মিথ্যা দিয়ে সত্যকে মুছে ফেলা যায় না: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আইন করে কারো কাছ থেকে সম্মান আদায় করা যায় না। কাজেই মুজিব বর্ষ কে (বিএনপি) মানল, কে মানল না, তার জন্য বাঙালি জাতি বসে থাকেনি; থাকবে না। তিনি বলেন, ১৯৭৫-এর পর থেকে ২১টা বছর জাতির পিতার নাম-নিশানা ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। মার্চের ভাষণে জয় বাংলা স্লোগান শেখ মুজিবের নাম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বাংলার মাটিতে। সত্যকে কখনো মিথ্যা দিয়ে বা বাধা দিয়ে চেপে রাখা যায় না, মুছে ফেলা যায় না, সেটা আজ প্রমাণিত সত্য। প্রমাণিত সত্য বলেই মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে।

একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, সাত কোটি বাঙালিকে কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না। এখন কোটি থেকে ১৬ কোটি হয়েছে, কিন্তু তাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, দাবায়ে রাখতে পারবেও না। বাঙালি এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে।

বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, যারা সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত খুনিদের বিচারের হাত থেকে মুক্ত করে পুরস্কৃত করেছে, যারা স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী, যাদের বিচার শুরু হয়েছিল, তাদের বিচারের পথ বন্ধ করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়ে মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিল, তাদের (বিএনপি) কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। তাদের সময়ে মুক্তিযুদ্ধে, মুক্তির সংগ্রামে, বিজয়ের ইতিহাসে জাতির পিতার যে অবদান, তা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। আজকে সে ইতিহাস উদ্ভাসিত হয়েছে। আজকে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ইউনেস্কোর মাধ্যমে বিশ্বের সব দেশ, জাতিসংঘভুক্ত সব দেশ উদযাপন করছে। এর চেয়ে বড় সত্য কী আছে?

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবাই এমপি, কেউ উঁচু বা নিচুতে নেই। আর আমি কখনো নিজেকে উঁচুতে রয়েছি, তা ভাবি না। আর কী পেলাম, কী পেলাম না, সে হিসাব আমি কখনো মেলাই না। বরং দেশের মানুষকে, দেশকে কতটুকু দিতে পারলাম, যে মানুষগুলোর জন্য আমার পিতা (বঙ্গবন্ধু) জীবন দিয়ে গেলেন, সেই মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় কথা। আর আমার কাছে কখনই আমিত্ব বলে কোনো কিছু নেই।

সরকারি দলের সংসদ সদস্য একেএম রহমতুল্লাহ (ঢাকা-১১) আব্দুস সালাম মুর্শেদীর (খুলনা-) পৃথক দুটি প্রশ্নের লিখিত জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ২৯৮টি কর্মসূচির মাধ্যমে সারা বিশ্ব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করবে। ইউনেস্কো ২০২০ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন নিঃসন্দেহে আরো ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

তিনি বলেন, আমাদের যেসব দেশে দূতাবাস আছে, প্রত্যেক দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে জন্মশতবার্ষিকী অথবা মুজিব বর্ষ পালন করা হবে। আমাদের দূতাবাসগুলো উদ্যোগ নিচ্ছে। মুজিব বর্ষে অনেক দেশের সরকারপ্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান আসবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি নামে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির অধীনে আটটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশব্যাপী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগে তৃণমূলের জনগণকে সম্পৃক্ত করে মুজিব বর্ষ উদযাপন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্তর্ভুক্ত করা, ইংরেজিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি, স্কেচ আলোকচিত্র নিয়ে বই শেখ মুজিব; লাইফ অ্যান্ড টাইমস প্রকাশ করা হবে। অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণ ইংরেজি ছাড়াও হিন্দি, উর্দু, ফরাসি, জার্মান, চাইনিজ, আরবি, ফারসি, স্প্যানিশ, ইতালিয়ান, কোরিয়ান জাপানি ১২টি ভাষায় অনুবাদ প্রকাশ করা হবে।

নওগাঁ- আসনের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরবর্তনের ফলে মানুষের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হচ্ছে। দেশজ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। জলবায়ু পরিবর্তনে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা মে মাসে ডিগ্রি নভেম্বরে শূন্য দশমিক ডিগ্রি বেড়েছে। গ্রীষ্মকালে সমুদ্রের লোনা পানি দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত নদীতে প্রবেশ করছে। গড় বৃষ্টিপাত বেড়েছে। স্বল্প সময়ে বেশি বৃষ্টিপাত শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বেড়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন