ভয়েস অব আমেরিকায় ড. ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি : সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ভয়েস অব আমেরিকায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘এ নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি, কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’ গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেন ড. ইউনূস। ভাষণ শেষে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগকে একটি সাক্ষাৎকার দেন তিনি। গতকাল তার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে ভয়েস অব আমেরিকা। 

গত ২৩ সেপ্টেম্বর বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে একটি সাক্ষাৎকার দেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সেখানে তিনি জানান, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে এক-দেড় বছরের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার যেন গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম হয়, সেজন্য তিনি ড. ইউনূস সরকারকে দৃঢ় সমর্থন দিয়ে যাবেন।

সেনাপ্রধানের ওই বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ভয়েস অব আমেরিকাকে ড. ইউনূস বলেন, ‘সেটা আপনি ইচ্ছা করলে ধরতে পারেন। কিন্তু সেটা তো সরকারের মতামত নয়। সরকার তো কোনো মত দেয়নি এ পর্যন্ত। কাজেই সরকার কখন মেয়াদ ঠিক করবে, সেটা সরকারকে বলতে হবে। সরকার না বলা পর্যন্ত সেটা তো সরকারের মেয়াদ হচ্ছে না।’ বিষয়টি পরিষ্কার করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, ‘আমাদেরই বলতে হবে। আমাদের মুখ থেকে যখন শুনবেন, তখন সেটাই হবে তারিখ।’

গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. ইউনূস জানান, এটি একটি আইনি বিষয় এবং আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই দেশেরই উদ্দেশ্য হলো অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলা। মাঝে মাঝে কতগুলো প্রশ্ন এসে যায়, যেখানে সম্পর্কে একটু চিড় ধরে। যেমন সীমান্তে গুলি করল, বাচ্চা মেয়ে মারা গেল, বাচ্চা ছেলে মারা গেল, এগুলো মনে কষ্ট দেয়। আমরা মনে করি না যে ভারত সরকার ইচ্ছা করে এসব করেছে। যেসব কারণে এসব ঘটে, সেসব যেন আমরা উৎখাত করতে পারি, যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, যেন নিরাপদে মানুষ জীবন নিয়ে চলাফেরা করতে পারে।’

বর্তমানে শিক্ষার্থীরা দেশ চালাচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, ‘চালাচ্ছে বলছি না; তবে চালানো উচিত। আমি বরাবরই বলে এসেছি, এখানে এ দায়িত্ব পালন করার আগে থেকেই বলছি যে তরুণদের হাতে দায়িত্ব দিতে হবে, কারণ তারাই তাদের ভবিষ্যৎ রচনা করবে।’

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর দুই মাসের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ ক্ষমতা পেয়েছেন।

ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় দেড় মাস পরে কমিশন অফিসারদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করলেন কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস জানান, গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতাকে হত্যা করাসহ পুলিশের নানা গণবিরোধী ভূমিকায় জনগণের মধ্যে তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। ফলে গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশের মনোবল ভেঙে যাওয়ায় তাদের দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা যাচ্ছিল না। এ কাজে আনসার নিয়োগ করেও ফল আসেনি। তাই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনাবাহিনীকে দুই মাসের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

ড. ইউনূস বলেন, ‘নানা রকমের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে, সমাবেশ হচ্ছে। তাতে বিশেষ করে আমাদের পোশাক শিল্প-কারখানাগুলোয় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা গেল। সেগুলো নিয়ে মনে করলাম, এভাবে চলতে দিলে তো বাড়তে আরম্ভ করবে, তখন সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়ার কথা উঠল। তারা বলছে, আমরা তো আছিই; কিন্তু আমাদের তো কেউ পরোয়া করছে না। কারণ আমাদের তো কোনো ক্ষমতা নেই। আমাদের একটা ক্ষমতা থাকলে তারা হয়তো আমাদের গণ্য করবে। তখন আমরা তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিলাম।’

সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস ১৯৭১-এ যুদ্ধাপরাধের জন্য পাকিস্তান সরকারের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া, সার্ক পুনরায় কার্যকরভাবে চালু করার ব্যাপারে পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে আলোচনা করা, সংবিধানসহ নানা ক্ষেত্রে গৃহীত সংস্কার কর্মসূচি, পার্বত্য অঞ্চলের সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও কথা বলেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই তো এলাম মাত্র। এত বছরের সমস্যা, আপনি দুদিনে আমাদের দিয়ে সমাধান করে দেবেন, এটা আশা করা তো ঠিক হবে না। একটা শান্তি চুক্তি হয়েছে, সে শান্তি চুক্তি বহু বছরের চেষ্টায় হয়েছে। সেই শান্তি চুক্তি বহাল করা যাচ্ছে না, মান্য করছে না। এখন কি সে শান্তি চুক্তি আবার নতুন করে করতে হবে? সেটা আমাদের সরকার পেরে উঠবে না। এটা পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত যে সরকার আসবে, তারা করবে।’

নতুন করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রবেশের চেষ্টা করলে সে ব্যাপারে তার সরকারের সিদ্ধান্ত কী হবে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা যদি আসতে চায়, আমরা তাদের আসতে দেব, আমরা তাদের গ্রহণ করব।’

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ড. ইউনূস। ওই ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার কর্মসূচির পদক্ষেপ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। এসব কমিশনের ব্যাপারে তিনি ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন করা তার সরকারের মূল লক্ষ্য।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন