ঘাতকের শুভানুধ্যায়ী যখন নোবেল বিজয়ী

এমএ মোমেন

১৯৯৫-এর সেব্রেনিকা গণহত্যায় নিহতদের মায়ের সংঘমাদার্স অব সেব্রেনিকাপিটার হান্ডকের নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবি জানিয়েছে।

তারা বলেছে, বিশ শতকের কসাই স্লোবোদান মিলোসেভিচ ছিলেন পিটারের আদর্শ। সেই মিলোসেভিচের নির্দেশে আট হাজার বসনীয় মুসলমানকে হত্যা করা হয়।

তারা প্রশ্ন তুলেছেন: এটা নোবেল কমিটির কোন ধরনের বার্তা?

বার্তার মানে কি এইবিশ শতকের শেষভাগে যারা নির্বিচারে মুসলমানদের হত্যায় সমর্থন জুগিয়েছেন, তিনি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার উপযুক্ত? পৃথিবী কি এতই অবিচার করবে?

বলকান যুদ্ধ গণহত্যা চালানোর দায়ে অভিযুক্ত মিলোসেভিচের যখন আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার চলছিল, ২০০৬ সালে তার মৃত্যু হয়। ঘাতকের মৃত্যুকে মহিমান্বিত করতে তার শেষকৃত্যে যোগ দেন পিটার হান্ডকে। মিলোসেভিচের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টি আরো স্পষ্ট করেছেন মিলোসেভিচ নিজেই। তিনি তার পক্ষে সাফাই সাক্ষী দেয়ার জন্য পিটারকে নিযুক্ত করেছিলেন।

অস্ট্রীয় নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, কবি অনুবাদক পিটার হান্ডকে ২০১৯ সালের নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। সাহিত্যিক হিসেবে তিনি তুলনামূলকভাবে হীন মানের কিংবা নোবেলের যোগ্য নন, কথা বলে কেউ আঙুল তোলেননি সত্য, কিন্তু তার মানবিক অবস্থান নিয়ে নিন্দাবাদ জানানোর ঝড় বয়ে যাচ্ছে। তিনি হিটলারের পর ইউরোপে চিহ্নিত দ্বিতীয় জঘন্যতম কসাই মিলোসেভিচের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তার কর্মকাণ্ডের সাফাই গেয়েছেন।

পিটার হান্ডকের জন্ম ডিসেম্বর ১৯৪২। বিপর্যস্ত সংসারের সন্তান, মা আত্মহত্যা করেন। তিনিও মদ্যপ সত্বাবাকে এড়িয়ে চলতে অস্ট্রিয়ার একটি ক্যাথলিক বোর্ডিং স্কুলে থাকেন। স্কুল ম্যাগাজিনে প্রথম লেখা প্রকাশ ১৯৫৯ সালে। ১৯৬১-তে গ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অধ্যয়নের জন্য ভর্তি হলেও পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলেন না। এক জার্মান প্রকাশক তার উপন্যাসদ্য হরনেটপ্রকাশের সিদ্ধান্ত নিতেই তিনি প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার পাট চুকিয়ে লেখক সংঘ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এবং চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট রচনায় জড়িয়ে পড়লেন। তার চিত্রনাট্যেরদ্য লেফট হ্যান্ডেড উইমেনকান চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য মনোনীত হয়। তিনি জার্মান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড গোল্ড লাভ করেন।

পিটার হান্ডকে ইউরোপের সিরিয়াস লেখকদের একজন। নোবেল পুরস্কারের জন্য তার নাম আগেও উচ্চারিত হয়েছে। নোবেল জুয়াড়িদের অনেকে তিনিই নোবেল পাচ্ছেন বলে বাজিও ধরেছেন। আবার মিলোসেভিচের বর্বরতার সমর্থক হওয়ায় তার একটি বড় পুরস্কার প্রত্যাহারের মতো ঘটনাও ঘটতে যাচ্ছিল। তিনি অবশেষে নিজেই পুরস্কার গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়েছেন।

সঠিক সমাদৃত বিজয়ী বের করার ক্রমাগত ব্যর্থতা থেকে উঠে দাঁড়ানোর আগে সুইডিশ একাডেমি আরো একটি বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল। নোবেল কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির যৌন কেলেঙ্কারির রেশ কাটিয়ে উঠতে ২০১৮-তে সুইডিশ একাডেমি পুরস্কার দিতেই পারল না। তবে প্রশ্নটি যেখানে অমানবিকতার, জাতিগত উচ্ছেদের গণহত্যার সমর্থনদাতাকে পুরস্কার দেয়ার, তখন একটি পক্ষ থেকে গা ঝাড়া দিয়ে দাঁড়াতে তাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হবে।

হাইনরিখ হাইনে পুরস্কার পেয়েও প্রত্যাখ্যাত হান্ডকে

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন