চলতি রবি মৌসুমে পাবনা অঞ্চলে বেড়েছে ফসলের বীজ বিক্রি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা বেড়েছে পেঁয়াজ ও গম বীজের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দরবৃদ্ধির কারণে কৃষকদের মধ্যে পেঁয়াজ আবাদের আগ্রহ বেড়েছে। এছাড়া ব্লাস্টের ভয় দূর হওয়ায় নতুন করে পুরোদমে গম আবাদ শুরু হয়েছে। এসব কারণে পেঁয়াজ ও গম বীজের চাহিদা বেড়েছে।
সরকারিভাবে কৃষক পর্যায়ে বীজ সরবরাহ করে থাকে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। এ সংস্থাটির বীজ বিপণন দপ্তরের পাবনা অঞ্চল কার্যালয় জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে পাবনা জেলার জন্য প্রায় ১ হাজার টন গম, ২৩ টন হাইব্রিড বোরো, ১ হাজার ২৪০ টন উফশী বোরো, ১৪২ টন মসুর, ৫৯ টন খেসারি, ৮৫ টন সরিষা, দশমিক ৫৭০ টন দানা পেঁয়াজ, ২৯ টন বাল্ব বা কন্দ পেঁয়াজ, ৩৫১ টন আলু এবং ৬ দশমিক ৫০ টন চীনাবাদাম বীজ ডিলার পর্যায়ে বিক্রির জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়া সিরাজগঞ্জের জন্য ১৯৭ দশমিক ৫ টন গম, ৪৭০ দশমিক ৮ টন বোরো, ২০ দশমিক ২৮৫ টন সরিষা, ১১ টন মাষকলাই, ১৮ টন চীনাবাদাম ও দশমিক শূন্য ৬০ টন পেঁয়াজ বীজ বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছিল। এরই মধ্যে সব বীজ বিক্রি হয়ে গেছে। বিএডিসি ছাড়াও কৃষকরা বিভিন্ন উৎস থেকে বীজ সংগ্রহ করেছেন।
বিএডিসির বীজ বিপণন দপ্তর পাবনা অঞ্চলের উপপরিচালক কেএম গোলাম সরওয়ার জানান, গতবারের তুলনায় এবার রবি মৌসুমে পাবনা ও সিরাজগঞ্জে সব ধরনের বীজ বেশি বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে গম ও পেঁয়াজ বীজের চাহিদা ছিল বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনা সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে পাবনায় ৪৯ হাজার ৪২০ হেক্টরে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মৌসুমে এ জেলায় পেঁয়াজ আবাদ হয়েছিল ৪৮ হাজার ২৭০ হেক্টরে। এছাড়া পাবনায় গম আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৭০ হেক্টর।
বেড়া উপজেলার আমিনপুর গ্রামের মাহিন বীজ ভাণ্ডারের মালিক মো. দুলাল সেখ জানান, বেড়া ও সুজানগর উপজেলা পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এ কারণে এই দুই উপজেলায় পেঁয়াজ বীজের ভালো চাহিদা থাকে। তবে এবার এ বীজের চাহিদা অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। দামে সস্তা ও মান ভালো হওয়ায় কৃষকরা বিএডিসির পেঁয়াজ বীজ কিনতে বেশি আগ্রহ দেখায়। এবার বিএডিসির দানা পেঁয়াজ বীজ কেজিপ্রতি ৮৮০ টাকা ও কন্দ পেঁয়াজ বীজ ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য উৎস থেকে সংগৃহীত দানা পেঁয়াজ বীজ কেজিপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা ও কন্দ পেঁয়াজ বীজ ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
সুজানগরের পেঁয়াজ চাষী গোলাম রসুল জানান, গত মৌসুমে পেঁয়াজের ভালো দাম পাওয়া যায়নি, তবে এবার ভালো পাওয়া গেছে। এ কারণে সবাই এখন পেঁয়াজ আবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছে। যাদের কাছে পেঁয়াজ ছিল তারা বেশ ভালো লাভ করেছে।
আটঘড়িয়া উপজেলার হাজী বীজ ভাণ্ডারের মালিক মো. হাবিবুর রহমান জানান, ব্লাস্টের কারণে পাবনায় কয়েক মৌসুম গম আবাদ বন্ধ করে দিয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। এ সময় বিএডিসি থেকেও কোনো বীজ পাওয়া যায়নি। তার পরও কৃষকরা নিজেদের কাছে থাকা বীজ দিয়ে স্বল্প পরিসরে গম আবাদ করেছিল।
তিনি জানান, গত মৌসুম থেকে গম আবাদের বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হয়। ব্লাস্টের ভয় দূর হওয়ায় কৃষকরা এবার পুরোদমে গম
আবাদ শুরু করেছেন। এ কারণে গম বীজের চাহিদা বেড়েছে।