পড়াশোনার পাশাপাশি সফল উদ্যোক্তা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা শহরের গড়েরকান্দা মহল্লার কলেজছাত্রী রাবেয়া খাতুন। বিএ পড়ছেন। পাশাপাশি একজন সফল উদ্যোক্তা। একটি মফস্বল শহরে তিনি প্রতি মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করছেন।

রাবেয়া খাতুন জানান, ২০১৩ সালে একটি এনজিওতে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৫ সালের দিকে নিজেই শুরু করেন ন্যাপকিন তৈরি ও বিক্রি।কিশোরী নামে একটি ব্র্যান্ড তৈরি করেছেন তিনি। জেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও কসমেটিকসের দোকানে বিক্রি করেন।

একটি ভাড়া বাড়িতে গড়ে তোলা ছোট্ট কারখানায় রাবেয়া প্রতি মাসে দেড় হাজার প্যাকেট ন্যাপকিন তৈরি করেন। প্রতি প্যাকেট ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেন তিনি। তাকে সহযোগিতা করেন ছয়জন প্রশিক্ষিত কর্মী। তাদের প্রত্যেককে মাসে ৪ হাজার টাকা বেতন দেন। ৪ লাখ টাকা বিনিয়োগে ব্যবসা শুরু করে এখন প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভ থাকে তার।

রাবেয়া বলেন, তার কর্মী ছয়জন মেয়ে ও শিক্ষার্থী। তারা পড়ালেখার পাশাপাশি উপার্জন করছেন।

শুধু রাবেয়া খাতুনই নন, সাতক্ষীরায় এখন অনেক শিক্ষিত নারীই স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। স্থানীয় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা উদ্যোক্তা হচ্ছেন। অনেকেই এরই মধ্যে আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে পেরেছেন।

কালিগঞ্জ উপজেলার মহত্পুর গ্রামের গৃহবধূ শম্পা গোস্বামী জানান, গত বছরসেফটি নামে একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন উৎপাদন কারখানা করেছেন। উদ্যোগটি শুরু করার আগে তিনি নিজে ও এলাকার ১০ জন অসচ্ছল নারীসহ প্রশিক্ষণ নেন। এখন তার কারখানায় ১১ জন নারী কাজ করেন। মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার প্যাকেট ন্যাপকিন উৎপাদন হচ্ছে তার কারখানায়। এসব ন্যাপকিন স্থানীয় বাজার ছাড়াও অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতি প্যাকেট সেফটি ন্যাপকিন পাইকারি ২৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন বলে জানান শম্পা গোস্বামী।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের সদ্য বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক নাজমুন নাহার সরকার বলেন, ‘নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও কিশোরী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রস্তুত ও বিতরণ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পরীক্ষামূলক এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৩২টি জেলায় স্থানীয় নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের মাধ্যমেই তৈরি করা হচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে মাসিককালীন কিশোরীরা এক অনাকাঙ্ক্ষিত সংকটে পড়ে। তারা না পারে বলতে, না পারে ন্যাপকিন চাইতে। অনেক সময় স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, অনেকে ঝরে পড়ে। এজন্য মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর পরীক্ষামূলক বিনা মূল্যে ন্যাপকিন বিতরণের এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এতে নারীদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে যেমন ক্ষমতায়ন সম্ভব, তেমনি কিশোরীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা সাধারণ সম্পাদক ও নারী উদ্যোক্তা জ্যোত্স্না দত্ত এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির এ প্রশিক্ষণ আরো বৃহৎ পরিসরে চালু করা সম্ভব হলে এ খাতে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির নবদিগন্ত উন্মোচিত হবে। পাশাপাশি নতুন নতুন নারী উদ্যোক্তাও তৈরি হবেন। কর্মসংস্থান হবে বহু নারীর।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন