বিশ্ববাজারে কফি ও প্রাকৃতিক রাবারের দাম ঊর্ধ্বমুখী

বণিক বার্তা ডেস্ক

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাপপ্রবাহ কফি ও প্রাকৃতিক রাবারের মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ ছবি: রয়টার্স

বিশ্ববাজারে কফি ও প্রাকৃতিক রাবারের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় চলমান তাপপ্রবাহে পণ্য দুটির উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে সরবরাহ ঘাটতির আশঙ্কায় আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে কফি ও প্রাকৃতিক রাবারের দাম। খবর নিক্কেই এশিয়া।

আন্তর্জাতিক বাজারে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কফির দাম আগের প্রান্তিকের তুলনায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। এশিয়ার প্রধান উৎপাদনকারী দেশগুলোয় অতিরিক্ত তাপমাত্রা মূল্যবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। জুনের শেষে লন্ডনের ফিউচার মার্কেটে রোবাস্তা কফির দাম মার্চের শেষের তুলনায় ১৮ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। গত ৬ জুন প্রতি টন কফির মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৯৪ ডলার, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে একই সময় অ্যারাবিকা জাতের কফির ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাপপ্রবাহ কফির মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ। এপ্রিল থেকে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এমনকি এ অঞ্চলগুলোয় তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছেছে। ভিয়েতনাম বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ রোবাস্তা কফি উৎপাদনকারী দেশ। তবে দেশটির কফি চাষ বর্তমানে খরার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে কোবেভিত্তিক কফি ও চা ট্রেডিং হাউজের এক কর্মী এস ইশিমিতসু ও কো বলেন, গত বছরও রোবাস্তা জাতের কফির ফলন কম হয়েছে। এবারো বৈরী আবহাওয়ার কারণে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য বজায় না থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব কারণে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে কফির দাম বেড়েছে। 

তাপপ্রবাহ ছাড়াও ভিয়েতনামে কফি চাষ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে, প্রভাব ফেলছে মূল্যবৃদ্ধিতে। সম্প্রতি দেশটির কৃষকরা কফির পরিবর্তে ডুরিয়ান চাষের দিকে ঝুঁকছেন। ডুরিয়ান চাষের দিকে কৃষক বেশি মনোযোগ দেয়ায় কফি চাষের জন্য জমির পরিমাণও কমেছে। 

ডুরিয়ান সাধারণত কাঁটাযুক্ত আবরণ, মিষ্টি স্বাদ ও তীব্র গন্ধের জন্য পরিচিত একটি ফল। সম্প্রতি এটি চীনে খুব জনপ্রিয় হয়েছে। গত বছর চীনে ২ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের ডুরিয়ান রফতানি করেছে ভিয়েতনাম, যা আগের বছরের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি। এছাড়া সামনের বছরগুলোয় এটি আরো জনপ্রিয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ কারণেই কফির পরিবর্তে ডুরিয়ান চাষের দিকে নজর দিচ্ছেন কৃষক।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চলমান তাপপ্রবাহ প্রাকৃতিক রাবারের দামেও প্রভাব ফেলেছে।  পণ্যটি রফতানিতে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ দেশগুলো থেকে সম্প্রতি রফতানি কমেছে। গত ১০ জুন ওসাকা এক্সচেঞ্জে প্রাকৃতিক রাবারের দাম প্রতি কিলোগ্রাম ৩৬০ দশমিক ৯০ ইয়েনে পৌঁছেছে, যা গত মধ্য মার্চের পর থেকে সর্বোচ্চ।  

এ বিষয়ে কমোডিটি ফিউচার ট্রেডার কোম্পানি ইউটাকা ট্রাস্টি সিকিউরিটিজের গু জিয়ং বলেন, ‘চলতি বছর অতিরিক্ত তাপমাত্রায় রাবার গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে সরবরাহ কম থাকায় জুনে প্রাকৃতিক রাবারের দাম বেড়েছে।

প্রাকৃতিক রাবারের দাম জুনের শেষের দিকে কিছুটা কমে এলেও এর আগে দাম গত প্রান্তিকের তুলনায় ১০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছিল।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন