চাঁদপুরে তিন ফসলি জমিতে স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রস্তাব

এস এম রাসেল I চাঁদপুর

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার উত্তর আলগী গ্রামে স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত তিন ফসলি জমি ছবি : নিজস্ব আলোকচিত্রী

চাঁদপুরে একটি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। প্রথমে হাইমচর উপজেলার লামচরি গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাসজমিতে এটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। পরবর্তী সময়ে সে প্রস্তাব বাতিল হলে উত্তর আলগী গ্রামে সাড়ে তিন একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেয় জেলা প্রশাসন। তবে প্রস্তাবিত জমি তিন ফসলি হলেও পতিত নাল (নিচু কৃষিজমি) হিসেবে দেখানো হয়েছে।

তিন ফসলি জমিতে স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রস্তাবনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় কৃষক। এরই মধ্যে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে ফসলি জমি রক্ষার জন্য আবেদনও করেছেন। তাদের দাবি, প্রস্তাবিত জমি সেচ প্রকল্পের আওতায় থাকায় বছরে তিন ফসল উৎপাদন হয়। সেখানে স্টেডিয়াম নির্মাণ হলে কৃষক ভূমিহীন হয়ে পড়বেন। উপজেলার চরভাঙ্গা মৌজায় স্টেডিয়াম নির্মাণে জেলা প্রশাসককে মতামত দিয়েছেন তারা।

আলগী দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, ‘কৃষক যেখানে আপত্তি জানাচ্ছেন, সেখানে স্টেডিয়াম না করে, লামচরিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি রয়েছে। সেখানেও করা যেতে পারে।’

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, হাইমচর উপজেলার লামচরি গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয় ২০২২ সালে। ওই সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি অবগত না করায় প্রস্তাবনাটি বাতিল হয়ে যায়। এরপর আলগী দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের উত্তর আলগী মৌজায় প্রায় সাড়ে তিন একর জমি পতিত দেখিয়ে প্রস্তাব পাঠায় জেলা প্রশাসন।

উত্তর আলগী গ্রামের কৃষক মোবারক জানান, এসব জমিতে বছরে তিনটি ফসল উৎপাদন হয়। যা দিয়ে তাদের সংসার চলে। স্টেডিয়াম হোক সেটা তারাও চান। তবে ফসলি জমিতে নয়, যেখানে পরিত্যক্ত জমি বা সরকারি জমি আছে, সেখানে করা হোক।

কৃষক মকসুদ মিয়া বলেন, ‘অনেকে নিজের জমির সঙ্গে অন্যের জমি ইজারা নিয়ে আবাদ করেন। এখানে স্টেডিয়াম হলে তারা কি খাবে। আমরা তিন ফসলি জমিতে স্টেডিয়াম চাই না।’

ওই মাঠে কয়েক একর জমি আছে স্থানীয় কৃষক শহীদ গাজীর। তিনি বলেন, ‘এ মাঠের রাস্তার পাশের জমি প্রতি শতাংশ বিক্রি হয় ৫ লাখ টাকা করে। এখানে মিনি স্টেডিয়াম হলে আমরা সঠিক দাম পাব না। ফসল উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের স্টেডিয়াম প্রয়োজন নেই।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রস্তাবিত জমিগুলো তিন ফসলি। হাইমচরে আরো অনেক জমি রয়েছে। যেসব জমিতে একটি মাত্র ফসল উৎপাদন হয়। সেখানে অথবা অপ্রয়োজনীয় জমিতে স্টেডিয়াম করলে তাদের আপত্তি নেই। তারা স্টেডিয়াম নির্মাণের বিপক্ষে নন, উন্নয়নের পক্ষে। কারণ, এটি হলে খেলাধুলা বাড়বে।

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আল-আমিন বলেন, ‘প্রান্তিক কৃষকদের পক্ষে জমি রক্ষায় জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি। সেখানে ফসলি জমিতে স্টেডিয়াম না করার দাবিও জানিয়েছি। কারণ তিন ফসলি জমিতে স্টেডিয়াম হলে কৃষক ভূমিহীন হয়ে পড়বে। জেলা প্রশাসককে উপজেলার চরভাঙ্গা মৌজায় স্টেডিয়াম নির্মাণে মতামত দিয়েছি।’

এ ব্যাপারে হাইমচর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরুপম মজুমদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘যেখানে মিনি স্টেডিয়াম করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, সেখানকার কৃষক আমাদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিন সদস্যের কমিটি করে দিয়েছেন। ওই কমিটি প্রতিবেদন দিলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

তবে প্রস্তাবিত জমিতে স্টেডিয়ামের পক্ষে যৌক্তিকতা তুলে ধরে হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘যেখানে আমরা স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছি, তাতে কোনো কৃষকের ক্ষতি হবে না বরং এলাকার উন্নয়ন হবে। এছাড়া ভালো কাজ করতে গেলে সামান্য কিছু মানুষের ক্ষতি হলেও উপজেলার আড়াই লাখ মানুষের উপকার হবে।’


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন