আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে নজর কাড়ছে পরিবেশবান্ধব পোশাক পণ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

তৈরি পোশাক শিল্পের মেশিনারি ও এর সহায়ক পণ্যের ১৯তম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীগার্মেন্টেক বাংলাদেশ-২০২০’-এরগ্যাপেক্সপো-২০২০’-তে স্থান পেয়েছে দেশের তৈরি বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগ,

প্লাস্টিকের তৈরি সুতো, কাগজের তৈরি হ্যাঙ্গার, রিসাইকেলিং পলি ব্যাগসহ বেশকিছু পণ্য। পোশাক শিল্পকে আরো সমৃদ্ধ করতে বাংলাদেশসহ ২৪টি দেশের ৪৫০টি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় চলতি মাসের ১৫ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে চার দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী।

পোশাক শিল্পের উন্নয়নে মেশিনারি, ইয়ার্ন অ্যান্ড ফ্যাব্রিকস, গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ এবং প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং মেশিনারি অ্যান্ড সাপোর্ট সার্ভিস নিয়ে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

দেশের তৈরি বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব পণ্যের স্টল দেশী-বিদেশী দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে। একসময় গার্মেন্টসের সব পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। তবে প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া পণ্য দেশের পোশাক শিল্পকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। তারা জানান, গার্মেন্টস কারখানার প্রায় সব পণ্যই এখন দেশে উৎপাদন হচ্ছে। এর ফলে এ শিল্পকে অদূর ভবিষ্যতে আর বিদেশমুখী হতে হবে না। এছাড়া এতে উৎপাদন খরচও অনেকাংশে কমে আসবে। আগামী ২০২৩ সাল থেকে ইউরোপের বাজারে ক্ষতিকর প্লাস্টিক ব্যাগ প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রস্তুত করা হচ্ছে সবজিজাতীয় পণ্য দিয়ে ব্যাগ, যা পরিবেশবান্ধব ও দ্রুত পচনশীল।

এ বিষয়ে প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া ইপিলিয়নের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ শাকিব রেজওয়ান বলেন, যেহেতু আমাদের পোশাকের বড় একটা বাজার রয়েছে ইউরোপে, সেহেতু সেখানকার বাজার ধরে রাখতে আমরা আলু ও ভুট্টা দিয়ে ব্যাগ তৈরি করছি। কারণ বেশির ভাগ পোশাক প্যাকেট করা হয় পলি ব্যাগে, কিন্তু ২০২৩ সাল থেকে সেখানে কোনো পলি ব্যাগ ঢুকতে দেয়া হবে না। এছাড়া এতে করে দেশে সব গার্মেন্টস পণ্য উৎপাদন হওয়ায় খরচও কমছে।

এছাড়া কাজী প্রিন্টিং অ্যান্ড অ্যাকসেসরিজ লিমিটেডে স্থান পেয়েছে অটোমেটিকভাবে করা লেভেলের পেছনে প্রিন্টকৃত পণ্য। টিমস ডিজাইনের স্টলে স্থান পেয়েছে কোনো রকম সুতার ব্যবহার ছাড়াই এমব্রয়ডারি করা পণ্য। ইনডেক্স অ্যাকসেসরিজ লিমিটেডের স্টলে শোভা পাচ্ছে সুতা লেভেলসহ সব ধরনের পরিবেশবান্ধব গার্মেন্টস পণ্য। ইনডেক্স অ্যাকসেসরিজের মার্কেটিং বিভাগের সহকারী ম্যানেজার আরিফুজ্জামান জানান, তাদের সব পণ্যই পরিবেশবান্ধব উপাদান দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। তাদের পণ্য শুধু দেশে নয়, বাইরের যে দেশগুলোতে পোশাক শিল্পের আধিপত্য আছে, সেসব দেশে রফতানির চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া সুতার বদলে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকে তৈরি সুতা দেশের এক অভাবনীয় উদ্ভাবন বলে মনে করছেন আয়োজকরা। তবে এসব পণ্যের বেশির ভাগ কাঁচামাল দেশের হলেও বেশকিছু প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকে।

দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন সাফল্যে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, একসময় তৈরি পোশাক শিল্পে ব্যবহারের জন্য কার্টন, প্লাস্টিকসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু বিদেশ থেকে আমদানি করে পোশাক রফতানি করতে হতো। আজ বাংলাদেশে এ খাত নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের বিপুল চাহিদা মিটিয়ে এখন গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজ বিদেশে রফতানি হচ্ছে।

এএসকে ফেয়ার অ্যান্ড এক্সিকিউশনসের এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনের মার্কেটিং ম্যানেজার সালমান বিস সুলতান বলেন, এটি বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী। এতে সারা বিশ্বের পাঁচশর অধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। গার্মেন্টস খাতের নতুন নতুন প্রযুক্তিগুলো এখানে স্থান পায়। ১০টি হলে এ প্রদর্শনী চলছে। এখানে স্থান পাওয়া সব অত্যাধুনিক মেশিনের সঙ্গে আমাদের দেশের গার্মেন্টস শিল্পের সবার পরিচয় ঘটছে। কম সময়ে বেশি উৎপাদনের অনেক আধুনিক মেশিন এ খাতে প্রদর্শিত হচ্ছে। বিশ্বের ১২টি দেশের আমাদের অফিসে যারা এ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেন, তাদের মাধ্যমে এগুলো এনে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। আমরা মূলত একটি বাজার তৈরি করি এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে। যার বায়ার হন দেশের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা। আমরা বাংলাদেশের তৈরি গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজের জন্যও আলাদা একটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রেখেছি বিশ্বের সব পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্টকে আমাদের পণ্য সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য। এছাড়া শুধু বাংলাদেশে নয়, কম্বোডিয়া, মিয়ানমারসহ বিশ্বের যেসব দেশে পোশাক শিল্প আছে, সেখানেই এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন