সম্পদ করের প্রয়োজনীয়তা এবং চলমান বিতর্ক

মাইকেল স্পেন্স

সম্পদের ওপর কর আরোপের প্রস্তাব নতুন নয়; যুক্তরাষ্ট্রে এখন তা আবার জন-আলোচনায় নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে। স্থিতভাবে বেড়ে চলা আয় ও সম্পদবৈষম্যের কারণে সামনে আসছে সামাজিক ও নৈতিক নানা উদ্বেগ। এমন নয় যে সম্পদ-আয়বৈষম্য শুধু নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করছে, এমনকি এটি সম্পদবানদের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মধ্যেও অসন্তোষ সৃষ্টি করছে। অবনতিশীল সামাজিক গতিশীলতার পাশাপাশি এ প্রবণতা রাজনৈতিক মেরুকরণে ভূমিকা রাখছে, যা প্রকারান্তরে দুর্বল ও ভ্রমাত্মক নীতি পছন্দের মতো নেতিবাচক জনবিরোধী পরিস্থিতি সংঘটনে সহায়তা করছে। ইতিহাসের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি, বর্ধিষ্ণু অসমতা ও তীব্রতর হওয়া সামাজিক ও রাজনৈতিক মেরুকরণ নাটকীয় বিভিন্ন সহিংস ঘটনা (পরিণাম) ঘটাতে পারে।

সৌভাগ্যক্রমে আয় ও সম্পদবৈষম্যের ব্যাপকতা, মাত্রা, ইতিহাস ও বাঁকবদল নিয়ে চমত্কার সব গবেষণা হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন ধরনের করসংক্রান্ত নীতি সাড়ার চাহিদা থাকলে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের ভিত্তিতে আমাদের নির্ধারণের উপায় থাকবে কোন ধরনের পদক্ষেপগুলো সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে।

প্রেসিডেন্সিয়াল নমিনেশনের ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থীদের কথা শুনলে মনে হবে যে প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন সম্পদ-কর প্রবক্তাদের সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে। বার্নি সেন্ডারসযিনি বলেছেন, ‘বিলিয়নেয়ারদের অস্তিত্ব থাকাই উচিত নয়’—মনে হয় চরম অসমতাকেঅবমাননাকর মনে করেন। তবে অন্যরা আয় ও সম্পদ বণ্টনের নিচের অর্ধাংশ বা দুই-তৃতীয়াংশের কাছে কী অর্থ বহন করে, তাতে অধিক দৃষ্টি দেয়। উদাহরণস্বরূপ, এলিজাবেথ ওয়ারেন সামাজিক সুরক্ষা ও অন্য সেবাগুলোর উচ্চাকাঙ্ক্ষী সম্প্রসারণের ব্যয় নির্বাহে সম্পদের ওপর কর আরোপ করতে চায়।

সম্পদ কর আবশ্যিকভাবে এমন এক কর, যা বিনিয়োগ রিটার্ন কমায়। সম্পদের ওপর ৩ শতাংশ কর বিনিয়োগের প্রাক-কর রিটার্ন ১০ থেকে ৭ শতাংশ হ্রাস করে। ফলে ওইসব রিটার্ন আয়ে রূপান্তর করা হলে দেখা যাবে যে বিনিয়োগ রিটার্নের ওপর ৩০ শতাংশ কর পরিশোধ করতে হবে। অবশ্য সেই বিবেচনায় ৫ শতাংশ প্রাক-কর রিটার্নের ওপর একই কর আরোপ ৬০ শতাংশ করের সমতুল্য হবে; যেখানে ২০ শতাংশ প্রাক-কর রিটার্নের ওপর এটি হবে ১৫ শতাংশ করের সমান। এটি খুব বড় পার্থক্য। এসব উদাহরণ থেকে দেখা যায়, সম্পদ কর স্থির বা অপরিবর্তনীয় থাকলে আনুপাতিকভাবে বিনিয়োগ রিটার্নের ওপর করের বিস্তৃতি-ব্যাপকতা কমে, যেহেতু প্রাক-কর রিটার্ন বাড়ে।

অধিকন্তু, সম্পদবান ব্যক্তিদের সাধারণভাবে বিভিন্ন সম্পদ শ্রেণীর একটি বৃহত্তর মাত্রায় প্রবেশাধিকার থাকে, যার  অনেকটাই অতরল সম্পদ (ইলিকুইড অ্যাসেট) বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক নিষেধাজ্ঞা ও ইলিকুইডিটি প্রিমিয়ামের কারণে এসব সম্পদ শ্রেণীর ওপর প্রাক-কর রিটার্ন বেশি হতে পারে। এক্ষেত্রে ৫০০ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের সম্পদের ওপর ২ শতাংশ সম্পদ কর আরোপ এবং ১ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের সম্পদের ওপর ৩ শতাংশ কর (ওয়ারেনের প্রস্তাব অনুযায়ী) আরোপ করলে তা খুব একটা বেশি হবে না। ৫০০ মিলিয়ন ডলারের সম্পদের সমমূল্যের একটি বেঞ্চমার্ক ব্যয় করার জন্য অধিকাংশ মানুষের সামর্থ্য-সক্ষমতা সীমায়িত করবে না। উপরন্তু তা উচ্চতর রিটার্নের তরল সম্পদে (লিকুইড অ্যাসেট) বিনিয়োগে তাদের সুযোগ দেবে, যার জন্য বিনিয়োগ রিটার্নের ওপর আরোপিত ক্রমবর্ধমান কর আপেক্ষিকভাবে কম হবে। 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা জরুরি। পরিশোধের সময় (ডেফারেল পিরিয়ড) বাড়ায় বিদ্যমান ব্যবস্থার অধীনে বিনিয়োগ আয়ের ওপর কার্যকর কর লক্ষণীয়ভাবে কমে আসে। সম্পদ বা অ্যাসেটে ডোনেট করলে শেয়ার ধারণে গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা সম্পদবান ব্যক্তিরা দীর্ঘ সময় এমনকি অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত ক্যাপিটাল গেইন বাস্তবায়ন বা নগদায়ন প্রলম্বিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, নগদায়িত বিনিয়োগ আয়ের ওপর যদি ৩০ শতাংশ কর আরোপিত হয়, সম্পদের প্রাক-কর রিটার্ন যদি ১৫ শতাংশ হয় এবং ক্যাপিটাল গেইনের বাস্তবায়ন যদি ২৫ বছরের জন্য বিলম্বিত হয়, তাহলে বিনিয়োগ রিটার্নের ওপর কার্যকর কর আসে মাত্র ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। ২৫ বছরের প্রলম্বিত সময় (ডেফারেল) নিজ মূল্য থেকে এক-তৃতীয়াংশ কর হার কমায় এবং কর-পরবর্তী সম্পদের প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার সুযোগ করে দেয়।

এটা পরিষ্কার, কার্যকর করহারের ওপর পরিশোধের প্রলম্বিত সময়ের খুব বড় প্রভাব রয়েছে। এটি ধনী ও পরিমিতভাবে সচ্ছলদের (ধরুন শীর্ষ ৫ শতাংশ) মধ্যে স্বাভাবিক চর্চায়ও পরিণত হতে পারে। অবশ্য সম্পদ কর মুলতবি রাখা কঠিন, কারণ নগদায়িত বাজারমূল্য (রিয়েলাইজড মার্কেট ভ্যালু) না থাকা বিপুল পরিমাণ সম্পদের ওপর এর শেয়ারধারণ সহজ নয়।

বাস্তবে সম্পদ কর সম্ভবত কোনো সম্পদের আসল চলতি মূল্যের আনুমানিক হিসাব করে আরোপ করা হবে এবং সেটি করা হবে অধিক সাম্প্রতিক বিনিয়োগগুলোয় একটি পরিমিত ছাড় দিয়ে। আবার বিনিয়োগ রিটার্নের ওপর কর আরোপ নগদায়িত গেইনের ওপর অব্যাহত থাকবে। যেহেতু সম্পদ কর কম প্রলম্বনযোগ্য (ডেফারেবল) এবং এর প্রভাব (ব্যস্তানুপাতিকভাবে) প্রাক-কর রিটার্নের ওপর নির্ভর করে, সেহেতু এর অর্থ হলো একটি পরিমিত সম্পদ কর বিদ্যমান ব্যবস্থার চেয়ে বিনিয়োগ রিটার্নের ওপর কেবল সামান্য বেশি কার্যকর কর হার প্রয়োগ করবে।

এদিকে এখনো যারা নতুন সম্পদ করের বিরোধিতা করছেন, তারা এর বিরুদ্ধে কিছু যুক্তি দেন। এর মধ্যে একটি হলো, একবার সম্পদ কর কার্যকর বা প্রয়োগ হলে সময়ের আবর্তনে তা বাড়বে। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রে আয়কর হারে নিম্নমুখী বাঁকবদল বোধহয় এ যুক্তি সমর্থন করে না।

তাদের দ্বিতীয় যুক্তি হলো, সম্পদ করের কারণে উৎপাদনশীলতা, প্রবৃদ্ধি এবং চাকরি-কর্মসংস্থান ব্যাহত হবে। তবে সত্যিকারভাবে আমরা কি বিশ্বাস করব যে খুব মূল্যবান কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা উদ্যোক্তারা তাদের প্রচেষ্টা বাদ দেবেন, যদি তারা জানেন যে কর-পরবর্তী সম্পদ (ধরা যাক ১২ বিলিয়ন ডলার থেকে ৮ বিলিয়নে) কমে আসবে? বাস্তবতা হলো, যে মাত্রায় (১ বিলিয়ন ডলারের উপরে) প্রান্তীয় সম্পদ অর্জনের বিষয়টি যে পর্যায়ে আলোচিত হচ্ছে, তার সঙ্গে ভোগ ও জীবনযাপন পদ্ধতির খুব একটা যোগসূত্র নেই। সম্পদ কর মাত্রাকে সমন্বয় (অ্যাডজাস্ট) করবে, কিন্তু এটি সার্বিক অবস্থান বা র্যাংকিংকে পরিবর্তন করবে না।

চূড়ান্তভাবে কেউ কেউ তর্ক তোলেন যে বিত্তশালীদের সম্পদ নিজেদেরই রাখতে সমর্থ হওয়া উচিত। কারণ তারা নিজেরাই তা অর্জন (উপার্জন) করেছেন। কিন্তু এ যুক্তি বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে যারা সফল হন, তারা বৃহত্তর ব্যবস্থার সুফলভোগী; যা তাদের বিত্ত অর্জনের উপায় এবং সুযোগ প্রদান করে।

অসমতা বিষয়ে বিতর্ক বেড়ে চলায় পরিমিত সম্পদ কর আরোপের পক্ষে ওকালতি করতে সম্পদবান ব্যক্তিদের একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী আবির্ভূত হয়েছে। তাদের মত হলো, এটি এমনভাবে প্রবর্তন করতে হবে,

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন