গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আবারো ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়বে ফেনী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় প্রেস ক্লাবে গতকাল ফেনী সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকার আয়োজনে গোলটেবিল বৈঠকে অতিথিরা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

ফেনীসহ দেশের ১১ জেলায় সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে স্বল্প, দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় আবারো এসব জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেবে। সেটি আগামী বছরও হতে পারে। 

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ফেনী সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকার আয়োজনে ‘সাম্প্রতিক বন্যা: কারণ ও করণীয়’ শিরোনামের এ গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। ওই আলোচনায় পুনর্বাসনসহ নানা সুপারিশ উঠে আসে। 

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী গোলটেবিলে প্রধান অতিথি ছিলেন। ফেনী সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ভুইয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আদিত্য আরাফাতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র-ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার এবং রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশকে না জানিয়ে নদীর পানি ছেড়ে দেয় ভারতের সমালোচনা করে বলেন, ‘আমার ৮০ বছরের জীবনে এত পানি কখনো দেখিনি। সরকারি-বেসরকারি নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া না হলে ফেনীসহ দেশের বেশির ভাগ অঞ্চল আবারো হয়তো ডুবে যাবে। যৌথ নদী কমিশনে ভালো খাওয়া-দাওয়া ছাড়া তেমন কিছুই হয় না।’

অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করে আসছে। তবে স্বৈরাচারের বিদায়ের পর দেশপ্রেমিক জনগণ নিজেদের হিস্যা আদায় করবে। নতুন সরকারের আমলে সব দাতা সংস্থা এবং দেশ বাংলাদেশকে সহায়তার হাত বাড়াচ্ছে, তাই আর্থিক কোনো সংকট হবে না।’

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে সহযোগিতার প্রয়োজন হবে।’ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি এবং মৎস্য ও পশু খাতে মারাত্মক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুঁজি হারানো কৃষক ও খামারিদের টেনে তুলতে না পারলে সংকট ঘনীভূত হবে। এ খাতে সহজ শর্তে ঋণ দেয়া প্রয়োজন।’

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, এবারের বন্যা শুধু বৃষ্টি বা উজানের ঢল থেকে হয়নি। ভারত পানি নিয়ে যে আচরণ করেছে তা রীতিমতো পানি আগ্রাসনের পর্যায়ে পড়ে। এবারের বন্যায় মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ১৪ হাজার কোটি টাকা। আর জেলা হিসেবে ফেনীর ক্ষতি ২ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে কৃষিতে ১ হাজার ২০০ কোটি, শিক্ষায় ৩৮ কোটি, সড়ক অবকাঠামো ১৪০ কোটি, মোটরযানে ৬১ কোটি, ঘরবাড়িতে ৬৯২ কোটি এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ৫৫৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া বন্যার জন্য দায়ী দেশকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা, পরশুরামে বিএসএফের কেটে দেয়া বাঁধ দ্রুত মেরামত, ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে পানি উত্তোলন বন্ধ করা, আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ আইনে সই নিশ্চিত করা, বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে বন্যা থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা, কৃষি ও মৎস্য সব খাতের ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া, সব নদী থেকে বাঁধ ও ব্যারাজ তুলে দেয়া এবং বন্যার আগাম তথ্য আদান-প্রদানসহ ১৫ দফা করণীয় তুলে ধরা হয় মূল প্রবন্ধে।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আব্দুল্লাহ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নাজিম উদ্দিন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি আইয়ূব ভুইয়া, সিনিয়র সাংবাদিক মোতাহের হোসেন মাসুম, ফেনী সমিতির সহসভাপতি মেসবাহ উদ্দিন সাঈদ, রোম করপোরেশনের চেয়ারম্যান দিদারুল আলম মজুমদার, কানাডার মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা হুমায়ুন কবির পাটোয়ারি প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন