চামড়ার বাজারে ধস

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনামহামারীর প্রভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে পশু কোরবানির পরিমাণ অর্ধেকেরও নিচে নেমেছে। এছাড়া গত বছর যে পরিমাণ চামড়া কেনা হয়েছিল এবার তার ৭০ শতাংশ কম চামড়া কেনা হয়েছে। এবার মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদেরও তেমন একটা দেখা মেলেনি। সবমিলিয়ে চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। একেবারে পানির দরে বিক্রি হয়েছে করবানির পশুর চামড়া। প্রকারভেদে প্রতিটি গরুর চামড়া ১০০ থেকে ৪০০ টাকা ও ছাগলের চামড়া ১০ টাকায় কেনা হয়েছে। তবে বড় গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায় নেয়া হয়। মূল্য কম হওয়ায় অনেক কোরবানিদাতা চামড়া বিক্রি না করে মাদরাসাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দান করেছেন। তবে পশুর চামড়ার দাম কম হওয়ার দুস্থরা বঞ্চিত হয়েছেন। এতে দেশের আলেম সমাজ ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে বেলা ১১টার পর থেকে চামড়া কেনাবেচা শুরু হয়। গরুর চামড়া ১০০ টাকা (গাভী) থেকে ৪০০ টাকায় (ষাঁড়) বিক্রি হয়। তবে বড় সাইজের গরুর চামড়া (২৫-৩০ বর্গফুট) ৫০০ থেকে ৫৫০টাকায় কেনা হয়েছে। ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে, ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকায়। ভেড়ার চামড়ার দাম দেয়া হয়নি। বিক্রেতারা গরু বা ছাগলের চামড়ার সঙ্গে ফ্রি দিয়ে গেছেন।

রাজধানীর মগবাজারের ওয়্যারলেস এলাকার ট্রপিকেল হাউজিংয়ের ২৮টি আবাসিক ফ্লাটের বাসিন্দারা গত বছরের ইদুল আজহাতে ১৬টি গরু ও ৪টি ছাগল কোরবানি দিয়েছিলেন। এবার সেখানে মাত্র ৬টি গরু ও ২টি ছাগল কোরবানি দেওয়া হয়েছে। ট্রপিকেল হাউজিংয়ের বাসিন্দা আইনজীবী সগীর হোসেন বলেন, করোনার কারণে এখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দা যৌথভাবে কোরবানির আয়োজন করেছিলেন। তিনি বলেন, করোনার কারণে অনেকের আয় কমেছে। আবার অনেকের চাকরি ও ব্যবসা নেই। ফলে এই আবাসিক ভবনে কোরবানির এই অবস্থা।

আদাবরের বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটির  একজন বাসিন্দা জানান, গত বছর তাদের আবাসিক ভবনে ৬-৭টি পশু কোরবানি হয়েছিল। এবার সেখানে ৩টি কোরবানি হয়েছে।

রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে এবারের কোরবানিতে। রাজধানীর চামড়ার ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গতবারের চেয়ে এবার অর্ধেকরও কম পরিমাণ চামড়া তারা সংগ্রহ করছেন বেপারিদের কাছে বিক্রির জন্য। বেগুনবাড়ি এলাকার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলাম পিন্টু ও সাইফুদ্দিন। গত বছর তারা দুইজনে প্রায় এক হাজার গরুর চামড়া সংগ্রহ করেছিলেন। এবার মাত্র ৪০০টি চামড়া সংগ্রহ করেছে।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান শনিবার বলেন, সারাদেশে গতবারের তুলনায় অর্ধেক কম পরিমাণ চামড়া কেনার লক্ষ্য রয়েছে চামড়া ব্যবসায়ীদের।  যেকারণে  চামড়ার দাম এবার কম। গত বছর  যে চামড়া  কেনা হয়েছিলো দিয়েই  কাজ এবার কাজ করেত  চাই।

এদিকে কোরবানির গরু-ছাগলের চামড়ার কেনাবেচা নিয়ে বিক্রেতা ফরিয়া ও বেপারি, তিনপক্ষই অসন্তুষ্ট। বিক্রেতারা বলছেন, সরকারের নির্ধারিত মূল্য পাচ্ছেন না তারা। ফরিয়ারা বলছেন, যে দামে বিভিন্ন মহল্লা থেকে চামড়া কিনেছে, সেই দামে বেপারিদের কাছে বিক্রি করতে পারছেন না।

আর বেপারিরা বলছেন, যে দামে চামড়া কেনার কথা সে দামে পাচ্ছেন না তারা। চামড়ার বাজারের এই অবস্থার কারণে অনেকেই তাদের পশুর চামড়া বিভিন্ন এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংকে বিনামূল্যে দিয়ে দিয়েছেন। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পশু কোরবানির যে সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে তাতেও উপরের কারণগুলোই স্পষ্ট। করোনা আর ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া ব্যবসায়ীদের বড় অঙ্কের বকেয়া।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন