ছোট পর্দা-বড় পর্দায় অভিনয়, মঞ্চ নাটকের নির্দেশনা দেয়া—সব মিলিয়ে খানিকটা ব্যস্ত সময় পার করছেন জিনাত শানু স্বাগতা। অন্যদিকে স্বাগতার গানের গলা যে বেশ চমত্কার, এটাও কমবেশি সবারই জানা। গান নিয়ে নিয়মিত না হলেও এ বছর ভক্তদের একটা সুখবর দিতে পারবেন বলেই আশাবাদী এ অভিনেত্রী। চলচ্চিত্র, নাটক আর গান—এ তিন নিয়েই কথা হয়েছে তার সঙ্গে
মানুষের বাগান চলচ্চিত্রের শুটিং শেষ
হয়েছে ক’দিন আগেই, আসছে শীতে মুক্তির কথা রয়েছে...
চলচ্চিত্রটির ডাবিংও শেষ হয়েছে এরই
মধ্যে। এখন শুধু মুক্তির অপেক্ষা। আতিক ভাইয়ের সঙ্গে আমার কাজ করার অভিজ্ঞতা নতুন
না। আমার ক্যারিয়ারের শুরু থেকে তার সঙ্গে বেশকিছু কাজ করেছি। মাঝখানে দীর্ঘ সময়
তিনি নিজেও কাজ করেননি আর আমারও করা হয়নি তার কোনো কাজ। বেশ বড় বিরতির পর কাজ শুরু
করেছিলাম মানুষের বাগানে। বলা চলে এখানে খেলার ছলে কাজের শুরু। আবার বেশ আনন্দ
নিয়েই শেষ করেছি। বলছিলাম খেলার ছলে কাজ শুরু করেছি এ চলচ্চিত্রে। কিন্তু মজার
বিষয় হচ্ছে, শুটিং শুরুর পর থেকে টের পেয়েছি আতিক ভাই কতটা সিরিয়াস ছিলেন কাজটি
নিয়ে।
এখানে শুটিং অভিজ্ঞতা নিয়ে জানতে চাই—
এ চলচ্চিত্রে বেশকিছু চরিত্র রয়েছে।
কাউকেই পুরো সময় ধরে দেখা যাবে না। সবার আলাদা আলাদা গল্প নিয়েই মানুষের বাগান। সে
অর্থে এখানে আমারও একটা গল্প আছে। আমার অংশের শুটিং হয়েছে মোড়েলগঞ্জে। আমরা একটা
স্টিমারে করে সেখানে গিয়েছি। এরপর সেখানে শুটিং চলাকালীন অর্থাৎ প্রায় ১২ ঘণ্টার
মতো পুলিশ আমাদের পাহারা দিয়েছে। এরপর ঢাকা ফিরেছি। এ ছবিতে গত্বাঁধা কোনো চরিত্রে
দর্শক আমাকে দেখবেন না এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়া যায়। অদ্ভুত এক চরিত্র নিয়ে হাজির
হচ্ছি, যা আমার দর্শকরা কখনো হয়তো কল্পনাও করেননি। অন্যদিকে এখানে আমার
স্বামীর চরিত্রে দেখানো হবে ৭০-৮০ বছরের এক বৃদ্ধকে। যার সঙ্গে আমার বেশ প্রেমময়
সম্পর্ক। সব মিলিয়ে অদ্ভুত,
তবে আতিক ভাই বলেই হয়তো এমন কিছু নিয়ে কাজ
করেছেন।
নতুন কোনো চলচ্চিত্রের কাজ আসছে কি
সামনে?
একটা চলচ্চিত্রে কাজ করার কথা হয়েছে।
তাদের গল্পটি ভালো লেগেছে বিধায় রাজি হয়েছি। এখানে মূল চরিত্রের একটি আমি। এ বছরই
শুটিং শুরুর কথা রয়েছে।
প্রথম মঞ্চ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন
খ্যাতির বিড়ম্বনায়। পর্দার সামনেই কাজ করেছেন সবসময়, পর্দার পেছনে কাজ করতে গিয়ে কেমন
লেগেছে?
এ কথা পুরোপুরি সত্য না আমার জন্য।
কেননা আমি ছোট থেকে যেভাবে বড় হয়েছি,
সে অর্থে আমার যাপিত জীবন কিন্তু ছিল পর্দার
সামনে এবং পেছনে দুদিকেই। যেহেতু বাবার গানের স্কুল ছিল আমরা সেখানে অনুষ্ঠান
করতাম। সেখানে অনুষ্ঠান অনুযায়ী পোশাক তৈরি করতে হতো, বাচ্চাদের
তৈরি করতে হতো, এমনকি আমি নিজেকে নিজেই তৈরি করে নিতাম। সব মিলিয়ে পর্দার পেছনে কাজের
শুরু কিন্তু অনেক আগেই। তবে বাচ্চাদের নিয়ে যেহেতু এবারই প্রথম কোনো নাটক মঞ্চস্থ
করেছি, তাই অনুশীলনের পর প্রাথমিকভাবে শুটিং করেছিলাম দেখার জন্য কতটা কী করতে
পেরেছি। ওরা যখন মঞ্চে উঠেছে,
সত্যি কথা তাদের পারফরম্যান্স দেখে আমি মুগ্ধ
হয়েছি। এতটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অভিনয় করে গিয়েছে তারা। এ নাটকের কাজটি করতে গিয়ে
বাচ্চাদের সঙ্গে কাজ করার যে ছোট ছোট কৌশল রয়েছে, তা শিখেছি। সব মিলিয়ে আমার জন্য এটি
বেশ চমত্কার অভিজ্ঞতা ছিল।
নতুন মঞ্চ নাটক আসছে তাহলে?
যেহেতু বাচ্চাদের মঞ্চ নাটকের
নির্দেশনার কাজটি করেছি। সত্যিকার অর্থে,
খুবই উপভোগ করেছি। ওরা তো সরল, ওদের
মধ্যে কোনো জটিলতা নেই, ফলে এত চমত্কার অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার যে আমি সামনেই আরো একটি মঞ্চ নাটক
নির্দেশনার পরিকল্পনা করেছি এবং সেটাও হবে ছোটদের নিয়েই। বড়দের নিয়ে কাজ করার জন্য
অনেক নির্দেশক রয়েছেন, তাই আমি না হয় ছোটদের নিয়েই কাজ করি।
মঞ্চ ছাড়াও ছোট পর্দার জন্য নাটক
কিংবা চলচ্চিত্র নির্মাণের কোনো চিন্তা রয়েছে কি?
আমি স্নাতক করেছি কিন্তু চলচ্চিত্র
নির্মাণের ওপর, অভিনয় না। মিডিয়ায় কাজের ক্ষেত্রে আমার প্রথম চাওয়া কিন্তু সেটাই ছিল।
ধীরে ধীরে আমার সে চাওয়া পূরণ করব। সেটারই সূচনা হয়েছে বলা যায়। আপাতত মঞ্চের কাজ
এবং ছোটদের নিয়েই থাকতে চাই।
আপনাদের স্কুল কেমন চলছে?
আমাদের সাংস্কৃতিক স্কুলটি বাবা চলে
যাওয়ার পর বলা যায় সভ্যতাই দেখছে। আমি মাঝে মাঝে সময় দিই। হয়তো কোনো শিক্ষক
অনুপস্থিত থাকলে তার পরিবর্তে কখনো ক্লাস নিয়ে থাকি আমি। বিশেষ করে অভিনয়ের ক্লাস।
গান নিয়ে নতুন কিছু ভাবছেন কি?
সভ্যতা একটি গান লিখেছিল আমার জন্য এ
বছরের জানুয়ারিতে। বিভিন্ন ব্যস্ততায় সেটিতে আর কণ্ঠ দেয়া হয়নি। তবে আগামী দু-তিনদিনের
মধ্যেই সেটির একটি ডেমো ভোকাল দেব। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বছর আমার কাছ থেকে একটি
গান পাবেন আমার ভক্তরা।
সাম্প্রতিক কাজ—
সবে একটা বিজ্ঞাপনের কাজ শেষ করলাম।
অলটাইম মিল্ক ব্রেডের বিজ্ঞাপন ছিল সেটি। কয়েক দিনের মধ্যেই অনএয়ার হবে এটি।
কয়েকটি ধারাবাহিকের কাজ চলছে নিয়মিতই। যেসবের মধ্যে রয়েছে—ভালোবাসার আলো
আঁধার, চিটার ডট কম, চিরকুমারী সভা।