শঙ্খনিধি হাউজের স্মৃতিচিহ্ন

ইমতিয়াজ আরমান

বাংলার ঔপনিবেশিক শাসনের প্রাথমিক থেকে মধ্যভাগে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আর্থিক ক্ষেত্রে নানা ধরনের রদবদল লক্ষ করা গেছে। উত্থান-পতনের ডামাডোলে প্রত্যক্ষ করা যায় নানা ধাঁচের স্থাপত্যিক উৎকর্ষ। উনিশ শতকের মধ্যভাগে ঢাকার মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থান ঘটেছিল। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অনেক পথ খুলে যেতে দেখা যায় সময়ে। তখনকার পুরান ঢাকার নবাবপুর এলাকায় বসতি স্থাপনকারী রকম একটি পরিবারের নাম শাহ বণিক পরিবার। শাহ বণিক শব্দের অর্থ হলো মসলা বিভিন্ন ঔষধি দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় বিক্রয়কারী একশ্রেণীর ব্যবসায়ী। পরিবার সম্পর্কে একটি কিংবদন্তি চালু আছে যে পরিবারের একজন সদস্য এক রাতে শঙ্খ বা ঝিনুকের খোলস স্বপ্ন দেখে। এরপর এই শঙ্খ তাদের পরিবারে ব্যবসার ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি এনে দেয়। বিশ শতকের গোড়ার দিকে লালমোহন শাহ বণিক, ভজহরি শাহ বণিক গৌর নিতাই শাহ বণিক ভ্রাতৃত্রয়ের নেতৃত্বে এই পরিবারের ব্যবসায় অনেক উৎকর্ষ সাধিত হয়। তখন থেকে পরিবার শঙ্খনিধি’ (শঙ্খের বাহক) উপাধি গ্রহণ করে এবং শঙ্খকে তারা তাদের বাণিজ্যিক উৎকর্ষের তাবিজ মনে করে একে ব্যবসার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকার ঔপনিবেশিক স্থাপত্য লাভ করেছিল অন্য রকম মাত্রা।

সময়কাল হিসাব করতে গেলে দেখা যায়, ১৯২০-২৬ সালের মধ্যে অনেকগুলো শঙ্খনিধি ইমারত প্রতিষ্ঠিত হয়। শঙ্খনিধি পরিবারের ব্যবসায়ের অসাধারণ সাফল্যের এক পর্যায়ে ভ্রাতৃত্রয় ঢাকার অভ্যন্তরে এবং পাশে অনেক স্থাবর সম্পত্তির মালিক হন। তারা স্থানীয় নীতিনির্ধারণ অনেক জনহিতকর কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত করেন। শঙ্খনিধি গ্রুপের অনেকগুলো স্থাপনা পুরান ঢাকার টিপু সুলতান রোডের উত্তর দিক থেকে শুরু করে নবাবপুর রোডের কোণ থেকে র্যাংকিন স্ট্রিট পর্যন্ত বিস্তৃত। এগুলোর মধ্যে চারটি ইমারতকে নিবন্ধের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। বিল্ডিংগুলো হলো . শঙ্খনিধি লজ . নাটমন্দির . ভজহরি লজ . রাধাবিনোদ মন্দির।

এই স্থাপনাগুলো এমন এক সময়ে নির্মিত, যখন ভারতীয় স্থাপত্য গথিক-ইন্ডিয়ান ইন্দো-সারাসিন রীতির আয়ত্তাধীন, যা ক্ল্যাসিক্যাল রীতির অনুসরণে নির্মিত এবং এর সঙ্গে দেশীয় রীতির ব্যবহারও পরিলক্ষিত হয়। তখনকার দিনে ঢাকা ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত শহর। সেই হিসেবে শঙ্খনিধি হাউজে গড়ে ওঠা বিল্ডিংয়ে উপর্যুক্ত রীতিগুলোকে অস্বীকার করা যায়নি, যা ইমারতগুলোতে বিধৃত। ইমারতগুলো সাধারণভাবে ঐতিহ্যবাহী অঙ্গনকেন্দ্রিক, নির্মাণে ক্ল্যাসিক্যাল রীতির অনুসরণে সুষম, যা বৈশিষ্ট্য পদ্ধতিতে পরিদৃশ্যমান। এই বংশের তত্ত্বাবধানে নির্মিত ভবনের মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় শঙ্খনিধি লজের কথা।

বিশেষত, ১৯২১ সালে তিন ভাইয়ের বড় ভাই লালমোহন শাহ বণিক এই বহু অঙ্গনবিশিষ্ট দ্বিতল ভবনটি নির্মাণ করেন। এতে চমত্কারভাবে অলংকৃত উঁচু রাস্তাসহ ঐতিহ্যগত অঙ্গন ব্যবস্থা অনুসৃত হয়েছে। এর সম্মুখের ফাসাদ গ্রেকো-ইন্ডিয়ান প্রভাবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এর কেন্দ্রীয় বে-টি দ্বিগুণ উচ্চতাবিশিষ্ট করিন্থীয় কলামের সাহায্যে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন