অর্থবছরের প্রথমার্ধ রফতানিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস থেকে প্রবৃদ্ধির যে নেতিবাচক ধারা চালু হয়েছিল, প্রথম ছয় মাস শেষেও তা কাটিয়ে ওঠা যায়নি। অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বিশ্ববাজারে হাজার ৯৩০ কোটি ২১ লাখ ৬০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল হাজার ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ ৭০ হাজার ডলারের পণ্য। অর্থাৎ

গত অর্থবছরের প্রথমার্ধের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে রফতানি কমেছে  ১১৯ কোটি ৭৭ লাখ ১০ হাজার ডলার বা দশমিক ৮৪ শতাংশ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল হালনাগাদ রফতানি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ইপিবির হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে রফতানি কমেছে দশমিক ৮৪ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রফতানির নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা শুরু হয়, প্রথমার্ধ শেষেও যা অব্যাহত আছে।

গত পাঁচ অর্থবছরের প্রথমার্ধের রফতানি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতি বছরই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারায় ছিল রফতানি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস শেষে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল দশমিক ৮৪ শতাংশ। ২০১৬-১৭-তে প্রবৃদ্ধি হলেও তা আগের অর্থবছরের চেয়ে কমে হয় দশমিক ৪৪ শতাংশ। ২০১৭-১৮-তে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয় দশমিক ১৫ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয় দুই অংকের, ১৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে রফতানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক দশমিক ৮৪ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ইতিবাচক। জুলাইয়ে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল দশমিক ৫৫ শতাংশ। জুলাই-আগস্ট দুই মাসে শুরু হয় নেতিবাচক ধারা। ওই দুই মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ। তিন মাস শেষে প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক দশমিক ৫৯ শতাংশ। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে রফতানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক দশমিক ৮২ শতাংশ। অর্থবছরের পাঁচ মাস শেষেও রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক দশমিক ৫৯ শতাংশ।

রফতানি খাতের শীর্ষ তিন পণ্য হলো পোশাক, চামড়া চামড়াজাত এবং পাট পাটজাত পণ্য। অর্থবছরের ছয় মাসের পরিসংখ্যান বলছে, পাট পাটজাত পণ্যের রফতানি বাড়লেও কমেছে পোশাক এবং চামড়া চামড়াজাত পণ্যের রফতানি। তবে দেশের মোট রফতানির ৮৪ শতাংশ অবদান রাখা পণ্য পোশাকের রফতানি কমার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক রফতানিতে।

ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে পাট পাটজাত পণ্যের রফতানি বেড়েছে ২১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। চামড়াজাত পণ্যের রফতানি কমেছে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ। এদিকে প্রধান পণ্য পোশাক চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রফতানি হয়েছিল হাজার ৬০২ কোটি ৪০ লাখ ১০ হাজার ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয় হাজার ৭০৮ কোটি ৪৯ লাখ ২০ হাজার ডলারের পোশাক। হিসেবে পোশাক রফতানি কমেছে দশমিক ২১ শতাংশ।

পোশাক রফতানিকারকরা বলছেন, পোশাক শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা যে বিপন্ন হচ্ছে, তারই প্রকাশ ধারাবাহিক রফতানি কমতে থাকা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নিম্নতম মজুরি বৃদ্ধির পর সাম্প্রতিক মাসগুলোয় কারখানা বন্ধের প্রভাব দেখা যাচ্ছে রফতানিতে। রফতানি প্রবৃদ্ধির বাঁক ঘোরাতে হলে এখনই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি . রুবানা হক বলেন, একটি বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, আর তা হলো আমরা প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাচ্ছি। নীতিগত সহায়তা ছাড়া আমরা শীর্ষে টিকে থাকার আকাঙ্ক্ষা ধরে রাখতে পারব না। ডিসেম্বর জানুয়ারি পোশাক রফতানির ব্যস্ততম সময় হলেও আমাদের তেমন কোনো অর্জন হয়নি। ডিসেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে রফতানি নেতিবাচক থাকলেও শেষ দুই সপ্তাহে কিছুটা ইতিবাচক।

মাসভিত্তিক রফতানি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রফতানি প্রবৃদ্ধির নেতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল। সময়ে যথাক্রমে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক ১১ দশমিক ৪৯, দশমিক , ১৭ দশমিক ১৯ ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ। ডিসেম্বরে রফতানি প্রবৃদ্ধি কিছুটা ইতিবাচক ধারায় ফিরে হয়েছে দশমিক ৮৯ শতাংশ।

রফতানির নেতিবাচক ধারার কারণ হিসেবে ডলারের বিপরীতে টাকার অতিমূল্যায়নকে দায়ী করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, প্রতিযোগী দেশগুলো ডলারের বিপরীতে নিজেদের মুদ্রা অবমূল্যায়ন করেছে। এর ফলে তাদের মূল্য সক্ষমতা বেড়েছে। কারণে অনেক ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে না এসে প্রতিযোগী দেশগুলোয় চলে যাচ্ছে। ক্রয়াদেশ ঘাটতিতে বাংলাদেশের রফতানি কমে গেছে।

এদিকে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছেন রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী এমপি। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, একক মাস হিসাব করলে ডিসেম্বরে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরেছে রফতানি খাত। পরিস্থিতি দ্রুতই আরো ভালো হবে বলে আশা করছি। তবে চ্যালেঞ্জ আছে অনেকগুলো। প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো মূল্য সক্ষমতা প্রতিযোগী দেশের চেয়ে কমে এসেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন