লোকসানে ধুঁকছে নওগাঁ বিসিকের শিল্প-কারখানা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি নওগাঁ

দুই দশক আগে চালু হলেও এখনো গ্যাসের সংযোগ দেয়া হয়নি নওগাঁ বিসিক শিল্পনগরীতে। অবকাঠামো সমস্যা দীর্ঘদিনের। ব্যবসায় ধারাবাহিক লোকসান দেয়ায় উৎপাদন বন্ধ করেছে কিছু শিল্প ইউনিট। বাজার মন্দার কারণে নিয়মিত উৎপাদনে নেই একটিও। নতুন উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দেয়ার মতো প্লটও নেই। এভাবে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়ে রয়েছে নওগাঁ বিসিক।

নওগাঁ শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে শালুকা ও মশরপুরে ১৫ দশমিক ৭৫ একর জমিতে বিসিক শিল্পনগরিটি স্থাপন করা হয় ২০০০ সালে। ওই সময় ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত অবকাঠামো এখন জরাজীর্ণ। ৮২টি প্লটের মধ্যে কাগজে-কলমে ৮১টি বরাদ্দ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে মোট ৫৩টি শিল্প ইউনিটের মধ্যে ৫০টি সচল বলে জানিয়েছেন শিল্পনগরীর কর্মকর্তা।

সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শিল্পনগরীর সড়কগুলো খানাখন্দে ভরা। ড্রেনেজ ও পয়োনিষ্কাশন প্রায় ভেঙে পড়েছে। তিনটি শিল্প ইউনিটকে রুগ্ণ ঘোষণা করা হলেও কাগজে-কলমে সচল অনেক ইউনিটই গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া প্লট বরাদ্দ নিয়ে দোতলা আবাসিক ভবন নির্মাণ করেছে বারিক ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

বিসিকের উদ্যোক্তারা বলছেন, বিসিকে এখনো গ্যাস সরবরাহ লাইন নেই। ফলে কারখানা চালাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় লোকসান হচ্ছে। অনেক উদ্যোক্তা ঋণখেলাপি হয়ে গেছেন। অনেকে শিল্প ইউনিট বন্ধ করে দিচ্ছেন। যেসব কারখানা চালু রয়েছে তাদের অবস্থাও নাজুক।

রিয়া-পিয়া ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক সুকুমার দাস বলেন, গ্রাহকদের কাছে অনেক টাকা বাকি পড়ে যাওয়ায় পুঁজি সংকটে আছি। বেশ কিছুদিন ধরে ইউনিট বন্ধ রেখেছি। ব্যাংকের ঋণ নিয়েও খুব অশান্তিতে আছি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বগুড়ায় গ্রিডলাইনের গ্যাসে উৎপাদিত পণ্যের সঙ্গে নওগাঁয় কয়লা বা বিদ্যুতে উৎপাদিত পণ্য প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। এ কারণে এখানে কিছু অটো বয়লার আর একটি লোহার রড তৈরির ছোট কারখানা ছাড়া কোনো মাঝারি বা ভারী শিল্প গড়ে ওঠেনি।

এদিকে প্লট বরাদ্দ নিয়ে আবাসিক ভবন নির্মাণের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে বারিক ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লেক্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুল বারী বলেন, আমার সঙ্গে শত্রুতা করে এ গুজব ছড়ানো হয়েছে। এসি লাগানো হয়েছে আমার অফিস ও ম্যানেজারের থাকার কোয়ার্টারে। আর দোতলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন রয়েছে। তবে মঙ্গলবার বিসিকের পক্ষ থেকে তাকে চিঠি দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে বিসিক শিল্পনগরীর উপব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মো. শামীম হোসেন জানান, ইঞ্জিনিয়ার বারীর আবাসিক ভবন সরাতে লিখিতভাবে বলা হয়েছে। এর পরও না সরালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিসিকের বর্তমান অবকাঠামোর বিষয়ে তিনি বলেন, রাস্তা সংস্কারের অনুমোদন হয়ে গেছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে। এছাড়া নওগাঁ বিসিকের জন্য ১০০ একর জমির প্রস্তাবনা প্রাথমিকভাবে পাঠানো হয়েছে।

বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণের জন্য প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো. হারুন-অর রশিদ জানান, অনুমোদন পেলে দ্রুত কাজ শুরু হবে। এতে আরো বেশি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন