জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা স্তরের পরীক্ষায় নিম্নস্তরের প্রশ্ন

মূল্যায়ন কাঠামো অনুসরণে প্রশ্নপত্রের মান নিশ্চিত করা জরুরি

দেশে উচ্চশিক্ষার পরিমাণ সংখ্যা বৃদ্ধি হলেও কাঙ্ক্ষিত মান বৃদ্ধি কতটুকু হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন বিদ্যমান। গুণগত মানের দিক থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র হতাশাজনক। বিশ্ববিদ্যালয়টির অধীনে রয়েছে দেড় হাজারের বেশি কলেজ। প্রতি বছর ভর্তি হচ্ছে লাখো শিক্ষার্থী, পাস করে বের হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। অথচ প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে তাদের গুণগত মান নিয়ে। সম্প্রতি দৈনিক বণিক বার্তায় প্রকাশিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, উচ্চস্তরের শিক্ষা কার্যক্রমে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে বিশ্নেষণধর্মী, মূল্যায়নধর্মী সৃজনশীলতার মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পাচ্ছে না। বরং উচ্চশিক্ষা স্তরের পরীক্ষায় নিম্নস্তরের প্রশ্ন দিয়ে দায়সারাভাবে চালানো হচ্ছে পরীক্ষা কার্যক্রম। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোয় উঠে এসেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়া উচ্চশিক্ষা স্তরের পরীক্ষাগুলোর প্রশ্নপত্রের ৮০ শতাংশই প্রণয়ন হচ্ছে লোয়ার অর্ডারের বিষয়বস্তু দিয়ে, যা শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন তাদের গুণমান অর্জনের অন্তরায়। এটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং উদাসীনতারই চিত্র তুলে ধরে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান যে দেশের সব সরকারি কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে, তা অস্বীকারের উপায় নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের প্রতিবেদনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রিধারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন প্রভৃতি কাজ, যা মানসম্পন্ন শিক্ষার নিয়ামক, তার কোনোটিই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিজে পরিচালনা করে না। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি যতটা না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, তার চেয়ে বরং জাতীয় পরীক্ষা বোর্ড। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে কেবল পরীক্ষা গ্রহণ এবং ফল প্রকাশ ছাড়া আসলে তেমন কিছু করে না। সারা দেশে পরীক্ষা গ্রহণ ফল প্রকাশ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি নির্ভর করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কলেজের শিক্ষক এবং বিষয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরীক্ষা পদ্ধতি ঢেলে সাজানো জরুরি। প্রয়োজন কাঠামোগত পরিবর্তন এবং নতুন বিন্যাসের মাধ্যমে একটি বিকেন্দ্রীভূত ব্যবস্থার উদ্ভাবন।

গ্রন্থগত, প্রায়োগিক বা ব্যবহারিক শিক্ষা লাভ না করেই লাখ লাখ শিক্ষার্থী প্রতি বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষার সনদ লাভ করে দেশে শিক্ষিত বেকারের মিছিল দীর্ঘায়িত করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদধারী অনেকে বিসিএসসহ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন বটে, কিন্তু পাস করা শিক্ষার্থী সংখ্যার বিচারে তা খুবই নগণ্য। উচ্চশিক্ষা স্তর হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বেশির ভাগই লোয়ার অর্ডারের। তাই শিক্ষার্থীরা তাদের অর্জিত জ্ঞান নতুন নতুন প্রেক্ষাপটে কীভাবে প্রয়োগ করবেন, তা যাচাই হচ্ছে না। দক্ষতা যাচাই না করে নিম্নমানের প্রশ্নপত্রে সহজেই পাসের সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে পাস করে বের হয়েও বেকার থাকছেন অনেকেই। এক্ষেত্রে মূল্যায়ন কাঠামো অনুসরণের মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের গুণগত মান নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। একই সঙ্গে আরো অ্যাসেসমেন্ট ফ্রেমওয়ার্কে গুণগত মানবিষয়ক দিকনির্দেশনা দিতে হবে। নম্বর বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রায়োগিক জ্ঞানকে গুরুত্ব দিতে হবে। গুটিকয়েক অধ্যায় থেকেই বেশির ভাগ প্রশ্ন করার বিষয়েও অভিযোগ রয়েছে। ফলে পূর্ণ সিলেবাস শেষ না করে হাতেগোনা কয়েকটি অধ্যায় পড়েই পাসের সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। সহজে পাস করা এসব শিক্ষার্থী কোনো না কোনোভাবে চাকরির বাজারে প্রবেশ করলেও কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা প্রদর্শনে ব্যর্থ হচ্ছেন এবং ঝরে পড়ছেন। 

প্রতি বছর কয়েক লাখ শিক্ষার্থী ভর্তিযুদ্ধে লিপ্ত হন এবং সবচেয়ে মেধাবীরা দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি হন। বাকিরা প্রধানত ভর্তি হন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন