ভোরে ঘুম থেকে ওঠা কেন গুরুত্বপূর্ণ? আমরা যখন নতুন কোনো অভ্যাস তৈরির জন্য কাজ করা শুরু করি, তখন সেই কাজটি করার জন্য আমাদের প্রবল ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন হয়। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বলা হয়েছে নতুন একটি অভ্যাস গড়ে তুলতে ৬৬ দিন সময় লাগে। তারপর ওই কাজটি স্বয়ংক্রিয় হয়ে যায়। একটি কাজ অভ্যাসে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত সেটি করার জন্য আমাদের ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন হয়। অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলে আর ইচ্ছাশক্তির দরকার হয় না। তাই নতুন কোনো অভ্যাস শুরুর জন্য সকাল বেলাকে বেছে নেয়াই উত্তম।
আধুনিক কর্মব্যস্ত জীবনে আমরা বিভিন্ন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হই। হতাশা, বিষণ্নতা, মানসিক চাপ ইত্যাদি আমাদের মনে জীবন সম্পর্কে নেতিবাচক অনুভূতি সৃষ্টি করে। যখন আমরা মানসিক চাপের সম্মুখীন হই, তখন আমাদের শরীরে এড্রিনালিন ও কর্টিসল নামক হরমোন নিঃসরণ হয়। এ হরমোন প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে আমাদের সাহায্য করলেও অতিরিক্ত পরিমাণে নিঃসরণের ফলে শরীরে রোগব্যাধির জন্ম হয়। এড্রিনালিন হরমোন আমাদের রক্তচাপ বাড়ায় এবং কর্টিসল রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায়। যত বেশি পরিমাণে এসব হরমোন নিঃসরণ হবে আমাদের মাথাব্যথা, হজমের সমস্যা, হতাশা ও বিষণ্নতা, হূদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে।
অন্যদিকে আমাদের মধ্যে সুখের অনুভূতি জন্ম নেয় ডোপামিন ও সেরোটোনিন নামক হরমোনের মাধ্যমে। এগুলোকে সুখী হরমোনও বলা হয়। সূর্যের আলোয় আছে ভিটামিন ডি। এটি হাড় মজবুত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তা আমরা অনেকেই জানি। ভিটামিন ‘ডি’কে সানসাইন ভিটামিনও বলা হয়। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে আমাদের মস্তিষ্ক হতে সেরোটোনিন নিঃসরণ হয়, যা আমাদের মেজাজ উত্ফুল্ল রাখতে, প্রশান্ত ও একাগ্র হতে সাহায্য করে। অন্ধকারে আমাদের মস্তিষ্ক হতে মেলাটোনিন নিঃসরিত হয়, যা আমাদের ঘুমাতে সাহায্য করে। সূর্যের আলো থেকে আমাদের শরীর বঞ্চিত হলে সেরোটোনিন নিঃসরণের হার কমে যায়, এতে আমরা হতাশা ও বিষণ্নতায় ভুগি। ভোরের সূর্য, আবিররাঙ্গা আকাশ, পাখির কলকাকলি, নির্মল বাতাস আমাদের শরীরে সেরেটোনিন নিঃসরণ ঘটায় ফলে আমরা মানসিক প্রশান্তি অনুভব করি।