গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে রাজনৈতিক অর্থনীতি পদবাচ্যটি বিশ্বব্যাপী বহুলভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। যদিও এটি অ্যাডাম স্মিথ বা তার অনেক আগে থেকেই ছিল। তবে তখন রাজনীতির ওপর অর্থনীতি ততটা গুরুত্ব পেত না, প্রাধান্য পেত না। তখন বেশি প্রাধান্য পেত প্রাসাদ রাজনীতি, ষড়যন্ত্র, একে অন্যের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল প্রভৃতি। কিন্তু সব যুগে-সর্বকালে স্বার্থের কেন্দ্রবিন্দুতে প্রেরণা হিসেবে ছিল অর্থনীতি। কেউ কেন এবং কীভাবে ক্ষমতাবান হতে চায়, ক্ষমতায় যেতে বা থাকতে চায়, অন্য রাজ্য দখল করতে চায়—শেষ পর্যন্ত সবকিছুর মূলে ছিল বা আছে অর্থনীতি। কিন্তু রাজনৈতিক অর্থনীতি কথাটা আগে এত ব্যাপকভাবে আসেনি, যেটি গত শতাব্দীতে এসেছে। মূলত রাজনীতি অর্থনীতিকে কিংবা অর্থনীতি রাজনীতিকে প্রভাবিত করার পারস্পরিক সম্পর্ক বা ভূমিকার তারতম্য থেকে এটি এসেছে। দেখা যাচ্ছে, যখন কোনো অর্থনৈতিক কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে তখন সেখানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকছে। আবার যখন রাজনৈতিক কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে তখন অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে যাচ্ছে। সেই থেকে পলিটিক্যাল ইকোনমি শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। সারা বিশ্বে পলিটিক্যাল ইকোনমি যে পর্যায়ে এসেছে, তাতে সেটি নিয়ে বৃহত্তর অর্থনীতিতে একটা দ্বন্দ্ব চলছে। বিতর্ক চলছে রাজনীতি বড়, না অর্থনীতি বড় কিংবা রাজনৈতিক স্বার্থ বড়, না অর্থনৈতিক স্বার্থ বড় এটি নিয়ে।
বৃহৎ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রেও দেখা যাচ্ছে যে ডোনাল্ড ট্রাম্প আসার আগে যত প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় এসেছেন, তাদেরও অর্থনৈতিক নীতি বা অন্য বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হতো। মার্কিনরা সরাসরি প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও বিতর্ক করে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা মুখোমুখি সরাসরি তর্কে অবতীর্ণ হন। কিন্তু এই শতকের চার দশক আগেও রাজনৈতিক বিষয়গুলো তর্কের বিষয় হতো। পরবর্তী সময়ে দেখা গেল অর্থনীতি ও রাজনীতির একটা মিশেল। কিছু রাজনৈতিক বিষয়ের সমালোচনা হতো, আর কিছু অর্থনৈতিক বিষয়ের সমালোচনা হতো। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে গত নির্বাচনে দেখা গেল হিলারি ক্লিনটনের পরিবর্তে জিতলেন ট্রাম্প। এর মূল প্রেরণা তার ব্যবসা আর অভিবাসীদের প্রতি পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গি; সেটিও মার্কিনদের কর্মসৃজন, নিজস্ব বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের স্বার্থে। রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় নীতি, কূটনীতি এগুলো আর সেখানে ততটা ধর্তব্যে নেই। এখন তিনি যা যা পদক্ষেপ নিচ্ছেন, সবই কিন্তু অর্থনৈতিক। যেমন চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ। বাণিজ্যযুদ্ধ আর কিছু নয়, এর অর্থনীতির ওপর ওর শুল্ক চাপানো, ওর অর্থনীতির ওপর