উত্তরে কমছে নদ-নদীর পানি বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির আভাস

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, রংপুর ও কুড়িগ্রাম

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার শংকরদহ চরে কিছু মানুষ এখনো পানিবন্দি ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

উজানের পানিপ্রবাহ নিম্নমুখী হয়েছে। বৃষ্টিপাতও কমেছে উত্তরাঞ্চলে। তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারসহ সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রামে নদী অববাহিকার চরাঞ্চলসহ নিচু এলাকার ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও তলিয়ে আছে শত শত হেক্টর জমির আমন ধান। তবে আগামী তিনদিনে পরিস্থিতির আরো উন্নতি হওয়ার আভাস দিয়েছে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

গতকাল দুপুরে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, ‘‌রোববার তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল, সেটি গতকাল ডালিয়া এবং কাউনিয়া দুই পয়েন্টেই নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়েছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ধরলা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতাও কমে এসেছে। সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানে পদ্মার পানি বাড়লেও সেটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে বুলেটিনে বলা হয়, রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে এসেছে। ফলে আগামী তিনদিন তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি কমতে পারে। এতে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার তিস্তা নদীসংলগ্ন চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে।

এদিকে উজানে পানিপ্রবাহ নিম্নমুখী হওয়া এবং বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় রংপুরের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। গতকাল দুপুরে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আগের রাতে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, তিস্তা নদীর পানি রোববার সন্ধ্যা ৬টায় কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। রাতে বাড়লেও ভোর থেকে কমতে শুরু করেছে। ফলে কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ও বালাপাড়া ইউনিয়নের হায়বদ খাঁ চর, গদাই, তালুক শাহবাজ ও গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ইছলি, কোলকোন্দ, বিনবিনা, গজঘণ্টার ছালাপাক চরের বাসিন্দারা পানিবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেলেই আক্রান্ত হয় কাউনিয়ার বালাপাড়া ইউনিয়ন।

বালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনসার আলী জানান, তার এলাকা থেকে দ্রুত পানি নেমে যাচ্ছে। তবে পানি নেমে গেলেও ভোগান্তি বেড়েছে এলাকাবাসীর।

এদিকে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় নদীর পানি সমতলে কমে বর্তমানে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে। রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি।

বৃষ্টি ও উজানের ঢল কমে আসায় কুড়িগ্রামে তিস্তা অববাহিকার বন্যা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি ৩৯ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে নদী অববাহিকার চরাঞ্চলসহ নিচু এলাকার ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও তলিয়ে রয়েছে শত শত হেক্টর জমির আমন ধান।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলার ৪৩১ হেক্টর জমির আমন খেতসহ অন্যান্য ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। তবে পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় এসব ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই।

তবে পানি বাড়া-কমার সঙ্গে তীব্র হয়ে উঠেছে তিস্তাপারের ভাঙন। স্থানীয়রা জানান, পানি কমার সঙ্গে ভাঙন শুরু হলেও প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন