মিনিয়াপলিসে বিক্ষোভে পুড়ল রেস্টুরেন্ট, তবু আন্দোলনের পক্ষে বাংলাদেশী

বণিক বার্তা অনলাইন

শুধু কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার কারণে পুলিশের নির্মম নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছেন জর্জ ফ্লয়েড। এই অন্যায়ের প্রতিবাদে উত্তাল জর্জের আপন শহর মিনিয়াপলিসসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি বড় শহর। চলছে জ্বালাও পোড়াও ভাঙচুর। এরই মধ্যে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন এক বিক্ষোভকারী।

বিক্ষোভের আগুন থেকে রেহাই পায়নি মিনিয়াপলিসে এক বাংলাদেশী পরিবারের রেস্টুরেন্টও। পুরো রেস্টুরেন্ট পুড়ে গেছে। 

মিনিয়াপলিসে থানার পাশেই গান্ধী মহল রেস্টুরেন্ট। এটির মালিক বাংলাদেশী রুহেল ইসলাম। গতকাল শুক্রবার সকালে আশেপাশে যখন ধোয়ায় আচ্ছন্ন তখন ভোর ৬টায় প্রথম খবরটি পান রুহেল ইসলামের মেয়ে হাফসা ইসলাম। 

হাফসা (১৮) বলেন, এই খবর প্রথম শুনেই আমার খুব রাগ হয়েছিল। এটাই আমার পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস।  কিন্তু পরক্ষণেই তিনি শুনতে পান তার বাবা কারো সঙ্গে উচ্চস্বরে ফোনে কথা বলছেন। তিনি বলছেন, আমার ভবন জ্বালিয়ে দিক সমস্যা নাই। সবার আগে অবশ্যই এ অন্যায়ের বিচার হওয়া দরকার।

শুক্রবার বিকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। বিক্ষোভের কারণে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করতে হয়েছিল। এখন বিক্ষোভকারীদের আগুনেই পুড়ে গেল সেটি। কিন্তু এরপরও বিক্ষোভের পক্ষে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন রুহেল ইসলাম (৪২)। তিনি বলেন, আমরা তো এই ভবনটা আর বানাতে পারবো। কিন্তু একটা মানুষকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না। কমিউনিটির লোকেরা সব এখন এক জায়গায়। আমরা সবাই মিলে নতুন করে শুরু করতে পারবো।

গত সোমবার পুলিশের নির্যাতনে আফ্রিকান আমেরিকান নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড নিহত হওয়ার পর থেকে মিনিয়াপলিসজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে সেই বিক্ষোভ এতোদিন শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে রুহেলের পরিবার। এবার তারা সরাসরি বিক্ষোভে সমর্থন দিচ্ছেন। যদিও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা তারা আগে থেকেই করে আসছিলেন।

ওই ঘটনার জন্য দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাকে অবশ্য এরই মধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

থানার ঠিক পাশেই বিক্ষোভকারীরা গত বৃহস্পতিবার রাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। কয়েকটি ভবনে জ্বলার পর শেষ পর্যন্ত আগুন এসে রেস্টুরেন্টে পৌঁছায়। ওই বিক্ষোভের মধ্যে আগুন নেভানোও সম্ভব হয়নি। 

হাফসা ইসলাম গত সোমবার জর্জ ফ্লয়েডকে আটক ও নির্যাতনের দৃশ্য দেখেছিলেন। ফুড ডেলিভারি কোম্পানি ডোর ড্যাশে খণ্ডকালীন কাজ করেন তিনি। তিনি বলেন, আমি গাড়ি থামিয়ে দেখছিলাম। ভয়ঙ্কর ছিল সেই দৃশ্য। পরে শুনি লোকটি মারা গেছে।

তিনি বলেন, আমি বুঝতে পারছি মানুষ কেন এমন বিক্ষোভে উত্তাল। তারা কিন্তু শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করতে চেয়েছিল। তাতে কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করছিল না। 

গান্ধীমহল রেস্টুরেন্টটি চালু হয় ২০০৮ সালে, যখন ইউরোপজুড়ে চলছিল মহামন্দা। এতোদিন ভালোভাবেই চালিয়ে নিচ্ছিলেন রুহেল ইসলাম। ব্রিটিশ ভারতের অহিংস আন্দোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধীর সম্মানে তিনি রেস্টুরেন্টের নাম রেখেছেন।

রুহেল বলেন, আমি অহিংস প্রতিবাদে বিশ্বাস করি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের আচরণে মিনিয়াপলিসের অন্য বাসিন্দাদের মতো তিনিও হতাশ। 

তিনি বলেন, সবাইকে বারবার শান্তিপূর্ণভাবে এবং অহিংস উপায়ে বিক্ষোভ করতে আহ্বান করছি। কিন্তু আমাদের তরুণ প্রজন্মতো ক্ষুব্ধ। অবশ্য এই ক্ষোভের কারণও আছে।

মিনিয়াপলিশের এই দৃশ্য শৈশবে বাংলাদেশের স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে রুহেল ইসলামকে। ওই সময় স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে শহরে প্রবল বিক্ষোভের রূপ তিনি দেখেছেন। ওই সময় দুই জন ছাত্র পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিল।

রুহেল বলেন, আমি ভয়ঙ্কর পুলিশি রাষ্ট্রের মধ্যেই বড় হয়েছি। সুতরাং এ ধরনের পরিস্থিতি আমার কাছে নতুন নয়।

রুহেল ইসলামের এই রেস্টুরেন্টটি শহরে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি, জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনের একটি কেন্দ্র ছিল। আগুনে তার সংগৃহীত কিছু মূল্যবান শিল্পকর্মও পুড়ে গেছে। এই ভবনের বেজমেন্টে একটি ছোট অ্যাকুয়াপনিক খামারও আছে। সেই খামার থেকে টাটকা শাকসবজি রেস্টুরেন্টের রান্নাঘরে যেত।

আহতদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসাকর্মীদের একটি গির্জায় স্থানান্তরের আগে গত মঙ্গল ও বুধবার দুই রাতেও রুহেল যথারীতি রান্নাঘরে ছিলেন। রান্না করেছেন ডাল, বাসমতি চালের ভাত আর নানরুটি। এগুলো রান্না হচ্ছিল বিক্ষোভরত মানুষদের জন্যই। আর সামনের কক্ষেই আহতদের ক্ষততে ব্যান্ডেজ করছিলেন মেডকিরা।

নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন