ছাত্রলীগ যেন মর্যাদাপূর্ণ সংগঠন হয়: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছাত্রলীগকে একটি মর্যাদাপূর্ণ সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের যে ঐতিহ্য ও অবদান, সেটা প্রত্যেক নেতাকর্মীর মনে রাখা উচিত। আর সেটা মনে রেখেই তাদের আচরণ, কথাবার্তা ও রাজনীতি করা উচিত, যেন ছাত্রলীগ একটি মর্যাদাপূর্ণ সংগঠন হয়।

গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতির যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে ছাত্রলীগ বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সবকিছু কেড়ে নেয়ার একটা প্রবণতা ছিল পাকিস্তানিদের মধ্যে। তারা শুধু বাংলা ভাষায় কথা বলতে বাধা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তারা এমন ফরমান জারি করেছিল যে বাংলা অক্ষর পরিবর্তন করে আরবি হরফে বাংলা ভাষা লিখতে হবে। এর বিরুদ্ধে সংগ্রামটা ছাত্রলীগই শুরু করেছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। এর পরে যে সংগ্রাম হয়েছে, সেখানেও ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল।

তিনি বলেন, ১৯৫৮ সালে যখন মার্শাল ল দেয়া হলো, তখন বঙ্গবন্ধু কারাগারে থেকেই সিদ্ধান্ত নেন, যেভাবেই হোক এ বাংলাকে মুক্ত করতে হবে, স্বাধীন করতে হবে। ১৯৬০ সালে বঙ্গবন্ধু যখন জেল থেকে মুক্তিলাভ করেন, তখন শুধু রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল তা নয়, তার ঢাকার বাইরে যাওয়াও নিষিদ্ধ ছিল। তখন তিনি ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করার নির্দেশনা দিয়ে পদক্ষেপ নেন। আর সেই লক্ষ্যে তিনি সমগ্র বাংলাদেশেনিউক্লিয়াস গঠন করেন। প্রত্যেক জেলায় এবং ইউনিয়নে ছোট দু-তিন সদস্যবিশিষ্ট একটা নিউক্লিয়াস গঠন করে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনাকে উদ্বুুদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। সমগ্র আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আর বঙ্গবন্ধু এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাদের নির্দেশনা দিতেন, যাতে তা সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৯৬৬ সালে ছয় দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং ছাত্রলীগকে দিয়ে কাজ করিয়েছিলেন। জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মানুষের মাঝে চেতনা তৈরি করে জনগণকে সেটা গ্রহণ করানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন ছাত্রলীগকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে পতাকা কেমন হবে তা নিয়ে ঘরোয়া আলোচনায় তিনি বলেছিলেন জাপান উদিত সূর্যের দেশ। তাই তাদের পতাকা সাদার মাঝে লাল সূর্য, আর আমরা সবুজ বাংলাদেশ, তাই আমাদের পতাকা হবে সবুজের মধ্যে লাল সূর্য।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনায় প্রথম প্রতিবাদ ছাত্রলীগের ছেলেরাই করেছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগ ছাড়াও ছাত্র ইউনিয়নসহ আরো কিছু সংগঠন একসঙ্গে প্রতিবাদ করে। সেই সময় আমরা দুই বোন শরণার্থী হিসেবে বিদেশে ছিলাম। আমাদের দেশে ফিরে আসতে দেয়ার দাবিও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে করা হয়। একই সঙ্গে যুবলীগও দাবি করে। আর আওয়ামী লীগ থেকে মিজানুর রহমান চৌধুরী সাহেব সংসদে এ দাবি করেছিলেন। দেশের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে ছাত্রলীগ সবসময় বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে।

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাত্রদের হাতে অস্ত্র দিয়েছিলেন, আর আমি দিয়েছি খাতা-কলম। জিয়াউর রহমান, এরশাদসহ যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছেন, তারা বহু মেধাবী ছাত্রের জীবন নষ্ট করেছেন। এমনকি সাত খুনের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ছেড়ে দিয়েও রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছিলেন তারা।

শেখ হাসিনা বলেন, আদর্শ ছাড়া, নীতি ছাড়া, সততা ছাড়া কখনো কোনো নেতৃত্ব গড়ে উঠতে পারে না। কোনো নেতৃত্ব দেশকে কিছু দিতে পারে না, জাতিকে কিছু দিতে পারে না। মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে না। কোনো ধরনের সফলতা দেখাতে পারে না। সাময়িকভাবে অর্থ-সম্পদের মালিক হতে পারে, নামডাক হতে পারে কিন্তু সেখানেই তারা বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু দেশের জন্য বা ইতিহাসের জন্য কিছু রেখে যেতে পারে না। বঙ্গবন্ধুও ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে উঠে এসেছেন কিন্তু তিনি একটা দেশ দিয়ে গিয়েছেন, স্বাধীনতা দিয়ে গিয়েছেন। দিতে পেরেছেন কারণ উনার শক্তি ছিল, সততার শক্তি, নীতি ছিল, সাহস ছিল। তিনি কখনো নীতির সঙ্গে আপস করেননি।

যারা রাজনৈতিক নেতা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেন, স্বপ্ন দেখেন, তাদের প্রত্যেকেরই বঙ্গবন্ধুরঅসমাপ্ত আত্মজীবনীকারাগারের রোজনামচা পড়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, যারা রাজনীতি ও ইতিহাস নিয়ে কাজ করতে চান বা গবেষণা করতে চান বা ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুুকে জানতে চান, তাদের জন্য পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার কাছে বঙ্গবন্ধুর নামে যে ফাইল আছে, সেটা প্রকাশ করে যাব। সেখানে বঙ্গবন্ধুর নামে সব রিপোর্ট লেখা। তারা বঙ্গবন্ধুকে কোন চোখে দেখত সেটা সেখানে আছে। এটা প্রকাশ করলে বঙ্গবন্ধুু সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে।

ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগকে সংগঠনকে নীতি নিয়ে আদর্শ নিয়ে গড়ে তুলতে হবে, এ সংগঠন থেকেই আগামী দিনের নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। আওয়ামী লীগের সব আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের বিরাট অবদান রয়েছে। তাই ছাত্রলীগকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এ ছাত্রলীগ যেন নীতি-আদর্শ নিয়ে চলে, যাতে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব এ সংগঠন থেকেই আসে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন