আমার হাতে কালি মুখে কালি

সাগুফতা শারমীন তানিয়া

এই যে আমরা ইস্কুলে শিখেছিলামঅসির চেয়ে মসী বড়’, এই মসী বা কালির গল্পের শুরু কোথায়? কয়লা গুঁড়ো দিয়ে কালি বানাতো কারা? খাগের কলমে লিখতো কারা? কালির মূলকথা তোদ্রাবক আর রঞ্জক, একটি কেমিক্যাল কম্পোজিশন, তাকে বাহন করে লেখা হয়েছে মানুষের হাসি-কান্না-রক্তপাতের বিপুল ইতিহাস। কালি আর কালির দোয়াত নিয়ে লিখতে বসেছি, আর আমার কানে বাজছেনবজন্মসিনেমায় ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের গান— ‘আমি আঙুল কাটিয়া কলম বানাই চক্ষের জলে কালি কাটাকুটি করে কলম বানাবার প্রসঙ্গে মনে পড়ছে মেয়েস্কুলে সেকেন্ডারি বিভাগে উঠবামাত্র শুরু হয়ে যাওয়া রক্ত দিয়ে লেখা চিঠি পাবার কানাকানি...সত্যিই কি লোকে রক্ত দিয়ে চিঠি লিখবার মতো উন্মাদ হতে পারে? শুকনো রক্তের বোঁটকা গন্ধটা প্রেমিকা অব্দি পৌঁছিয়ে লাভ কী! রক্তেই তো লেখা হয়ে যায় কত নাম, শতনাম, আবার রক্তপাত ঘটিয়ে লিখবার কী আছে!

শ্রীপান্থ লিখেছিলেন কোম্পানি আমলের জন-সাহেবদের কেচ্ছা, সত্যিকারের সোনার জলে ছাপানো চিঠি পাঠাবার ইতিহাস, উপনিবেশ থেকে অপরিমেয় অর্থ শোষণ করে থৈ না পাওয়ার কলঙ্কের ইতিহাস।অক্ষয় মালবেরিতে মনীন্দ্র গুপ্ত লিখেছিলেন এক তাড়া তালপাতায় কঞ্চির কলমে লিখবার কথা, কাঠকয়লা শ্লেটপাথরে ঘষে ঘষে তৈরি করা কালির কথা, পরে গভর্নমেন্ট হাই স্কুলের ডেস্কে ডেস্কে দপ্তরির এসে দোয়াতে ঘন কালি দিয়ে যাবার কথা। ফরাসি দেশে কাঠের ডেস্কে দোয়াত রাখবার মতো খোদাই করে রাখা হতোএমন ছবি দেখেছি, তা সেখানে কালি থাকতো সরাসরি নাকি দোয়াত কে জানে! আমাদের ইস্কুলের কাঠের ডেস্কে এমন দোয়াতের গর্ত ছিল।

কালির দোয়াত শব্দটা ভাবলেই আমার নাকে এসে লাগে পেলিক্যান কালির দোয়াত খুলবার পরে যে গন্ধটা পেতাম, সেটা। নীল আর খয়েরি মিলিয়ে তৈরি কালো কালি, লিখবার কিছুদিন পরে সেই কালির লেখা হয়ে যেত কালচে সোনালি, আর আমি এই কালি দিয়ে শুরু করেছিলাম আমার প্রথম ইংক-ড্রয়িং, আচ্ছামতো কালির কলম দিয়ে ছবি এঁকে তাতে কয়েকটি জলভরা তুলির আঁচড় দিলেই কেমন করে জলের তোড়ে আলাদা হয়ে যেত পেলিক্যান কালির সেই নীল আর খয়েরি। নেহাত অঘা-অ্যামেচার আর্টিস্টের কাজকেও তোফা শিল্পিত লাগতো এতে। ব্লটিং পেপারের নাম শুনেছি আমি, চোখে দেখিনি। তখনো চোষকাগজ পাওয়া যেত প্রচুর, খুলনার কাগজ, তাতে কালির কলমে লেখা চলতো না, শিসকলমে লিখতে হতো।হিরোছিল নীলকালির দোয়াতের নাম। দোয়াতে জোনাকি ভরে রাখবার গল্প আমি কেবল শুনেছি, দেখিনি কখনো। দোয়াত দুরকমের এইই জানি, একটা ইংকপট, আরেকটা ইংকওয়েল। প্রাথমিক ইংকওয়েল নাকি ছিল একেবারে সাদামাটা, হাতের মুষ্টির আকৃতির পাথরে সামান্য গর্ত করা যাতে গুঁড়োনো পিগমেন্ট আর সলভেন্ট মেশানো যায়, এই পাথর হিসেবে পরে সোপস্টোন, মার্বেল, অনিক্স ইত্যাদি কেতাদুরস্ত পাথর ব্যবহূত হতে লাগলো, দর্শনধারী পাথরের সাথে

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন