পাথর সংকটের কারণে রংপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতাধীন সংস্কার ও নির্মাণকাজ ব্যাহত হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এ নির্মাণ সামগ্রীর অভাবে ছয়টি প্যাকেজের প্রায় ১০৫ দশমিক ২৯ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ এবং সংস্কারকাজ থমকে গেছে । অন্যদিকে অতিবৃষ্টি এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের সংস্কারকাজ ব্যাহত হওয়ায় যানবহন এবং যাত্রী চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
ঠিকাদারদের দাবি, আমদানি নির্ভর এবং ঊর্ধ্বমূল্যের পাথর দিয়ে সড়কের কাজ করলে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই তারা বেশি দামে পাথর আমদানি না করে অপেক্ষা করছেন। দাম যখন কমবে তখন পাথর আমদানি করবেন।
রংপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলা এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় পাথর সংকটে মোট ছয়টি প্যাকেজের প্রায় ১০৫ দশমিক ২৯ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ এবং সংস্কারকাজ বন্ধ আছে। সড়কগুলো হচ্ছে মিঠাপুকুর উপজেলা থেকে ফুলবাড়ি পর্যন্ত ১৮ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার, পাগলাপীর-তিস্তা সড়ক সেতু তিন কিলোমিটার এবং রংপুর-বদরগঞ্জ-পার্বতীপুর ৩১ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার। প্যাকেজ চুক্তি মূল্য হচ্ছে ১৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। রংপুর নগরীর বাইপাস সড়ক ১ দশমিক ১ কিলোমিটার। চুক্তিমূল্য ৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা। নগরীর বাইপাস সড়ক ৬ কিলোমিটার এবং ৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার (২ ইঞ্চি ওভার লে)। চুক্তিমূল্য ২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নব্দীগঞ্জ পর্যন্ত ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারকাজ। চুক্তিমূল্য ১৩ কোটি ৩৫ লাখ। বামন ডাঙ্গা-রহমতগঞ্জ-শঠিবাড়ী সড়ক ৩৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার সম্প্রসারণ ও উন্নয়নকাজ। সড়কটির চুক্তিমূল্য ১১২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
পাথর সংকটে কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে স্বীকার করে সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কারে তারা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। যাতে আসন্ন ঈদুল আজহায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের কারণে ভোগান্তি না বাড়ে।
বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত মার্চ থেকে ভারত, ভুটানে লকডাউন চলছে। ফলে মার্চের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে পাথর আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বিভিন্ন নির্মাণ শিল্পে। পাথর সংকটের অজুহাতে রংপুরে সড়ক ও জনপথের টেন্ডার পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো সড়ক নির্মাণ এবং সংস্কারকাজ বন্ধ রেখেছেন।
ঠিকাদার মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, বর্তমানে আমদানি করা পাথরের সংকট রয়েছে। তাছাড়া পাথরের দামও অনেক বেড়ে গেছে। এ পাথর দিয়ে সড়ক নির্মাণের কাজ করলে ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও কাজ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কখনো বর্ধিতমূল্য সমন্বয় করবে না। তাই পাথরের মূল্য কম হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।
ঠিকাদার মো. আলম হায়দার বলেন, সড়ক নির্মাণের অন্যতম উপাদান পাথর ও বিটুমিন। এ দুই পণ্যই আমদানি নির্ভর। বর্তমানে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ অনেক কম এবং মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। তাছাড়া এবার দীর্ঘমেয়াদি বন্যা দেখা দেয়ায় স্বাভাবিকভাবে নির্মাণকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে সাধারণত লালমনিরহাটের বুড়িমারী, দিনাজপুরের হিলি এবং পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি করা হয়। এ বিষয়ে জানতে হিলি স্থলবন্দর আমদানি ও রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, লকডাউনের আগে আমদানীকৃত প্রতি টন পাথরের মূল্য ছিল ৩ হাজার ২০০ টাকা। বর্তমানে প্রতি টন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৯০০ টাকা।
আগে হিলি এবং বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে নিয়মিত পাথর আমদানি করত এমন একটি প্রতিষ্ঠান স্বাধীন এন্টারপ্রাইজ। এর প্রোপ্রাইটার এএসএম রওশন হাবীব বলেন, দুই হাজার টন পাথর আমদানি করার অনুমতি (এলসি) পেলেও তা লকডাউনের কারণে বাতিল হয়ে যায়।
রংপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম শরিফুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, পাথর সংকটের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করতে দেরি করছে। তবে ঈদের পর পুরোদমে কাজ শুরু হয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে প্রকৌশলীরা অতিবৃষ্টি এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কারে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। যাতে ঈদে ব্যস্ত সড়কগুলোয় যানবাহন চলাচলে এবং যাত্রী পরিবহনে কোনো ভোগান্তির সৃষ্টি না হয়। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের ৮০ শতাংশ সংস্কার করা হয়েছে। তবে শুধু পাথর নয়, দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কারণেও সংস্কারে দেরি হচ্ছে।