রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমানো হবে না —অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হবে না। আমাদের ঘাটতি বাজেট থাকে, বড় অংশ বাইরে থেকে ঋণ হিসেবে আনতে হয়। দিন দিন ঋণের বোঝা বাড়ছে। আমরা চেষ্টা করব নিজেদের অর্থের সংস্থান নিজেরা করতে। তবে এটা ঠিক যে নিজেদের অর্থে হবে না, বাইরে থেকেও আনতে হবে। তবে লক্ষ্য খেয়াল রাখতে হবে, আমরা যেন পরমুখাপেক্ষী না হই।’

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাল্টিপারপাস হলে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অর্থ আইন ২০২৪-এর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে আনীত নানা পরিবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন এ সভা আয়োজন করে। 

সরকারি অর্থের অপচয় কমানোর আহ্বান জানিয়ে সালেহউদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারের এ মুহূর্তে অর্থের প্রয়োজন। সরকারি খরচ ও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহে অর্থ প্রয়োজন। সরকার যেন কোনো অর্থের অপচয় না করে।’

পরমুখাপেক্ষী হওয়ার বিপদ অন্তর্বর্তী সরকার টের পাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা কথা আছে, আপনার হাত যদি আমার পকেটে থাকে, তাহলে আমি ডান দিকে গেলে আপনিও তাই যাবেন। আমি বাঁয়ে গেলে আপনিও বাঁয়ে যাবেন। সেটা কিন্তু হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছি।’ প্রকল্পগুলো মাঠের চাহিদার ভিত্তিতে না নেয়ার কারণে অর্থের অপচয় হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেটা দরকার সেটার ভিত্তিতে যেন প্রকল্প আসে।’

উল্লেখ্য, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এর মধ্যে এনবিআরের মাধ্যমে আহরণ করা হবে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

সভায় এনবিআরের আইনগুলোকে ব্যবসাবান্ধব করার ঘোষণা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট রাজস্ব আদায় করতে পারছি না। আমরা ঘাটতি বাজেট করছি। পরবর্তী জেনারেশনের ওপর বেশি বেশি ঋণের দায় চাপিয়ে দিচ্ছি। করদাতারা তাদের প্রদেয় করের অপচয় দেখতে চায় না।’ 

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর বড় অংকের টাকা আমরা কর ছাড় দেই। প্রতি বছর সাড়ে ৩ লাখ টাকার কর ছাড় দেই। এটার বড় অংশ করে ঠিক করলে কর আদায় বাড়বে। আমরা সঠিকভাবে কর আইন প্রয়োগ করতে চাই।’

সবাইকে অনলাইনে রিটার্ন জমার অনুরোধ জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনাদের পরিচিতদেরও অনলাইনে রিটার্ন দিতে আহ্বান করবেন। আমাদের আইন-কানুনকে ব্যবসাবান্ধব করতে হবে। ২০১২ সালে আমরা মূসক আইন করেছি, অথচ ১২ বছরে তার ইংরেজি ভার্সন হয়নি। তাহলে বিদেশী বিনিয়োগকারী প্রস্তুতি নেবে কীভাবে?’

এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যারা কর দেন না তাদের উদ্বুদ্ধ করবেন। ম্যানুয়াল কোনো অডিট করবেন না। সব অটোমেটেড করবেন। অডিট করবেন ডেপুটি কমিশনার। তাকে সুপারভাইজ করবেন যুগ্ম কমিশনার। কমিশনার অ্যাসেসমেন্ট করবেন না। তিনি সুপারভাইজরি রোল প্লে করবেন।’

রাজস্ব সংগ্রহের হিসাব অনলাইনে করার আহ্বান জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাজস্ব সংগ্রহ ফিগার রিপোর্ট হবে অনলাইনে, আইবাস সিস্টেমে। এখন আর কাগজে-কলমে যোগ-বিয়োগ করে সময় নষ্ট করার দরকার নেই। আইবাস সিস্টেমের সব সমস্যাই গত ১৫ দিনে সমাধান করা হয়েছে। আইবাস সিস্টেমে আগের চেয়ে সহজে বেশি রাজস্বের হিসাব পাওয়া যাচ্ছে।’

সভা ট্যাক্সেশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. লুৎফুল আজীমসহ আয়কর বিভাগের সব সদস্য, কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন