অবরোধের দ্বিতীয় দিন

জনজীবনে স্থবিরতা কাটেনি খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটিতে

আজ থেকে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি I রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি

রাঙ্গামাটিতে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা গতকাল পরিদর্শন করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির জনজীবনে স্থবিরতা কাটেনি। ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার হলেও অবরোধ ও পরিবহন ধর্মঘটের কারণে গতকালও দুই জেলার রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। খোলেনি দোকানপাটও। স্কুল-কলেজে ছিল না শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। তবে এদিন নতুন করে কোথাও সংঘর্ষ বা সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া আজ থেকে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন মালিক ও শ্রমিকরা।

পাহাড়ের সাম্প্রতিক সহিংসতার সূত্রপাত ঘটে বুধবার। ওইদিন চুরির অভিযোগে খাগড়াছড়িতে মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর প্রতিবাদে পরদিন দীঘিনালায় বিক্ষোভ করে বাঙালিরা। মিছিলের সময় সেখানে পাহাড়িদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়। দীঘিনালায় সংঘর্ষের পর রাতে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে খাগড়াছড়ি সদরে। এসব ঘটনায় মৃত্যু হয় তিনজনের। শুক্রবার সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে আরেক পার্বত্য শহর রাঙ্গামাটিতেও। সেখানে সংঘর্ষে প্রাণ হারান একজন। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই জেলা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। অন্যদিকে পাহাড়িদের ওপর হামলার প্রতিবাদে তিন পার্বত্য জেলায় গতকাল থেকে ৭২ ঘণ্টা অবরোধের ডাক দেয় ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা’। রাঙ্গামাটিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট ডাকে জেলা বাস, ট্রাক, সিএনজি ও মিনি ট্রাকচালক মালিক ঐক্য পরিষদ। এর মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সভার পর এ ঘোষণা আসে। 

খাগড়াছড়িতে গতকাল অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। তবে খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর, আদালত সড়ক, বাস টার্মিনাল, চেঙ্গি স্কোয়ার ও মধুপুর সড়কসহ আশপাশ এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করেছে। 

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী সদস্য মো. আবদুল মোমিন সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।’

জিপ মালিক সমিতির সভাপতি নির্নিমেষ দেওয়ান জানান, গতকাল তাদের কোনো গাড়ি সড়কে চলাচল করেনি। এতে অনেক পরিবহন শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।

জেলা পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল সংবাদমাধ্যমে জানান, অবরোধের কারণে জেলায় গতকাল কোনো সহিংসতা ঘটেনি। দোকানপাটও খুলতে শুরু করেছে। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহলে রয়েছেন।

এদিকে খাগড়াছড়ির পর রাঙ্গামাটিতেও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খানের সই করা গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হলো। 

১৪৪ ধারা প্রত্যাহার হলেও রাঙ্গামাটিতে গতকাল পরিবহন ধর্মঘট ও ৭২ ঘণ্টার অবরোধ বলবৎ ছিল। ফলে গতকালও রাঙ্গামাটি শহরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছাড়া আর কোনো যান চলাচল করেনি। বন্ধ ছিল কাপ্তাই হ্রদের নৌযান চলাচলও। 

সরজমিনে দেখা যায়, রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি একেবারেই কম। তবে শনিবারের তুলনায় গতকাল বনরূপা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষের উপস্থিতি কিছুটা বেড়েছে। দু-একটি দোকানও খোলা দেখা গেছে।

গতকাল সকালে রাঙ্গামাটি জেলা শহরে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা পরিদর্শন করেন প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। এরপর বিকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে হয় ‘সম্প্রীতি সমাবেশ’। এতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

অবরোধের কারণে সাজেকে আটকা পড়েছে এক হাজারের বেশি পর্যটক। সাজেক জিপ সমিতির লাইনম্যান ইয়াসিন বলেন, চাঁদের গাড়ি (জিপ), পিকআপ, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল মিলিয়ে অন্তত ২২০টি যান সাজেকে আটকা পড়েছে। ফলে পর্যটকরা খাগড়াছড়ি ফিরতে পারছে না।  

এদিকে সাম্প্রতিক সহিংসতা খতিয়ে দেখতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা)। গতকাল সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটি এ দাবি জানায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন