জনস হপকিনস ড্যাশবোর্ড

মহামারীতে সবচেয়ে বেশি ভিজিট হওয়া সাইটের গল্প

বণিক বার্তা ডেস্ক

করোনাকালের শুরু থেকেই জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির একটি দল কভিড-১৯- আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে একটি রিয়েল টাইম ট্র্যাকিং ম্যাপ তৈরি করে। এরপর গোটা দুনিয়া তাদের দুয়ারে এসেছে। তাদের সাইট থেকে ডাটা সংগ্রহ করেছে। তারা প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ বিলিয়ন যোগাযোগ সম্পন্ন করেছে। তাদের কাছ থেকে ডাটা নিয়ে এখন অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। সরকারি এজেন্সি, জনস্বাস্থ্য বিভাগ, পাবলিক নিউজ আউটলেটগুলো আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা জানার জন্য তাদের সর্বশেষ আপডেটগুলোর ওপরই আস্থা রাখছে।

প্রজেক্টপ্রধান এবং অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর লরেন গার্ডনার বলেন, আমরা যখন নতুন ভাইরাসটি নিয়ে ডাটা সংগ্রহ শুরু করি কেউ তখন বুঝতেও পারেনি কী হতে যাচ্ছে। কভিড-১৯-এর সংক্রমণের হিসাব রাখার জন্য তখন একটি সিঙ্গেল পেজও কোথাও ছিল না।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি ২০২০ গার্ডনারের পিএইচডি প্রথম বর্ষের ছাত্র এনশেং ডং চীনে থাকা তার পরিবার থেকে প্রাদুর্ভাবের খবর জানতে পারেন। কীভাবে পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে, তাও জানতে পারেন তিনি। এরপর ২১ জানুয়ারি সাপ্তাহিক রিসার্চ মিটিংয়ে ডং গার্ডনারকে তার ভাবনার কথা জানান। তার স্থানিক ডাটা ভিজুয়ালাইজেশনের ব্যাকগ্রাউন্ড এবং অতীতে গার্ডনারের সংক্রামক রোগের মডেলিংকে এক জায়গায় এনে ড্যাশবোর্ডের প্রাথমিক প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়। যা তারা সেই রাতেই সম্পন্ন করে পরদিন প্রকাশ করেন। এই ম্যাপে সতর্কবার্তা দেয়া লাল ডটগুলো দ্বারা চিহ্নিত করা হয় ৩২০টি সংক্রমণ, বেশির ভাগ হলো চীনে এবং অন্যগুলো হলো থাইল্যান্ড, জাপান দক্ষিণ কোরিয়ার। 

এরপর দুই সপ্তাহ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডংয়ের জীবনযাপনের কেন্দ্রে ছিল ড্যাশবোর্ড। এটা ছিল তার ক্লাসের বাইরের কাজ। কিন্তু সংক্রমণ যখন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে তখন তাদের সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে। গার্ডনার বলেন, এটা এমন কিছুতে রূপান্তরিত হবে, যা পৃথিবীর সবার প্রতিদিনকার জীবনকে প্রভাবিত করবে।

অনিশ্চিত ডাটা কীভাবে স্ক্রিনের ম্যাপে

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ থেকে প্রায় ২৫ জন ব্যক্তি ড্যাশবোর্ডে সহযোগিতা করছে। যেখানে গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী এবং সিনিয়র সফটওয়্যার ডেভেলপারের পাশাপাশি গবেষকরাও রয়েছেন। অন্য অনেক মানুষের মতো তারাও কাজ করেন বাসা থেকে। তাদের দিন শুরু হয় জুম কলের মাধ্যমে। যেখানে তারা করণীয় ঠিক করে নেন। স্ল্যাক চ্যানেল, -মেইল এবং ফোন কলের মাধ্যমে তারা তাদের আলাপ চালিয়ে নেন। গার্ডনার বলেন, এটা কার্যকর কিন্তু বিরক্তিকর। আমি সত্যি বাস্তব পৃথিবীকে মিস করি।

গার্ডনার যেহেতু দায়িত্বে আছেন তাই সবাইকে তাকে রিপোর্ট করতে হয়। তার প্রতিদিনকার কর্ম তালিকায় যা আছে তা হলো পিএইচডি শিক্ষার্থীদের গবেষণা দল চালানো, ড্যাশবোর্ডের জন্য ডাটা সংযোজন, ড্যাশবোর্ডের জন্য ডিজাইন করা এবং ড্যাশবোর্ডের উন্নতির জন্য কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। তিনি তার সময়ের অর্ধেকটা ম্যাপের তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণায় ব্যয় করেন।

স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ, ডাটাসমৃদ্ধ ওয়েবসাইটসহ ডজনের মতো উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। যেহেতু তাদের অন্তত এক ঘণ্টা পরপর আপডেট করতে হয়, তাই তাদের ম্যানুয়েল ডাটা সংগ্রহ থেকে বরং অটোমেটিং সংকলনের দিকে ঝুঁকতে হয়েছে। দলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবরেটরিকে প্রশংসা করেছে একটি কোড তৈরির জন্য, যা কিনা ডাটার জন্য বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটগুলোতে পর্যায়ক্রমে ভ্রমণ করে। স্বয়ংক্রিয় কোড ডাটাগুলোকে একত্র করে এবং এগুলো গিটহাবে প্রকাশ করে, যা মূলত একটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্লাটফর্ম।

এরপর দলটি নাম্বারগুলোকে ম্যানুয়ালি বৈধতা দেয়ার মাধ্যমে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেমে প্রবেশ করায়, যা কিনা পরে আমরা দেখি।

বিশ্বকে তথ্য দেয়ার চ্যালেঞ্জ

হাজার হাজার জায়গা থেকে যেকোনো মুহূর্তে পরির্তনশীল তথ্যের ওপর করা কাজ অনেক বাধা নিয়ে আসে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা গণনার জন্য আন্তর্জাতিক কোনো মানদণ্ড নেই।

বর্তমান সময়ে অবশ্য ড্যাশবোর্ড অবকাঠামো অনেক বেশি স্থিতিশীল। তবে গার্ডনার বলেন, কিন্তু যে উৎস তথ্যগুলো সামনে আসে তা এখনো পরিবর্তনশীল। আবার অনেক সময় স্টেট কাউন্টিগুলো থেকে প্রাপ্ত সংখ্যাগুলোও মেলে না। যখনই ধরনের সমস্যা আসে টিমকে ঠিক করতে হয় কীভাবে এটা সামলাতে হবে। গার্ডনার বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ডাটা সংগ্রহ করা।


মানব আচরণ পাঠ এবং ভাইরাসের ভ্রমণ

ড্যাশবোর্ডের পাশাপাশি এই ডাটা সহায়ক ভূমিকা পালন করে করোনাভাইরাসের রিসোর্স সেন্টারকে বিশ্লেষণ করতে। যার উদ্দেশ্য ভাইরাস নীতিনির্ধারণকে বুঝতে পারা। স্থানীয় পর্যায়ে মহামারী কীভাবে ছড়াতে শুরু করে তাও বোঝা যায়।

ম্যাপ ডাটা ডেমোগ্রাফিক ডাটার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমাদের বলে কীভাবে মহামারী বর্ণ আয়ের ভিত্তিতে বৈষম্যকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। যাদের কিনা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়া মৃত্যুবরণ করার হার বেশি।

এছাড়া টেস্টিং কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের ডাটা জাতি, আর্থসামাজিক অবস্থা এবং পরীক্ষার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত বাধার দীর্ঘমেয়াদি নিদর্শনগুলোকে আলোকিত করে।

কীভাবে তারা মহামারী মোকাবেলা করছেন

দীর্ঘদিন ধরে গার্ডনার বাস্তবতা থেকে সরে গেছেন, কারণ ব্যস্ততা তার চারপাশে যা ঘটছে তা জানার জন্য তাকে কোনো সময় দেয়নি। ড্যাশবোর্ড পদ্ধতি স্থিতিশীল হওয়ার পর থেকে তিনি পরিস্থিতির ওপর মনোযোগ দিতে সক্ষম হয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি সম্ভবত পরিস্থিতি নিয়ে অনেক বেশি হতাশ মানুষগুলোর একজন। কারণ আমি প্যাটার্ন সম্পর্কে অনেক বেশি জানি, কোন দিকে যাচ্ছে এবং কী ভুলগুলো হচ্ছে। এটা হতে দেখা হতাশাজনক।

ডং চীনে থাকা তার পরিবারের জন্য ছটফট করেন। কিন্তু কাজও যথারীতি তার মনে ভর করে থাকে। মহামারী যুগে তার স্বপ্নগুলো ডাটার গুণগত মান নিয়ে উদ্বেগের মতো লাগে। যা তাকে আরো অবিশ্বাস্যভাবে উদ্বিগ্ন করে।

ভবিষ্যতে কী আছে

ধরনের ডাটা বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা খুব দ্রুত শেষ হবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞদের একজন জেনিফার নুজ্জো। তিনি বলেন, আমি ২০ বছর ধরে (মহামারী প্রস্তুতিতে) মনোযোগ দিয়েছি। আমরা এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া অবকাঠামো তৈরি করছি যা আমি আশা করি আর কখনো ব্যবহার করতে হবে না। কিন্তু ডাটা বলছে আমাদের এটি আবার ব্যবহার করতে হবে।

তবে গবেষণাকে চলমান রাখার জন্য এখন দাতব্য সংস্থাগুলোর এগিয়ে আসা দরকার। যাতে করে প্রক্রিয়া চলমান কার্যকর থাকে।

সিএনএন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন