতে ঋণটি দেয়া হয়, তা পরবর্তী সময়ে জাল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। অর্থাৎ জাল রেকর্ডপত্র ব্যবহার করে ঋণটিকে সুকৌশলে অনুমোদন করিয়ে নেয়া হয়েছে। ১৫ হাজার টন পণ্য একদিনে একটি ট্রাকে পরিবহন দেখানো হয়েছে, যা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন দেখানো হয়েছে, সেটিও ছিল অস্তিত্বহীন।

বিষয়ে দুদকের একজন কর্মকর্তা জানানঅভিযোগটি অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ করতেই অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান খোলা হয়। ঋণ নিতে সরকারের সঙ্গে ভুয়া চুক্তির কপিও দাখিল করা হয়। আবার প্রতিষ্ঠানটি একদিনে এক ট্রাকে ১৫ হাজার টন খাদ্যশস্য সরবরাহের তথ্যও দাখিল করেছে, যেটি এক অর্থে অবিশ্বাস্য। ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের জন্যই এসব কাগুজে তথ্য সরবরাহ করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন