যশোরে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে বিপাকে ঋণগ্রস্ত চালকরা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি যশোর

যশোর সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা গ্রামের সেলিম শেখের পরিবারের সদস্য সাতজন। টানাটানির সংসারে অভাব ঘোচাতে তিনি একটি এনজিও থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনেছিলেন। এ ঋণ পরিশোধে তাকে প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হয় ১ হাজার টাকা। অথচ সম্প্রতি যশোর পৌরসভায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। ফলে সংসারের খরচ মেটানোর পাশাপাশি কিস্তি পরিশোধ নিয়ে তিনি পড়েছেন চরম বিপাকে।

শুধু সেলিমই নয়। যশোর শহরে গত বৃহস্পতিবার থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ ঘোষণা করায় বিপাকে পড়েছে তার মতো আরো বহু মানুষ। এরই মধ্যে দুদিনে জব্দ করা হয়েছে ব্যাটারিচালিত ৩০টি রিকশা। এ অবস্থায় ঋণ নিয়ে যারা এ ধরনের রিকশা কিনেছেন, তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় ভুগছেন ঋণ পরিশোধের দুশিন্তায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যশোর শহরে বর্তমানে প্রায় চার হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজারের মতো রিকশা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তৈরি বা কেনা হয়েছে। হঠাৎ করে এসব রিকশা চলাচল বন্ধ করা হলে বহু পরিবার সংকটে পড়বে।

শহরতলির হাশিমপুর গ্রামের জুয়েল হোসেন একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বসবাসের জন্য দুই শতক জমি ও একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনেছিলেন। রিকশাটি ছিল তার আয়ের একমাত্র উৎস। রিকশার আয় দিয়েই তাকে ঋণের দুটি কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। এর মধ্যে একটি প্রতি সপ্তাহে ৩ হাজার ১০০, অন্যটি মাসে ২ হাজার ২০০ টাকার।

জুয়েল হোসেন বলেন, সংসার খরচ ও কিস্তির টাকা দেয়ার জন্য আয়ের একমাত্র উপায় ছিল রিকশা। কিন্তু শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তার পরও গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রিকশা নিয়ে বের ভয়ে ভয়ে কিছু সময় চালিয়েছিলাম। এখন কী করব বুঝতে পারছি না।

যশোর জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি তাহের সরদার বলেন, শহরে দেড় হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশার মালিক নিজেই চালক। এরা সবাই দরিদ্র। তারা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে রিকশা কিনেছেন। এভাবে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ হওয়ায় তারা বিপাকে রয়েছেন।

এদিকে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ হওয়ায় চালকদের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রী। শহরের বেজপাড়ার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা শহরের মধ্যে চলাচলের ভালো বাহন ছিল। কিন্তু দুদিন ধরে সেগুলো চলছে না। ফলে ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজে যাওয়া নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। রিকশা পাওয়া গেলেও ভাড়া নেয়া হচ্ছে দু-তিন গুণ।

যশোর পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন বলেন, আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পৌরসভা থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করা হয়েছে।

যশোর শহর ট্রাফিকের প্রধান সুভেন্দু কুমার মুন্সি জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ১ আগস্ট থেকে যশোর পৌরসভার মধ্যে ব্যাটারিযুক্ত রিকশা চলাচল করলে তা জব্দ করা হচ্ছে। গত দুদিনে ৩০টি ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন