অর্থনীতিতে নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর ধ্বংসাত্মক প্রভাবের জেরে বাজার থেকে ১২ লাখ কোটি রুপি ঋণ গ্রহণ করতে যাচ্ছে ভারত সরকার। শুক্রবারের ওই ঘোষণায় ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য যে ৭ দশমিক ৮ লাখ কোটি রুপি ঋণ গ্রহণের কথা ছিল, তা থেকে ৫৪ শতাংশ বা ৪ দশমিক ২ লাখ কোটি রুপি বাড়ছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজার থেকে উচ্চঋণ গ্রহণ মহামারীর কারণে যে অতিরিক্ত ব্যয় বেড়েছে এবং প্রণোদনা ঘোষিত হয়েছে, তা পূরণে সরকারকে সহায়তা করবে।
রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) সঙ্গে আলোচনা করেই এবার ১২ লাখ কোটি রুপি ঋণ নেয়া হচ্ছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই ৬ লাখ কোটি রুপি ধার করতে হবে। পাশাপাশি এতে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ রাজস্ব ঘাটতির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, তা বেড়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে ঋণের পরিমাণ বাড়লেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, অতিরিক্ত ৪ দশমিক ২ লাখ কোটি রুপি দিয়ে কি সরকার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সক্ষম হবে? নাকি লকডাউনের জেরে রাজস্ব আদায় যে পরিমাণে কমে গিয়েছে এবং করোনা মোকাবেলায় যে আর্থিক চাপ সহ্য করতে হয়েছে, তাতেই সব টাকা শেষ হয়ে যাবে। এছাড়া এ বাড়তি ঋণ মেটাতে কি রিজার্ভ ব্যাংককে টাকা ছাপানোর পথে এগোতে হবে?
আরবিআইয়ের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস অবশ্য নোট ছাপানোর বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেননি। তবে অর্থনীতিবিদদের ধারণা, এই বাড়তি ঋণ অর্থনীতিকে কতটা চাঙ্গা করতে ব্যবহার করা হবে তা বলা মুশকিল। কারণ এর অনেকটা অংশই চলে যাবে রাজস্ব ক্ষতি সামলাতে। আরবিআইয়ের সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজন এরই মধ্যে বার্তা দিয়েছেন, নোট ছাপানো ও রাজস্ব ঘাটতি দুটি বিষয়ে ভেবেচিন্তে এগোতে হবে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বাজেট প্রস্তাবে মূল্যবৃদ্ধিসহ জিডিপি ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে ব্যর্থ হবে এমন নয়, পাশাপাশি ধাক্কা খাবে বিলগ্নীকরণের মাধ্যমে অর্থ তোলার উদ্যোগটিও।
এদিকে মূল্যায়ন সংস্থা মুডি’সের নতুন পর্যালোচনায় দুশ্চিন্তা আরো বেড়েছে। এবার মুডি’সের পূর্বাভাস, চলতি অর্থবছরে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার শূন্যে নেমে যেতে পারে। আগের সমীক্ষায় চলতি অর্থবছরে ভারতের ৩ দশমিক ৫ শতাংশ রাজস্ব ঘাটতির পূর্বাভাস দিয়েছিল মুডি’স। কিন্তু সর্বশেষ পূর্বাভাসে তা ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে মূল্যায়ন সংস্থাটি।