থাইল্যান্ডে তীব্র হচ্ছে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন

রাজতন্ত্র ও সরকার ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি

বণিক বার্তা ডেস্ক

গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের তিন নেতাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রোববার ব্যাংককে বড় আকারের বিক্ষোভ হয়েছে। নভেল করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট আর্থিক বিপর্যয় মোকাবেলায় ব্যর্থতা এবং বিরোধী রাজনীতিবিদ রাজনৈতিক দলগুলোকে কোণঠাসা করে রাখায় সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা তীব্র হচ্ছে। খবর এএফপি।

ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন গ্রুপের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চ্যান-ওচার বিরুদ্ধে গত এক মাস ধরেই বিক্ষোভ চলছে। সাবেক সেনাপ্রধান ২০১৪ সালে এক সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন এবং প্রো-এস্টাবলিশমেন্ট সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত বছরের বিতর্কিত নির্বাচনে ক্ষমতায় বসার পর থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে কোণঠাসা করে রাখছে প্রায়ুত চ্যান-ওচার সরকার।

শুক্রবার রাতে গ্রেফতারের পর একদিনের মধ্যেই জামিন পান গুরুত্বপূর্ণ ছাত্রনেতা পারিত চিওয়ারাক। ব্যাংককের গণতন্ত্র তোরণের সামনে রোববার বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন তিনি।

কয়েদখানা থেকে মুক্ত হওয়ার পর তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, আমরা আপনাদের নারাজ করব না। দেশে বৃহত্তর গণতন্ত্র নিশ্চিতের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

রোববারের বিক্ষোভে হাজারো বিক্ষোভকারী সমবেত হয়েছেন। নির্ধারিত সময়ে বিক্ষোভ শুরুর আগে ভেন্যুতে শত শত পুলিশ কর্মকর্তাকে নজরদারি করতে দেখা যায়।

গত বছরের হংকং আন্দোলনের অনুসরণে ব্যাংককে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন তীব্র হতে শুরু করেছে। দেশজুড়ে সমর্থন আদায়ের জন্য আন্দোলনকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তা গ্রহণ করছেন।

স্বৈরতন্ত্রের শেষ টানোএবংবিক্ষোভের জন্য বন্ধুদের ট্যাগ করুনএমন হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে বিক্ষোভের আহ্বান জানানো হচ্ছে। রোববার থাইল্যান্ডে টুইটারে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল হ্যাশট্যাগটি।

সরকার সম্পূর্ণ ঢেলে সাজানোর দাবি তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। একই সঙ্গে ২০১৭ সালে সেনা-সমর্থিত মদদে তৈরি সংবিধানের আমূল পরিবর্তনের আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। ওই সংবিধানের ফলেই প্রায়ুথ ওচার সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছে আন্দোলনকারীরা।

গত সপ্তাহের একটি র্যালিতে চার হাজারের মতো বিক্ষোভকারী অংশ নিয়েছিল এবং তারা থাইল্যান্ডের অতি ক্ষমতাবান রাজতন্ত্র সুরক্ষার আইনটির রদ চান। অন্তত থাইল্যান্ডে রাজতন্ত্রের উপস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের খোলা মতামত প্রকাশের সুযোগ দাবি করেন।

থাই ক্ষমতাবলয়ের সর্বোচ্চ আসনে আসীন অতি ধনী রাজা মাহা ভাজিরালংকর্ন। তার পরই রয়েছে সেনাবাহিনী বিলিয়নেয়ার ব্যবসায়ী এলিটরা।

রাজতন্ত্রের সমালোচনা ঠেকাতে প্রবর্তিত ড্রাকনিয়ান ১১২ ধারায় যেকোনো থাই নাগরিককে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া যেতে পারে।

গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের তীব্রতায় রাজতন্ত্র সমর্থকদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোববার রাজতন্ত্রের সমর্থক দাবিদার ৫০ বিক্ষোভকারী রাজার ছবি বুকে নিয়ে ব্যাংককের গণতন্ত্র তোরণে উপস্থিত হয়। যেখানে দিনের শেষের দিকে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীরা সমবেত হন।

গণতন্ত্র তোরণে উপস্থিত হয়ে রাজার সমর্থনে স্লোগান দিতে দেখা যায় হলুদ শার্ট পরিহিত রাজতন্ত্রের এক সমর্থককে। হলুদ রঙ থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্রের প্রতীক।

এদিকে ছাত্রনেতা পারিতের গ্রেফতারের দিন প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত বলেন, আন্দোলনকারীদের দাবি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্য অগ্রহণযোগ্য। গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকে ঝুঁকিপূর্ণ দাবি করেন তিনি।

অবশ্য ওইদিনের শেষের দিকেই কিছুটা আপসকামী মনোভাব প্রকাশ করতে দেখা যায় সাবেক সেনাপ্রধানকে। তিনি একতার আহ্বান রেখে বলেন, ভবিষ্যৎ দেশের তরুণ প্রজন্মের হাতে।

১৯৩২ সালে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রের অবসানের পর থেকেই গণতন্ত্রের দাবিতে বিভিন্ন আন্দোলন, বিক্ষোভ হয়েছে, অভ্যুত্থান পাল্টা অভ্যুত্থান হয়েছে।

বর্তমানে এমন সময়ে গণতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে যখন নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতার কড়া সমালোচনা হচ্ছে। বর্তমানে দেশটির অর্থনীতি ১৯৯৭ সালের এশীয় অর্থনৈতিক সংকট পরবর্তী সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় দাঁড়িয়েছে।

লাখো লাখো মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর ফলে থাইল্যান্ডে ধনী-গরিবের বৈষম্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সমালোচনা উঠেছে থাইল্যান্ডে বর্তমানে যে অর্থনীতি সরকার ব্যবস্থা প্রচলিত আছে তা কেবল এলিট প্রো-মিলিটারি গোষ্ঠীর সহায়তা করে আসছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন