বাজেট প্রতিক্রিয়া

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ খাতে বরাদ্দ অপ্রতুল

ড. এম তামিম

ছবি : বণিক বার্তা

বাজেটের বরাদ্দ কমানো-বাড়ানো নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যকলাপের ওপর। যেমন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা প্রয়োজন। তাই সেখানে আরো বাজেট দরকার। কিন্তু প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তাদের বাজেট বরাদ্দ কম। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বাজেট কমানোর অন্যতম একটি কারণ হতে পারে নতুন কোনো প্রকল্প হয়তো গ্রহণ করা হচ্ছে না। বিদ্যুৎ খাতের চলমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি যে সমানভাবে রয়েছে তা নয়। সেগুলোর মধ্যেও আবার প্রাধিকারের বিষয় রয়েছে। যেমন মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন তৈরি হয়নি এখনো। সেখানে দ্রুত বরাদ্দ দেয়া দরকার। যদিও কোন প্রকল্পে কী পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি। 

গত তিন-চারটি বাজেট দেখেছি, নতুন কোনো উৎপাদন কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না। তবে সঞ্চালন লাইন বিতরণের জন্যই সিংহভাগ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। চলমান উৎপাদনের জন্য কিছু বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। নিউক্লিয়ার সাবস্টেশন স্থাপন ও ট্রান্সমিশন তো বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নয়। সেখানে হয়তো বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পে আমাদের নিজস্ব বিনিয়োগ রয়েছে। সেই প্রকল্পের ট্রান্সমিশনেও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে কম বরাদ্দ মানেই যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে অবহেলা করা হচ্ছে সেটা বলা ঠিক হবে না। 

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ খাতে মাত্র ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখন জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা দেখেছি, সেখানে ২০২৬ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন করবে। বাপেক্স একা কোনোভাবেই ৪৮টি কূপ খনন করতে পারবে না। তাই বিদেশী কোম্পানির সহায়তায় তা করতে হবে। বাপেক্স বছরে দুটি থেকে তিনটি কূপ খনন করতে পারবে। আর কূপ খননের ধরনও ভিন্ন। কিছু কিছু কূপ আছে অনুসন্ধান কূপ, সেগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যয়সাপেক্ষ। যেমন কিছুদিন আগে বাপেক্স কৈলাসটিলা কূপ বের করেছে। বাপেক্স বলেছে, এখান থেকে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট অতিরিক্ত গ্যাস পাওয়া যাবে। উৎপাদনশীল কূপের ব্যয়ও কম এবং সময়ও কম লাগে। এখন ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা কি পাইপলাইনের জন্য বরাদ্দ করা হলো? কারণ অনেক পাইপলাইন প্রতিস্থাপন (রিপ্লেসমেন্ট) করা দরকার। তিতাসের একটি বড় পরিকল্পনা রয়েছে, ঢাকা শহরের বিতরণ লাইন পরিবর্তন ও কমপ্রেসার স্টেশন বানানো। আসলে এ বরাদ্দগুলো অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর জন্য হচ্ছে কিনা তা বিস্তারিত না দেখলে বলা মুশকিল। 

৪৮টি কূপ খননে কমপক্ষে ৩-৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। যদিও ২০২৫ ও ২০২৬ সালের বাজেট রয়েছে। বাজেট তো বছরভিত্তিক দেয়া হয় এবং সেই বছরের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী দেয়া হয়ে থাকে। তবে আমি মনে করি, জরুরি ভিত্তিতে উৎপাদন বাড়ানোর একটি প্রচেষ্টা নেয়া দরকার ছিল। সেটা নির্ভর করে পেট্রোবাংলার নিজস্ব চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনার ওপর। কারণ এ বাজেট দেয়া হয় প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের চাহিদার ভিত্তিতে। এখন যদি পেট্রোবাংলা ২০ হাজার কোটি টাকা চেয়ে থাকে আর তাদের ১ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই সেখানে বড় ধরনের পার্থক্য হয়েছে। তবে আমি সেটা মনে করি না। তারা আসলে কত টাকা চেয়েছে সেটা আমরা জানি না। তাই তাদেরকে বাজেট কম দেয়া হয়েছে নাকি তাদের চাহিদামতো দেয়া হয়েছে সেটা বলা মুশকিল। তবে মোটাদাগে আমার কাছে মনে হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ খাতে অনুসন্ধানের জন্য যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা অপ্রতুল। এক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না। 

নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য পলিসি তৈরি বা গবেষণা কিংবা সচেতনতা ও প্রাথমিক খরচের জন্য এ খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ঠিক আছে। কিন্তু নবায়নযোগ্য জ্বালানির বড় প্রকল্প গ্রহণের জন্য এ অর্থ আসলে কিছুই নয়। তবে এ খাতের উন্নয়নে বৈদেশিক বিনিয়োগ দরকার। তাছাড়া সরকারের পক্ষে এ খাতে বিনিয়োগ করা কঠিন হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এ দুই খাতেই বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে। 

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে সোলার প্যানেলসহ প্রতিটি উপকরণই আমদানি করতে হয়। প্রকল্পের অবকাঠামোর ৮০ শতাংশ ব্যয় হয় বিদেশী মুদ্রায়। আর ২০ শতাংশ খরচ হয়ে থাকে দেশী মুদ্রায়। জমির দাম এ খরচের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়। নবায়নযোগ্য জ্বালানির মূল খরচ আমদানি ব্যয়। দেশে যেহেতু ডলারের সংকট রয়েছে। কাজেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নে বৈদেশিক বিনিয়োগ আনতেই হবে। 

কিন্তু বিদেশীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক দ্বিধাগ্রস্ত। কারণ বর্তমানে যেসব বিদেশী কোম্পানি দেশে ব্যবসা করছে তারা তাদের লভ্যাংশটি বিদেশী মুদ্রায় বাইরে পাঠাতে অনেক বেগ পাচ্ছে। যেমন শেভরনের প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার বাকি পড়ে রয়েছে। এছাড়া যেসব কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে তারা তাদের লভ্যাংশ ডলারেই ফেরত নিয়ে যেতে চায়। তবে দু-একটি কোম্পানি তাদের লভ্যাংশ পুনর্বিনিয়োগ করে থাকে, সেটা ভিন্ন কথা। বেশির ভাগ কোম্পানি তাদের লভ্যাংশ বাইরে নিয়ে যায়। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে সংকট রয়েছে, তাই বিদেশীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিধায় রয়েছে। 

বিদ্যুৎ খাতের যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো সরাসরি বিদ্যুৎ খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এটা সামগ্রিক অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সামগ্রিক অর্থনীতির এ সংকট শিক্ষা, সমাজকল্যাণ ও স্বাস্থ্যসহ সব মন্ত্রণালয়ের ওপরই পড়ছে। বর্তমান অর্থনীতিতে বিদেশী মুদ্রা ও দেশীয় টাকার সংস্থান এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা লক্ষ করছি, কর-জিডিপির অনুপাত ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। যে কারণে আমাদের রাজস্ব আহরণ বাড়ছে না। 

অর্থনৈতিক সংকট যদি কাটিয়ে উঠতে পারি তাহলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ক্ষেত্রে বিদেশী বিনিয়োগ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়ার প্রচেষ্টা অনেক সহজ হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির অনেক ধরনের সমস্যা আছে এবং অনেক ধরনের চিন্তাভাবনা আছে। বড় ধরনের প্রকল্পের বাইরে কৃষি, সেচ, মসজিদ-মন্দির, স্কুলগুলোয় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন করতে হলে ব্যাপকভাবে এখন থেকেই বিনিয়োগ করতে হবে এবং সেই বিনিয়োগ বেসরকারি খাত থেকেই আসা প্রয়োজন। কিছু বিনিয়োগ হয়তো সরকার করতে পারে। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় কমিয়ে আনার পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জায়গার ব্যবস্থা করে দেয়ার প্রয়োজন পড়বে। তবে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। অভ্যন্তরীণ নানা সংকটে রয়েছে আমাদের অর্থনীতি। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে জ্বালানির দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা জরুরি।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে পরিবহনের দাম বাড়ে এবং সেটা লাগামহীনভাবে বাড়ে। এটা আনুপাতিক হারে বাড়ে না। আমরা দেখেছি, তেলের দাম ৫ টাকা বাড়লে পরিবহন ভাড়া ১০ টাকা বাড়িয়ে দেয়া হয়। গত বছর হঠাৎ করে তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহনের ভাড়া বেড়ে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বিশেষ করে চাল, মাছ, মাংস, তরি-তরকারি ইত্যাদির মূল্যকে পরিবহন ব্যয় প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত করে। পরিবহন খরচের কথা বলে সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। গত বছরের ওই সময় অনেক জিনিসপত্রের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। আমি মনে করি, হঠাৎ এক ধাপে এত মূল্য বৃদ্ধি একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। ধীরে ধীরে বাড়ালে কিন্তু মূল্যস্ফীতির আঘাতটি এত আসত না। যা-ই হোক, এর পরও মূল্যস্ফীতি গড়ে ১০ শতাংশ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি গড়ে ১২ শতাংশ। 

এবারের বাজেটে সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা। গত বছরও বলা হয়েছিল ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে কিন্তু সেটা পারা যায়নি। এবারের বাজেটেও মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। দেখা যাক, আনতে পারে কিনা। এর মধ্যে যদি জ্বালানি তেলের মূল্য আরো বাড়ানো হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আবার বাড়বে। একইভাবে যদি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করি, তাহলে বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। ডলার সংকটের কারণে এরই মধ্যে বড় কোম্পানি ও ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলো ৫০-৭০ শতাংশ সক্ষমতায় উৎপাদন করছে। কারণ তারা লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলে কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে না। এর মধ্যে যদি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট হয় এবং দাম বাড়ে তাহলে স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদন কমে যাবে, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে এবং বাজারে এসব জিনিসের দাম বাড়বে। হয়তো বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবটি তাৎক্ষণিকভাবে আসে না। কারণ বিদ্যুতের বিল আসে এক মাস পড়ে। তারপর ধীরে ধীরে উৎপাদিত পণ্যের সঙ্গে সমন্বয় করে পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে আলু ও পেঁয়াজের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এক লাফে বেড়ে যায়। 

অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি যদি না চালু রাখতে পারি তাহলে কিন্তু সামগ্রিক অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব না। অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে দেখা যাচ্ছে, বেসরকারি বিনিয়োগ মোটামুটি স্থবির হয়ে আছে। অবকাঠামোতে সরকারি বিনিয়োগ সর্বোচ্চ। তার পরিপ্রেক্ষিতেই আমাদের জিডিপি বাড়ছে। ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে খুব একটি বড় পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না। তাই সবদিক বিবেচনায় বিদ্যুতের খরচটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। এ ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে গেলে দুটো বিষয়ে নজর দিতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ যাতে সর্বনিম্ন থাকে সেজন্য দক্ষতা বৃদ্ধি করে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কম। আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম কমে গেছে। তাই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদনে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যদিও গত বছরের তুলনায় এবার আমাদের উৎপাদন খরচ কমে এসেছে। বিদ্যুতের ভর্তুকি কমানোর দুটি উপায় আছে। একটি হলো উৎপাদন খরচ কমানো এবং আরেকটি হলো মূল্য বৃদ্ধি করা। সরকারের উচিত উৎপাদন খরচ কমানোর দিকে মনোযোগ দেয়া। আমি মনে করি, মূল্যবৃদ্ধি করলেও ভর্তুকি কিছু ক্ষেত্রে রাখা অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে চলমান ও বিদ্যমান যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো রয়েছে সেগুলোর মোট সক্ষমতা প্রায় ৩৭ হাজার মেগাওয়াটের মতো, যা ২০৩০ সালে কাঙ্ক্ষিত ৪০ হাজার মেগাওয়াট লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি। যদিও আমাদের ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াটের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সেটার কাছাকাছি হয়েছে। 

উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে এখন আমাদের কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে। জ্বালানি সরবরাহ বাড়াতে গেলে এ মুহূর্তে গ্যাস অনুসন্ধান ও গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন। জ্বালানি আমদানি করে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার সক্ষমতা বর্তমানে আমাদের অর্থনীতিতে সীমিত। তাই স্বল্প বিনিয়োগে হলেও নিজস্ব গ্যাস উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ যদি ১০০ বা ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস অতিরিক্ত উৎপাদন করা যায় তাহলে প্রায় হাজার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। বড় পুকুরিয়ায় আন্ডার গ্রাউন্ড মাইনিং যেটা করা হয়েছে তার উৎপাদন খুবই কম। এখন এক মিলিয়ন টনও বছরে উৎপাদন করতে পারছে না। কিছুদিন পরে হয়তো তা বন্ধ করেই দিতে হবে। যেখানে খরচ হচ্ছে প্রতি টনে ১৮০ ডলার। অথচ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বর্তমানে প্রতি টন কয়লা ১১০ ডলারে আমদানি করা যাচ্ছে। 

সুতরাং কয়লা দেশে উৎপাদন করবে নাকি করবে না বা কোন পদ্ধতিতে করবে—সে বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এর জন্য ভালো সমীক্ষা ও গবেষণা করা দরকার। বিদেশী কোম্পানি অনেক প্রস্তাবনা দিয়েছে যেগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তৃতীয় পক্ষ দিয়ে যাচাই-বাছাই করা দরকার। বড় ধরনের বিপর্যয় ছাড়া যদি আমরা কয়লা উৎপাদন করতে পারি তাহলে তো অনেক ভালো। কারণ জ্বালানি সরবরাহ তো বন্ধ করা যাবে না। জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করলে সামগ্রিক অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। ডলার সংকটের কারণে যেহেতু জ্বালানি আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে, তাই নিজস্ব জ্বালানির সরবরাহের কথা ভাবতে হবে। জ্বালানি উৎপাদন কীভাবে বাড়ানো যায় সেটাও চিন্তা করতে হবে। 

ড. এম তামিম: জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক, পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন