জেহন্দর্ ও লালকূয়র

শ্রীবীরেশ্বর গোস্বামী

যখন এই চতুরা সুন্দরী ধূমকেতুর মত প্রৌঢ় জেহন্দর্ শাহের জীবনাকাশে উদিত হইলেন, তখন মোগল সাম্রাজ্য ধ্বংসোন্মুখ। তৈমুরলঙ্গ যে রাজ্যের সূচনা করিয়াছিলেন, বীরকেশরী উদার হূদয় বাবর যে রাজ্যের ভিত্তি স্থাপনা করিয়াছিলেন, মোগলশ্রেষ্ঠ মহামতি আকবর স্বীয় অপূর্ব্ব প্রতিভাবলে যে বিশাল সাম্রাজ্যের আয়তন বর্ধিত ভিত্তিমূল সুদৃঢ় করিয়াছিলেন, তখন সে জগত্প্রথিত বিশাল সাম্রাজ্য তাহার অক্ষম ইন্দ্রিয়পরায়ণ উত্তরাধিকারীদের হস্তে ধ্বংসের পথে অগ্রসর হইতেছিল। সম্রাট আওরঙ্গজেব সঙ্কীর্ণ অনুদার ভেদনীতি ধর্ম্মান্ধতায় পিতামহের অটল সিংহাসনের সুদৃঢ় স্তম্ভরাজি ক্ষয়িতমূল করিয়াছিলেন বটে। কিন্তু তখনও মোগলাধিকৃত ভারতের সর্ব্বত্র মোগলের দৃঢ় শাসন অনুভূত হইত। কিন্তু ইহার পরবর্ত্তী মোগল সম্রাটেরা কেবল কলচালিত পুত্তলিকার ন্যায় মন্ত্রীদের হস্তের ক্রীড়নকমাত্র ছিলেন। ঘৃণিত পানাসক্তি, কুিসত সংসর্গ জঘন্য ইন্দ্রিয় পরায়ণতা তাহাদিগকে সিংহাসন হইতে বিলাসমন্দিরে বিলাসমন্দির হতে ঘাতকের নির্মম অস্ত্রসমীপে নীত করাইত! এরূপ একটা অক্ষম দুর্বৃত্ত মোগল সম্রাটের জীবনের চিত্র এই ক্ষুদ্র প্রবন্ধে প্রদত্ত হইবে।

         যে উপায়ে আওরঙ্গেজবের পৌত্র সম্রাট, বাহাদুর শাহের তৃতীয় পুত্র মৈজুদ্দীন জেহন্দ শাহ, চতুর কুশলী মন্ত্রী জুলফিকারের সাহায্যে অগ্রজ অনুজদের রক্তে সিংহাসনের পথ পরিষ্কার করিয়াছিলেন ক্ষুদ্র প্রবন্ধে সেসব বর্ণনা করা আমাদের অভিপ্রেয় নয়। আমরা যে সময়ের কথা বলিতেছি, তখন তিনি সিংহাসনাধিরূঢ়। প্রৌঢ় জুলফিকার তখন রাজ্যে সর্ব্বেসর্ব্বা। সম্রাট কেবল তাহার হস্তচালিত ক্রীড়াপুত্তলী মাত্র। ঐতিহাসিক কাফি খাঁর কথায় তখনভাট নকীব নটনটাদেরই মরসুম পড়িয়াছিল।এই পাপোন্মত্ত ইন্দ্রিয়পরায়ণ নৃপতির শাসনপ্রণালী সভাসদবর্গকে বিদ্রূপ করিয়া কাফি খাঁ বলিয়াছেন যেযেরূপ অত্যাচার জঘন্য ইন্দ্রিয় পরায়ণতার সময় পড়িয়াছে, তাহাতে কাজি মুফতিদিগকে কোরান কলমা ছাড়িয়া সাকী সিরাজীরই বা উপাসনা করিতে হয়।সম্রাট সিংহাসনে আরোহণ করিয়াই তাহার ধাত্রীপুত্র কোশলতাস খাঁকে (?) ‘খাঁ জহাঁ বাহাদুরখেতাব দিয়া রাজ্যের মধ্যে একটি প্রধান পদে উন্নীত করিলেন।সৈয়র-উল-মুতাক্ষরীণ্ইতিহাস গ্রন্থের ভাস্বর লিপিকার গোলাম হোসেন লিখিয়াছেন, যে রমণী সম্রাটের বিশেষ অনুগ্রহভাগিনী ছিলেন, তাহার নাম লালকূয়র।

লালকোঙর বা লালাকূয়র বা লালকূয়রের (গোলাম হোসেন লিখিয়াছেনলালকুর, সম্ভবত ইহালালকুমারীশব্দের অপভ্রংশ, এখনও বিহার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলেযমনা-কুয়র’, ‘ব্রজ্কুয়রপ্রভৃতি নামের প্রচলন আছে) শৈশবাবস্থা তিমিরাচ্ছন্ন। তাঁহার জন্মস্থান বা জন্মবৃত্তান্ত বা রাজধানীতে আগমনের কারণ না গোলাম হোসেন না কাফি খাঁ {‘মুন্তখব্বু ললুবাব অত্যুওম (ঐতিহাসিক) সারসংগ্রহ গ্রন্থের রচয়িতা} না সমসাময়িক ঐতিহাসিক ইরাদৎ খাঁ কেহই সম্বন্ধে কোন কথা বলেন নাই। তবে স্পষ্ট না বলিলেও লালকূয়রের যে খুব নীচ বংশে জন্ম তাহাদের সকলের বর্ণনার আভাসে সহজেই অনুমিত হয়। কথিত আছে যে লম্পট সম্রাট ইহাকে নর্ত্তকীসম্প্রদায় হইতে বেগমে উন্নীত করিয়াছিলেন। মোগল সম্রাটেরা কখন কখনও এইরূপে যে মহিষী বরণ করিয়া লইতেন, সে কথা মেনুষা হইতে সঙ্কলন করিয়া বঙ্গদর্শন পত্রেরঙ্গমহল

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন