লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি: মানবীয় শিল্প-অবতার

সিলভিয়া নাজনীন

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি শিল্পকলার ইতিহাসের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী হিসেবে পরিচিত। তিনি রেনেসাঁ বা ধ্রুপদী যুগের এক বহু গুণান্বিত মেধাবী ব্যক্তিত্ব। শিল্পক্ষেত্রে বিচরণের পাশাপাশি তার মানবদেহের অঙ্গ ব্যবচ্ছেদ, দৈহিক গঠনতন্ত্র সম্পর্কিত বিদ্যা আর ভূতত্ত্ববিদ্যার প্রতি আকর্ষণ ছিল। এছাড়া মনুষ্য নির্মিত উড্ডয়ন প্রক্রিয়ায় তার বিশেষ আগ্রহ সম্পর্কে জানা গেছে। লিওনার্দোর অন্য সব ধরনের আগ্রহ বা জ্ঞানকে দূরে সরিয়ে তিনিশিল্পীলিওনার্দো হিসেবেই প্রকৃত পরিচিতি পেয়েছেন। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, ড্রইংয়ে অসামান্য দক্ষতা, নতুন করণকৌশলের আবিষ্কার আর শিল্পের প্রতি একনিষ্ঠ একাগ্রতা। কিন্তু লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চিকেশিল্পীশব্দের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে তার জীবনযাপন, চর্চা, জ্ঞান, আকাঙ্ক্ষা, সফলতা-ব্যর্থতা, উদ্ভাবনসবকিছু সমন্বয় করে চিন্তার যোগসূত্রে পাঠ করা। লিওনার্দো ইতালির ফ্লোরেন্সের অদূরে তুসকান অঞ্চলে ভিঞ্চি নামের ছোট্ট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ১৪৫২ সালে। তার মা ক্যাটেরিনা দ্য মিও লিপ্পি এবং বাবা স্যর পিয়েরো দ্য ভিঞ্চি। শৈশব সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায়নি, বরং কৈশোরে তার ছবি আঁকার প্রতি আকর্ষণ দেখেই তার বাবা আন্দ্রে দেল ভেরোচ্চিওর (১৪৩৫-১৪৮৮) কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। ভেরোচ্চিও একজন অসামান্য শিল্পী ভাস্কর হিসেবে সমাদৃত ছিলেন। ষোলো শতকে শিল্পী শিল্প ইতিহাসবিদ জর্জিও ভাসারির অনুপ্রেরণায় লিওনার্দোর বাবা ছেলের চিত্রকর্ম নিয়ে ভেরোচ্চিওর কাছে গিয়েছিলেন। ভেরোচ্চিও ভীষণই প্রাণোচ্ছল ব্যক্তি এবং লিওনার্দোর কৈশোরের ড্রইং দেখেই বিনা বাক্য ব্যয়ে তার স্টুডিওতে ভর্তি করে নিয়েছিলেন। তার স্টুডিও মূলত শিল্প শিক্ষা কেন্দ্র এবং ডিজাইন স্টুডিও হিসেবে ফ্লোরেন্সে সুপরিচিত ছিল। ভেরোচ্চিওর তত্ত্বাবধানেই লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি একজন পরিপূর্ণ শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ষোলো শতকে শিল্প-সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল হিসেবে ফ্লোরেন্স বিবেচিত ছিল। আর ভেরোচ্চিওর স্টুডিওতে তত্কালীন গুণী লোকজন আর শিল্পীরা সমাগত হতেন। স্টুডিওতেই লিওনার্দো ড্রইং থেকে শুরু করে বিভিন্ন কারিগরি জ্ঞান লাভ করেন। শিল্প ইতিহাসবিদ ভাসারির বিবরণে জানা যায়, লিওনার্দো ভেরোচ্চিওকেব্যাপ্টিজম অব ক্রাইস্টচিত্রকর্মে সাহায্য করেছিলেন। ছবিতে লিওনার্দোর অঙ্কন দক্ষতা পরিলক্ষিত হয় এবং তার নিখুঁত নিরীক্ষা সর্বজনবিদিত হয়। ভেরোচ্চিও চিত্রকর্মের অঙ্কনশৈলীর দক্ষতায় লিওনার্দোর প্রতি ভীষণ অভিভূত হয়ে পড়েন। মাত্র ২০ বছর বয়সে লিওনার্দোগিল্ড অব সেন্ট লুক’-এর পরিচালক হওয়ার যোগ্যতাও অর্জন করেন।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি সময়ের থেকে এগিয়ে যাওয়া মানুষ ছিলেন। তার মেধা-মনন দক্ষতা মানবসভ্যতাকে দিয়েছে নতুন যুগের সন্ধান। তিনি একই সঙ্গে ছবি এঁকেছেন, ভাস্কর্য বানিয়েছেন। মানবশরীর নিয়ে গবেষণা করেছেন, স্থাপত্যবিদ্যাসহ অন্যান্য বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-পদার্থবিদ্যা-জীববিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ে পারদর্শিতার আশ্চর্য সমন্বয় দেখিয়েছেন। দ্বিমাত্রিক ছবিতে গভীরতা নির্মাণ, পরিপ্রেক্ষিতের বিভিন্ন বিবরণ, অ্যারোপ্লেন-হেলিকপ্টার-প্যারাস্যুটের আবিষ্টার, শারীর শবচ্ছেদবিদ্যা, জীবাশ্ম, মানবদেহের হৃৎপিন্ড-ফুসফুস আর জরায়ুর কার্যকারিতা, ভ্রুণের ক্রমবিকাশ সম্পর্কে তিনিই প্রথম ধারণা দিয়েছেন। এছাড়া ভিঞ্চি জলবিদ্যা বা হাইড্রোলিকস প্রযুক্তি, সেচ প্রণালি, নগর বিন্যাস,

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন