খাদ্যজনিত কারণে কত মানুষ অসুস্থ হয় তার কোনো তথ্য নেই: নিখাক চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : নিখাক

খাদ্য ব্যবস্থাপনায় প্লাস্টিকের ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (নিখাক) চেয়ারম্যান মো. জাকারিয়া। তিনি বলেন, এসব প্রক্রিয়ায় খাদ্য কতটা নিরাপদ থাকছে তা নিয়ে গবেষণা করতে হবে। খাদ্যজনিত কারণে কত মানুষ অসুস্থ হয়, আমাদের দেশে তার কোনো তথ্য নেই। আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে এ বিষয়ে তথ্য চাইলে তারা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই। তবে আইসিডিডিআরবি কিছু তথ্য দিয়েছে, তার প্রসেসিং চলছে।

মঙ্গলবার (১১ জুন) সকালে রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনে ‘খাদ্যজনিত অসুস্থতা ও স্বাস্থ্য বিপত্তি নিরসনে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) উদ্যোগে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি বলেন, বিশ্বের ১০ শতাংশ মানুষ অসুস্থ হয়। তবে আফ্রিকায় মানুষ সবচেয়ে বেশি অসুস্থ হয়। আর দক্ষিণ এশিয়ায় এ হার বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ যেহেতু দক্ষিণ এশিয়ার দেশ সেক্ষেত্রে আমরা খাদ্যজনিত অসুস্থতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছি। তবে এ ব্যাপারে আমাদের নিজস্ব কোনো জরিপ বা গবেষণা নেই।

ভেজাল প্রতিরোধে সামাজিক-মানসিক পরিবর্তন দরকার বলে মন্তব্য করেছেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা শুরুটাই করি ভেজাল দিয়ে। যেমন জন্ম নিবন্ধনে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছি, চাকরি নিতে গিয়ে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছি। এজন্য আমাদের সামাজিক ও মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। ভেজাল প্রতিরোধ করতে না পারলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব না। এজন্য উৎপাদন পর্যায়ে নজর না দিলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএফএসএ সদস্য আবু নূর মো. শামসুজ্জামান।

তিনি বলেন, একটি বাগানে কী পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহার করা হবে, সেখানে কৃষি কর্মকর্তাদের উপস্থিতি পাওয়া যায় না। কিন্তু যেখানে ভালো ফসল হয়, সেখানে তাদের সাইনবোর্ড দেখা যায়। ধান, শাক-সবজি উৎপাদনে কতটুকু সার, কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে তা দেখা দরকার।

ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আমরা যদি নিজেরা নীতি-নৈতিকতা না মানি তাহলে খাদ্য নিরাপদ করা যাবে না। মুড়িতে ইউরিয়া সার দেয়া হচ্ছে, কৃষিতে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে। পেশাদারদের মধ্যে পেশাদারত্ব না থাকলে শুধু নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ দিয়ে কাজ করলে খাদ্য নিরাপদ করা যাবে না।

খাদ্য ও নিরাপদ খাদ্যের তফাৎ, নিরাপদ খাদ্যের গুরুত্ব, খাদ্য ভেজাল ও রঙের ব্যবহার, খাদ্যজনিত রোগ, খাদ্যবিপত্তি, নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব, বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্যের পথচলা ও চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ।

তিনি বলেন, যেহেতু নিরাপদ খাদ্যের লোকবল কম তাই উপজেলা পর্যায়ে কাজ করতে হলে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।

আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির অধিকারকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেয়ার জন্য উপস্থিত সবাইকে আহ্বান জানান।

বিএফএসএর সদস্য ড. মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, আইইডিসিআরের ২০১৫ সালের হিসাবে দেশে ৩ কোটি মানুষ খাদ্যজনিত অসুস্থতায় ভোগে। তা ছাড়া অন্য একটি হিসেবে এ সংখ্যা সাড়ে ৪ কোটি।

অনুষ্ঠানে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, খাদ্য প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন