একে একে বন্ধ হচ্ছে বহির্বিশ্বের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

গত সোমবার ঢাকা থেকে রোম যাওয়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইটের ২১ যাত্রী কভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়। এর আগে যাওয়া বিশেষ ফ্লাইটের ১৮ যাত্রীরও করোনা পজিটিভ হয়েছিল দেশটিতে। পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের ফ্লাইট এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে ইতালি সরকার। হঠাৎ ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণায় দেশে আটকা পড়লেন ইতালি ফিরতে ইচ্ছুক অনেক অভিবাসী বাংলাদেশী।

শুধু ইতালির ফ্লাইটই নয়, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হওয়ায় আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ করেছে তুরস্কও। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর জুলাই ইস্তাম্বুল-ঢাকা রুটে ফ্লাইট চালুর কথা ছিল টার্কিশ এয়ারলাইনসের। তবে হঠাৎ করেই বেশকিছু দেশের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় তুরস্ক। মূলত করোনাভাইরাস সংক্রমণের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং বিস্তার রোধে পদক্ষেপ নেয় দেশটি। এতে ১৫ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায় টার্কিশ এয়ারলাইনসের ঢাকার ফ্লাইট।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশীদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশেও। সম্প্রতি বাংলাদেশে ফ্লাইট চালু করেছে কাতার এয়ারওয়েজ এমিরেটস এয়ারলাইনস। তবে কেবল ট্রানজিট যাত্রীই পরিবহন করছে এয়ারলাইনস দুটি। কারণ নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকিতে থাকায় বাংলাদেশীদের প্রবেশাধিকার নেই কাতার সংযুক্ত আরব আমিরাতে। বাংলাদেশীদের জন্য একই রকম ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও।

ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিবৃতিতে জানায়, ঢাকা থেকে ইতালি যাওয়া বিশেষ ফ্লাইটের যাত্রীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যকের করোনা পজিটিভ এসেছে। ফলে এক সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে সব ধরনের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করা হলো। ফ্লাইট বন্ধের এই সময়ে ইতালি সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়ন শেনজেন অঞ্চলের বাইরে থেকে যাওয়া সবার জন্য নতুন করে পূর্ব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করবে।

জানা গেছে, গত ১৭ জুন প্রথম বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইটে রোমে ফিরে যান ২৫৯ জন প্রবাসী। এরপর গত দুই সপ্তাহে হাজার খানেকের মতো প্রবাসী বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে ইতালি ফিরে গেছেন। সর্বশেষ গত সোমবার বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা থেকে ইতালি ফিরে যান ২৭৬ বাংলাদেশী। এর আগে জুলাই ২৭৬ জন যাত্রী নিয়ে রোমে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান। বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে যাওয়া যাত্রীরা সবাই দীর্ঘদিন ধরে ইতালিতে বসবাস করছেন। সেখানে মহামারী দেখা দিলে দেশে ফিরে আসেন তারা। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ইতালিতে ফিরে যাওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের জন্য বিশেষ ফ্লাইটটি পরিচালনা করা হয়।

এদিকে গত রোববার রাত থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত দেশের বিমানবন্দরগুলোতে সাত দেশ বাদে সব আন্তর্জাতিক রুটের বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা হালনাগাদ করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বেবিচকের ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন বিভাগের সদস্য গ্রুপ ক্যাপ্টেন এম জিয়াউল কবির স্বাক্ষরিত এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, করোনার প্রাদুর্ভাব এড়াতে জুলাই রাত ১২টা মিনিট থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বাহরাইন, ভুটান, হংকং, ভারত, কুয়েত, মালদ্বীপ, নেপাল, ওমান, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক যাত্রী পরিবহনের (কমার্শিয়াল প্যাসেঞ্জার ফ্লাইট) ফ্লাইট বাংলাদেশের কোনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে না। তবে নিষেধাজ্ঞায় থাকা দেশগুলো থেকে কার্গো, বিশেষ ফ্লাইট এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অবতরণ করতে পারবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চীন, যুক্তরাজ্যের লন্ডন, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, শ্রীলংকা, আরব আমিরাতের দুবাই, কাতারের দোহা রুটে ফ্লাইট চলাচল করবে।

এর আগে গত এপ্রিলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জাপান ফেরাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ ভাড়া করে তিন-চারটি চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। ওই সব ফ্লাইটে যাওয়া যাত্রীদের বাংলাদেশে পরীক্ষা চালিয়ে করোনার নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু জাপান যাওয়ার পর পরীক্ষা করলে তাদের মধ্যে চারজনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ থেকে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে মে মাসের প্রথমদিকে শর্ত আরোপ করে দেশটি। কারণে বাংলাদেশী কোনো নাগরিক এখন জাপানে যেতে পারছেন না।

একই ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়াগামী চার্টার্ড ফ্লাইটের আরোহী যাত্রীদের ক্ষেত্রেও। বাংলাদেশে পরীক্ষা চালিয়ে এসব যাত্রীর সংক্রমণ শনাক্ত না হলেও দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়া অন্তত ছয়জন বাংলাদেশী এবং একজন কোরীয় নাগরিকের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ জুন দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আগত মানুষের মাধ্যমে নতুন করে সে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনেক বেড়ে যাওয়ায়, এই দুই দেশের নাগরিকদের কোরিয়ার ভিসা এবং প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। যা এরই মধ্যে বাস্তবায়ন করেছে দেশটি। তবে কূটনৈতিক এবং জরুরি ব্যবসায়িক কাজের ক্ষেত্রে অবশ্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে।

এদিকে গত ১১ জুন ঢাকা থেকে চীনের গুয়াংঝু শহরে যাওয়া চায়না সাউদার্নের একটি ফ্লাইটের ১৭ জন যাত্রীর নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে চায়না সাউদার্নের ঢাকার ফ্লাইট চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছে চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। নিষেধাজ্ঞার ফলে গত ২২ জুন থেকে চার সপ্তাহ চীনের এই উড়োজাহাজ সংস্থা ঢাকায় ফ্লাইট চালাতে পারছে না।

ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বলছে, বাংলাদেশ থেকে পরীক্ষা করে কভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ নিলেও সেটিকে সন্দেহের তালিকায় রাখছে বহির্বিশ্ব। কারণ এরই মধ্যে একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পরীক্ষা না করেই ভুয়া সনদ দেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সর্বশেষ রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতাল করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ দিত বলে প্রমাণ পেয়েছে র্যাব। উত্তরা মিরপুরের রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে কমপক্ষে আটজনকে আটক করে র্যাবের মোবাইল কোর্ট। হাসপাতালটি টেস্ট না করেই কভিড-১৯পজিটিভনেগেটিভসনদ দিত। যার পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন