উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে সিরাজগঞ্জে
যমুনায় দ্বিতীয় দফায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে জেলার অভ্যন্তরীণ
ফুলজোড়, ইছামতি, হুড়াসাগর, করতোয়া ও বড়ালসহ বিভিন্ন নদী ও খালে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায়
চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এর কারণে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়ছে মানুষ।
এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে জেলা সদর, শাহজাদপুর ও কাজিপুরে শুরু
হয়েছে নদী ভাঙন। নদী ভাঙনে এরই মধ্যে বাড়ি-ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন
স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সিরাজগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)
কর্তৃপক্ষ জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে।
সিরাজগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী
রনজিত কুমার সরকার বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকালে জানান, গত কয়েক দিন যমুনা নদীর পানি
দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ১২ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে যমুনার পানি
২১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অপরদিকে গত ১২ ঘণ্টায় কাজিপুর উপজেলা পয়েন্টে যমুনার পানি
বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও পূর্বের তুলনায় ২৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে পানি বাড়ায় যমুনা তীরবর্তী সদরের কাওয়াকোলা, শাহজাদপুরের
জালালপুর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম ও সৈয়দপুর, কৈজুরী ইউনিয়নের হাটপাঁচিল ও
কাজিপুরের খাসরাজবাড়িতে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
এছাড়া সদরের যমুনা তীরবর্তী রতনকান্দি-বাহুকা ও কাজিপুরের
শুভগাছায় ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে পাউবোর নির্মিত নদী তীর রক্ষা বাঁধ।
শাহজাদপুরের হাটপাঁচিল গ্রামের আমিনুল ইসলাম জানান, এ এলাকায়
গত ৩ বছর ধরে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় সাত কিলোমিটার দীর্ঘ নদীর তীর রক্ষা
বাঁধ নির্মাণ করছে পাউবো। কিন্তু সে কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি তারা। এদিকে
নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
একই গ্রামের আবু সিদ্দিক সরকার বলেন, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে
এই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকালে পাঁচিল গ্রামের কোবাদ
মাস্টারের দোতলা ভবনসহ অনেক ঘরবাড়িও নদীতে বিলীন হয়েছে।
তিনি বলেন, গত দুই সপ্তাহে অর্ধশত বাড়িঘর ও জমিজমা নদী গর্ভে
বিলীন হয়েছে। পাউবো বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে কিন্ত
সেটি তেমন কাজে আসছে না।
অন্যদিকে কাজিপুর উপজেলার খাসরাজবাড়িতে যমুনার চরাঞ্চলে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, কাজিপুরের
খাসরাজবাড়িতে যমুনার চরাঞ্চলে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে, যমুনায় দ্বিতীয় দফায়
দ্রুত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর উপজেলার কাওয়াকোলা, শাহজাদপুরের হাটপাঁচিল ও
কাজিপুরের খাসরাজবাড়িসহ কিছু কিছু জায়গায় যমুনায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা
ভাঙন কবলিত এলাকায় সতর্ক দৃষ্টি রাখছি।
এছাড়া পাউবোর ড্রেজার দিয়ে চ্যানেলটি প্রশস্ত করার লক্ষ্যে
নদীর গতিপথ পরিবর্তনের জন্য খনন কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
নদী ভাঙন রোধে আপাতত ভাঙন কবলিত এলাকা চিহ্নিত করে প্রকল্পের
পাশাপাশি সেখানে জিওব্যাগে বালি ফেলে ভাঙন ঠেকানো হচ্ছে বলে জানান পাউবোর নির্বাহী
প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান।
এদিকে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় ভাঙনের মুখে থাকা সদর
উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বড়কয়রা কমিউনিটি ক্লিনিকটি বুধবার
নিলামে বিক্রি করা হয়।
কাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান (জিয়া
মুন্সি) বলেন, কাওয়াকোলা ইউনিয়নের হাট বয়ড়া, দৌগাছী, বড়কয়রা, ছোট কয়রা, কৈগাড়ী
দড়তা, চন্ডল বয়ড়া, বেড়া বাড়ী গ্রামে তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। অনেক গ্রাম এরই মধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে চলে
গেছে। ভাঙনের কারণে কমিউনিটি ক্লিনিক নিলামে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া দুটি মুজিব
কেল্লা, সাড়ে চার কিলোমিটার পাকা রাস্তা, বর্ণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের
মুখে রয়েছে। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার
দাবি জানান তিনি। এদিকে শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর, পাচিল, হাট পাচিল ও সৈয়দপুর
গ্রামেও নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা
মো. জাহিদুল ইসলাম হীরা জানান, যমুনা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে । নদী ভাঙনের
কারণে যেকোনো মুহূর্তে বয়কয়রা কমিউনিটি ক্লিনিক নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এ
কারণে কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে নিলাম বিক্রির কমিটি গঠন করে বুধবার (৩ জুন) প্রকাশ্যে নিলাম অনুষ্ঠিত হয় এবং ২৯ হাজার টাকায় বিক্রি করা
হয়।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান জানান, জালালপুর ও কৈজুরী ইউনিয়নের হাঁটপাচিল এলাকায় গত কয়েকদিন হয় ভাঙন শুরু হয়েছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতাও বেড়েছে। দুটি এলাকায় তিনদিনে অন্তত ৫০টি বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন কবলিতদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।