যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিন বিরোধিতা মহামারীর নতুন ঝুঁকি

বণিক বার্তা ডেস্ক

কয়েক মাস ধরে পৃথিবীকে বিপর্যস্ত করে রাখা কভিড-১৯-এর চিকিৎসার জন্য এখনো কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন নেই। বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন প্রস্তুতের জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এর মধ্যেই ভ্যাকসিন গ্রহণে অবিশ্বাসী একটি ছোট তবে সোচ্চার দল (অ্যান্টি-ভ্যাক্সার) মহামারীর সুযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের বক্তব্য, বৈদ্যুতিক চিপের সঙ্গে আপনাকে ভ্যাকসিন ইনজেকশন দেবে, আপনাকে বিষাক্ত করবে, আপনাকে আক্রান্ত করবে।

কভিড-১৯ সংকটে একটি সরকারি সেটআপ বলে দাবি করা প্ল্যানডেমিক ভিডিওটি এরই মধ্যে ইউটিউব অন্যান্য স্ট্রিমিং প্লাটফর্মে লাখ লাখ বার দেখা হয়েছে।

এপ্রিলের শেষের দিক থেকে ফিনোক্সিথিয়ানল, পটাশিয়াম ক্লোরাইডসহ ভীতিজাগানিয়া শব্দযুক্ত নামের উপাদানের একটি তালিকা হাজার হাজার বার ফেসবুকে শেয়ার করা হয়। যদিও তালিকাটির তথ্য সত্য ছিল না। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনবিরোধী বক্তব্য নতুন নয়, এটা কেবল মহামারীর সময় ব্যাপক দৃশ্যমানতা অর্জন করেছে।

ফ্রান্সের রেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক মনোবিজ্ঞানের গবেষক সিলভেন দেলুভির মতে, অ্যান্টি-ভ্যাক্স আন্দোলনটি ইন্টারনেট কভিড-১৯ উভয়েরই নতুন সংকটের পূর্বাভাস দেয়। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যান্টি-ভ্যাক্সারদের জন্য একটি অন্তত দক্ষ ইকো চেম্বার তৈরি হয়েছে।

প্লাটফর্মগুলোতে তারা অ্যান্টি-ভ্যাক্স বিষয়বস্তু সীমাবদ্ধ রাখার দাবি করলেও সেখানে নানা ভুয়া শিরোনাম ছড়ানো হচ্ছে। তাদের বক্তব্যটি একটি স্পষ্ট সংজ্ঞা ছাড়াই ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ছে। এর মানে হলো এটা রাজনৈতিক বিভাজনের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে। তাদের কিছু বিভ্রান্তিকর দাবিগুলোর মধ্যে যেমন একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভ্যাকসিনগুলোতে প্রাণঘাতী ইনজেকশনের জন্য ব্যবহূত পদার্থের মতো একই ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভিড ব্রোনিয়েটভস্কির মতে, ভুল তথ্য মহামারীকে যেভাবে প্রভাবিত করেছে তা এখনো পরিষ্কার নয়। মহামারীর কারণে ভ্যাকসিনের বিরোধীরা আরো সক্রিয় কিনা বা মহামারীর প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধির কারণে তারা আরো দৃশ্যমান কিনা, প্রশ্নটি আমরা এখনো তদন্ত করে দেখছি।

মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যামেলিয়া জেমিসন বলেন, ভ্যাকসিনবিরোধীদের মতো অনলাইনে ছোট তবে ভোকাল কিছু গ্রুপ রয়েছে। এগুলো পুনরায় শক্তি সংগ্রহ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে স্বাধীনতা রক্ষার নামে পৃথক অ্যান্টি-ভ্যাক্স, অ্যান্টি-মাস্ক এবং কোয়ারেন্টিনবিরোধী আন্দোলনগুলো স্পষ্টতই একত্র হয়েছে। অনলাইনে তারা এক বড় জায়গা দখল করেছে। তবে অনলাইনের বিষয়গুলোর সঙ্গে বাস্তবতার বেশ ফারাক আছে। আপনি যদি অনলাইনে দেখেন তাহলে মনে হতে পারে ভ্যাকসিনবিরোধীরা প্রায় ৫০-৫০। কিন্তু বাস্তব জীবনে এটা ৫০-৫০ নয়।

বিজ্ঞান স্বাস্থ্যসম্পর্কিত একটি বার্ষিক সমীক্ষা ২০১৮ ওয়েলকাম গ্লোবাল মনিটরের মতে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ কিছুটা বা দৃঢ়ভাবে সম্মত যে ভ্যাকসিনগুলো নিরাপদ। শতাংশ মানুষ বলেছিল যে তারা কিছুটা বা দৃঢ়ভাবে একমত নয়। তবে ১১ শতাংশ মানুষ কোনো মতামত দেয়নি।

বৈজ্ঞানিক জার্নাল নেচারে প্রকাশিত একটি গবেষণায় গবেষকরা জানিয়েছেন, অ্যান্টি-ভ্যাক্স আন্দোলনটি কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবকে প্রশস্ত করতে পারে। যেমনটি ২০১০ সালে হামের প্রাদুর্ভাবের ক্ষেত্রে ঘটেছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৯ সালে বিশ্বস্বাস্থ্যের জন্য ১০টি হুমকি চিহ্নিত করেছিল, যার মধ্যে একটি ছিল এই ভ্যাকসিন বিরোধিতা

সায়েন্স অ্যালার্ট

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন