অর্থনীতির সংকটকালে থাকছে সুযোগও

জিম আরমিটেজ

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে সামনের দিনগুলো বেশ কঠিন হতে যাচ্ছে; অর্থনীতি, চাকরি এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে। এরই মধ্যে বড় বড় অনেক কোম্পানি ছাঁটাইয়ের কার্যক্রমও শুরু করেছে। যেমন রোলস রয়েস হাজার ৫০০, ইজিজেটে হাজার ৫০০ ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে ১২ হাজার কর্মী এরই মধ্যে ছাঁটাই করা হয়েছে। এমনকি অনুপস্থিতির ছুটি শেষ হওয়ার আগেই। অনেক কোম্পনি যারা কর্মী ছাঁটাই করেনি তারা হয় বেতন আটকে দিয়েছে কিংবা কেটে ফেলেছে। সব মিলিয়ে কোম্পানিগুলোর ওপর যে প্রভাব পড়েছে তা গভীর বিস্তৃত।

এসব ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে হতাশ হয়ে পড়া বেশ সহজ। কিন্তু এর দিকে তাকানোর অন্য একটি প্রেক্ষিতও আছে। যেখানে অনেকের কভিড-১৯-এর সংকট সুযোগ হিসেবেও কাজ করতে পারে। সেটি হয়তো তাদের সামনে নতুন করে ব্যবসা দাঁড় করাতে সহায়তা করবে এবং বর্তমান সময়ের চেয়ে আরো ভালো কিছু করার সুযোগ করে দেবে।

যুক্তরাজ্যে যেমন অনেক কোম্পানির কর্মচারীদের ছাঁটাই করা হয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে ছুটি দেয়া হয়েছে। যাদের অনেকে সময় নষ্ট করছেন অন্য কাজের বা চাকরির কথা চিন্তা করে, যা কিনা তাদের আরো বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে ফেলে দিতে পারে। এই সময়টা হচ্ছে নিজস্ব ধারণা তৈরি করে তা পরীক্ষা করে দেখার।

অনেকে হতে পারে প্রথমবার উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করেছে। আবার অনেকে এরই মধ্যে স্টার্টআপ শুরু করেছে, যা কিনা করোনাভাইরাস দ্বারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, ইতিহাস বলছে অনেক সফল ব্যবসার সূত্রপাত হয়েছিল ধরনের সংকটের পরই। কেবল উবার বা এয়ারবিএনবিই অর্থনৈতিক সংকটের সময় সৃষ্টি হয়েছিল এমন নয়, ১৯২৯ সালে গ্রেট ডিপ্রেশনের পরই আমেরিকায় শিশুদের উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছিল ওয়াল্ট ডিজনি।

স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বারবার নিজেদের প্রমাণ করেছে। গ্রাহকদের সামনে অনাগত প্রয়োজনগুলো তুলে ধরে সেগুলো পরিবেশনের ক্ষেত্রেও তারা বেশ অগ্রগামী। কেবল এতটুকুই নয়, এই উদ্যোক্তারা সুযোগ সন্ধান করে তাকে স্বপ্ন থেকে বাস্তবতায় রূপান্তর করার আগ পর্যন্ত কঠিন পরিশ্রম করতে থাকে। সে কারণেই তারা অনেক দ্রুত বিকাশ লাভ করে। এসব জায়গায় কর্মীরা অনেক দ্রুত এবং উৎপাদনশীল ভূমিকা নিয়ে কাজ করতে থাকে, যা কিনা বড় কোম্পানিগুলোতে সেভাবে দেখা যায় না।

যদিও এই সময়ে এসে স্টার্টআপগুলোর পক্ষে অর্থ জোগান পাওয়া কঠিন। চিরায়ত অনেক বিনিয়োগকারী আগে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করে ঝুঁকি নিয়েছিলেন সেখান থেকে পিছু হটেছেন। মূলত সংকটকালে অন্যান্য জায়গায় বিনিয়োগ ডুবতে দেখে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এক অর্থে এটি অযৌক্তিক। এটি এমন সময় যখন শ্রম, ভাড়া, শক্তি বিপণন মূল্য খুবই সস্তা, যা কিনা ছোট ফার্মগুলোর কাজের গতিকে ত্বরান্বিত করতে পারবে। কঠিন সময়ে উদ্যোক্তারা সম্ভাব্য গ্রাহকদের নতুন প্রয়োজনকে চিহ্নিত করতে পারেন।

ব্রিটেনে চ্যান্সেলর রিশি সাঙ্ক অন্য অনেকের চেয়ে অনেক বেশি ছোট ব্যবসাগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করছেন।  এমনকি যদি প্রয়োগের রাস্তা কঠিনও হয়ে থাকে, তার প্রবৃত্তি তাকে ছোট ফার্মগুলোকে উদ্ধারের পথে পরিচালিত করে।

ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ছোট ফার্মগুলোকে লোন দেয়ার পাশাপাশি তিনি নতুন কোম্পানিগুলোর জন্য ফিউচার ফান্ডও তৈরি করেছেন। যা তার সবচেয়ে সফল প্রয়াসগুলোর একটি হিসেবে প্রমাণিত। তবে এটি অস্তিত্বগতভাবেই ঝুঁকিমুক্ত। ক্ষেত্রে মূলত তেমন ফার্মকে সহায়তা করা হয়, যারা বেসরকারি বিনিয়োগ থেকে লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড অর্থ জোগাড় করেছে।

এই সংখ্যা সাম্প্রতিক স্টার্টআপগুলোর জন্য অনেক বেশি। এটি সেসব হাজারো কোম্পানিকে সহায়তা করবে যারা এর থেকে এখনো অনেক দূরে। যেমন প্রোগ্রামারদের সেই দলটি যারা কিনা মাত্রই নতুন অর্থনৈতিক টেকনোলজি অ্যাপটি তৈরি করেছে, কিন্তু লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অথবা সেসব বিজ্ঞানী যারা তাদের প্রটোটাইপ ফুড টেকনোলজি পরীক্ষা করার আগ মুহূর্তে হোটেল রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ধসে পড়েছে।

মানুষগুলো লকডাউনের প্রথম মাস থেকেই নিজেদের তহবিল বাড়ানোর কাজে মনোযোগ দিয়েছে। অথচ তহবিল বাড়ানোর যেসব চুক্তি তা এক বছরে ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। তবে ভিন্ন পথ ধরে ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান দ্য ইনডিপেনডেন্টও এখন নিষ্ঠাবান স্টার্টআপ কোম্পানিকে সহায়তা করার পথে এগিয়ে এসেছে। যা কভিড-পরবর্তী সময়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হতে পারে।

দ্য ইনডিপেনডেন্ট

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন