বেশির ভাগ মানুষের জন্য করোনাভাইরাস মহামারী ভ্রমণের অল্প কিছু বিকল্প নিয়ে এসেছে।
তবে অতিধনী পরিবারের জন্য ততটাও নয়, যারা কিনা সীমান্ত অতিক্রম করার জন্য টাকা-পয়সা ব্যবহার করেছে।
নয়তো সেগুলো তাদের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।
এটাই বিনিয়োগ স্থানান্তরের অভিজাত বিশ্ব।
যেখানে পাসপোর্ট অ্যাপ্লিকেশনগুলো জাতীয়তা বা নাগরিকত্বের ভিত্তিতে নয়, বরং সম্পদ ও গ্রহের আশপাশে এটাকে সরানোর যে ইচ্ছা তার ওপর নির্ভর করে।
এই তথাকথিত সিটিজেন-বাই-ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (নাগরিক দ্বারা বিনিয়োগ) কিংবা সিআইপি একটি বিকাশমান শিল্প।
যেমন রেসিডেন্স-বাই-ইনভেস্টমেন্ট অ্যারেঞ্জমেন্ট (আবাস বিনিয়োগ ব্যবস্থা) যা আবার ‘গোল্ডেন ভিসা’
নামেও পরিচিত।
এটি অতিধনী ব্যক্তিদের তাদের অর্থকে একটি দেশে সরিয়ে নিজেদের পোর্টফোলিও বৈচিত্র্যময় করার উপায়ই কেবল নয়, বরং নতুন একটি পাসপোর্টসহ নাগরিকত্ব গ্রহণের সুবিধা দেবে।
৫ থেকে ১০ বছর ধরে সিআইপি অংশগ্রহণকারীদের প্রাথমিক উৎসাহের বিষয় ছিল (যাদের কিনা ২ বিলিয়ন থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলারের মতো অর্থ রয়েছে), চলাফেরার
স্বাধীনতা, কর সুবিধা এবং নিজস্ব লাইফস্টাইল।
এক্ষেত্রে উন্নত শিক্ষা কিংবা নাগরিক স্বাধীনতার কথাও বলা যায়।
তবে কভিড-১৯-এ নাটকীয়ভাবে আমাদের ২০২০ সালকে বদলে
দিয়েছে।
কিছু অভিজাত পরিবার স্বাস্থ্যসেবা, মহামারীর প্রতিক্রিয়া এবং সম্ভাব্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল নিশ্চিত করতে চায় ভবিষ্যতের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে।
প্ল্যান বি
গ্লোবাল সিটিজেনশিপ ও রেসিডেন্স অ্যাডভাইজরি ফার্ম হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের এশিয়া হেড ডমিনিক ভোলেক বলেন, মানুষ সত্যিকার অর্থে ইন্স্যুরেন্স পলিসি প্রত্যাশা করে বিকল্প নাগরিকত্বের জন্য।
যা তাদের প্ল্যান বি-এর সুযোগ দেয়।
তারা স্বাস্থ্যসেবা এবং মহামারী প্রস্তুতির বিষয়েও উদ্বিগ্ন, কারণ অবশ্যই এটা আমাদের জীবনে একমাত্র মহামারী না।
সম্পদশালী মানুষের পাঁচ থেকে দশ বছরের পরিকল্পনা থাকে না।
তারা সম্পদ ও কল্যাণ বিবেচনায় ১০০ বছরের বেশি সময়ের জন্য অগ্রিম পরিকল্পনা করে।
এদিকে হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের সন্দেহ সাম্প্রতিক সময়ে সিআইপির প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধির সঙ্গে করোনাভাইরাস, স্বাস্থ্য সমস্যা এবং ডোমসডের সাধারণ ভবিষ্যদ্বাণী যুক্ত।
কোম্পানির
হিসাব মতে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে এ আগ্রহ ৪৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
শক্তিশালী মন্টেনেগ্রো
যখন সুনির্দিষ্ট নাগরিকত্বের প্রোগ্রামের কথা বলা হয়, মন্টেনেগ্রো ও সাইপ্রাস সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
যেখানে ২০১৯ সালের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে নতুন অ্যাপ্লিকেশনের সংখ্যা যথাক্রমে ১৪২ ও ৭৫ শতাংশ করে বেড়েছে।
এদিকে মাল্টাও আগ্রহ ধরে রাখতে পেরেছে।
ভোলেক বলেন, অনেক মানুষ সাইপ্রাস ও মাল্টার ব্যাপারে আগ্রহী।
কারণ এটা আবেদনকারী এবং তাদের পরিবারকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে অবাধ প্রবেশাধিকার এবং স্থায়ী হওয়ার স্বাধীনতা প্রদান করে।
এখানে কেবল ব্যাপক আকারে চলাফেরার স্বাধীনতাই নয়, বরং উন্নত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডেও রেসিডেন্সি প্রোগ্রামের এখন অনেক চাহিদা।
তবে আরো একটি কারণে সেটি হচ্ছে সংকট ব্যবস্থাপনা।
ভোলেকের মতে, মহামারী সামলানোর দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের তুলনায় নিউজিল্যান্ড এখন শীর্ষে উঠে এসেছে।
তাই আমরা এখন নিশ্চিতভাবেই অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে ইনভেস্টমেন্ট ভিসা নিয়ে ক্রমবর্ধমান অনুসন্ধান দেখতে পাব।
৬.৫ মিলিয়ন বিনিয়োগ
এই রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে কেবল উচ্চসম্পদশালী পরিবারগুলোই অংশগ্রহণ করতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রোগ্রামটির খরচ হয় ১ থেকে ৩.৫ মিলিয়ন ডলার, যেখানে নিউজিল্যান্ডেরটি ১.৯ মিলিয়ন ডলার থেকে ৬.৫ মিলিয়ন ডলার।
ভোলেক বলেন, আপনার
বিনিয়োগের ভিত্তিতে নিউজিল্যান্ডর প্রোগ্রাম বেশ নমনীয়, যতক্ষণ পর্যন্ত এটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য না হয়।
সিআইপি ক্লায়েন্টলও বদলে যাচ্ছে: নয় মাস ধরে ২০১৯ সালের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় আমেরিকান, ভারতীয়, নাইজেরিয়ান ও লেবানিজ অ্যাপ্লিকেশনের উচ্চহার দেখা যাচ্ছে।
এই অতি অভিজাত ব্যক্তিরা চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের অবিচ্ছিন্ন প্রবাহে যোগ দেয়।
কভিড-১৯ মুক্ত স্থান
কিছু অতিধনী ভ্রমণকারী সচরাচর একটি নিরাপদ ও দূরবর্তী স্থানের সন্ধান করে, যেখানে তারা অন্য একটি প্রাদুর্ভাবের সময় নিজ পরিবার নিয়ে লুকিয়ে থাকতে পারবে।
এমনকি যদি তাদের তাত্ক্ষণিক প্রবেশাধিকার নাও থাকে তবুও তারা পরবর্তী মহামারীর জন্য প্রস্তুতি নেবে।
অ্যাপেক্স ক্যাপিটাল পার্টনার্সের প্রতিষ্ঠাতা নুরি কার্টজ বলেন, এখন পর্যন্ত যে আলাপ দেখা যাচ্ছে তা হলো ছোট দেশগুলো অপেক্ষাকৃত সহজভাবে মহামারী মোকাবেলা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো এটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়।
যেমন ডমিনিকা, অ্যান্টিগা ও বারমুডার মতো ক্যারিবিয়ান দেশগুলোতে খুব কমই কভিড সংক্রমণ রয়েছে।
এই ছোট দেশগুলো মনে হচ্ছে খুলে যাবে এবং ধারণা করা হচ্ছে এই দেশগুলো বড় দেশগুলোর তুলনায় অনেক ভালোভাবে মহামারী মোকাবেলা করতে পারবে।
তাই এই দেশগুলোর স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রা নিয়ে অনেক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞা ভাঙা
কার্টজ আরো একটি ট্রেন্ডের সূচনা দেখছেন: পাসপোর্টে বিনিয়োগ করা, ভবিষ্যতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ভাঙার সুযোগ বৃদ্ধি করার জন্য।
যেমন কিছু দেশ সীমানা খুলে দেয়ার পর তারা কেবল নির্দিষ্ট কিছু দেশের পাসপোর্টধারীকে আসতে দিচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ ইউরোপিয়ানরা ব্যাপকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে পারছে না, মার্কিনদেরও বিপরীতে একই অবস্থা।
যাই হোক, সাইপ্রাসের পাসপোর্টধারীরা সীমানা খুলে দিলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মাঝে ভ্রমণ করতে সক্ষম হবে।
২০১৭ সালে করা কার্টজের হিসাব মতে সিপিআইয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর পাঁচ হাজার মানুষ বিদেশের নাগরিকত্ব অর্জন করে।
২০২০ সালে তিনি এই সংখ্যাটি অনুমান করেন ২৫ হাজারের মতো, যদিও আনুষ্ঠানিক সংখ্যার কোনো অস্তিত্ব নেই।
এমনকি অতিধনী ব্যক্তিরাও বিকল্প পরিকল্পনা হিসেবে সিআইপিতে পরিবর্তিত হয়।
বাস্তবতা হচ্ছে, এ ধরনের প্রোগ্রামগুলো সময় নেয়।
ভোলেক বলেন, এমন কোনো উপায় নেই যে রাশিয়ার কোনো ধনী ব্যক্তি হেঁটে এসে কোনো রাজনীতিবিদকে মিলিয়ন ডলার দিয়ে পাসপোর্ট নিয়ে চলে যাবে।
এটা অবশ্যই এ রকম নয়।
এটা নির্ভর করে দেশের ওপর, ধৈর্য ধরে পরিশ্রম করে এটি সম্পন্ন করতে কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর লাগতে পারে।
সাধারণ আবেদনপত্রটির অর্থনৈতিক ও অপরাধমূলক তদন্ত সম্পন্ন হয়।
এটা করা হয় উপার্জিত অর্থ বৈধ কিনা তা দেখার জন্য।
সিএনএন