যুদ্ধে চাকরি হারিয়েছেন ৫ লাখ ফিলিস্তিনি

বণিক বার্তা ডেস্ক

আট মাস ধরে চলমান ইসরায়েলি আক্রমণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা ছবি: এপি

গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণে ধ্বংস হয়ে গেছে বাড়িঘর, হাসপাতাল থেকে শুরু করে বৃহৎ অবকাঠামো ও সড়ক যোগাযোগ। আট মাস ধরে চলমান সংঘাতে অঞ্চলটির বিভিন্ন খাতে নিযুক্ত ফিলিস্তিনিদের বেশির ভাগই কাজ হারিয়েছেন। কর্মসংস্থান থেকে ছিটকে পড়ার বিষয়টি গাজা থেকে পশ্চিম তীর ও ইসরায়েল পর্যন্ত বিস্তৃত। এতে প্রায় পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি চাকরি হারিয়েছেন। একই সময়ে অঞ্চলটিতে রাজস্ব সংগ্রহ ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ব্যয়ের ব্যবধান উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। খবর দ্য ন্যাশনাল।

অক্টোবরের যুদ্ধের পর থেকে গাজা উপত্যকায় আনুমানিক দুই লাখ ফিলিস্তিনি চাকরি হারিয়েছেন। ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মাঝে কাজ হারিয়েছেন অধিকৃত পশ্চিম তীরের ১ লাখ ৪৪ হাজার বাসিন্দা। এছাড়া পশ্চিম তীর থেকে ইসরায়েলি শ্রমবাজারে প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ফিলিস্তিনি। সব মিলিয়ে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বেকারত্বের মাত্রাকে রেকর্ড উচ্চতায় ঠেলে দিয়েছে চলমান যুদ্ধ।

পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের আর্থিক পরিস্থিতিও গত তিন মাসে নাটকীয়ভাবে খারাপ হয়েছে। জাতিসংঘের ‘দি ইমপ্যাক্ট অব দ্য কনফ্লিক্ট ইন দ্য মিডল ইস্ট অন দ্য প্যালেস্টাইন ইকোনমি’ শীর্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘চলমান যুদ্ধ উল্লেখযোগ্যভাবে অঞ্চলটির আর্থিক পতনের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।’

আরো বলা হয়, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে রেভিনিউ ক্লিয়ারেন্স বা ছাড়কৃত রাজস্ব স্থানান্তর তীব্রভাবে কমেছে। মূলত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপক হ্রাসের কারণে অর্থ সংগ্রহের খাতগুলো মূলত শুকিয়ে গেছে।

রাজস্ব ছাড় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জন্য অর্থ প্রধান উৎস। এ অর্থ ইসরায়েলের সংগৃহীত কর ও ফি থেকে প্রতি মাসে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে এ অর্থের উৎসে। এছাড়া বিভিন্ন কারণে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ কম অর্থ দিচ্ছে। এর প্রভাবে ফিলিস্তিন অঞ্চলে অর্থ সংস্থান ও ব্যয়ের ব্যবধান দ্রুত বাড়ছে, যা অঞ্চলটিতে একটি ‘আর্থিক সংকট’ তৈরি করছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের শেষ দিকে রাজস্ব সংগ্রহ ও অর্থায়নের ব্যবধান ৬৮ কোটি ২০ ডলারে পৌঁছেছিল এবং আগামী জুন নাগাদ তা দ্বিগুণ অর্থাৎ ১২০ কোটি ডলারের ঘর ছুঁতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে আর্থিক নীতিতে সংস্কারকে শীর্ষ এজেন্ডা হিসেবে অগ্রাধিকার দিতে হবে। মজুরিসহ ব্যয়ের বিভিন্ন খাতে কাটছাঁটের পাশাপাশি কর সংগ্রহের ওপর জোর দিতে হবে।

যুদ্ধে অবকাঠামোগত ক্ষতির পাশাপাশি দারিদ্র্য ব্যাপক মাত্রায় বাড়িয়ে তুলেছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি বছরের মধ্যে ফিলিস্তিনের অর্থনীতি ৬ দশমিক ৫ থেকে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে।

তবে কিছু শর্তের ওপর নির্ভর করছে অর্থনীতি সম্পর্কে এ পূর্বাভাস। এর পুরোটাই হলো যুদ্ধজনিত অনিশ্চয়তা। সংঘাতের তীব্রতা ও সময়কাল, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি নীতির পরিবর্তন, ইসরায়েলের শ্রমবাজারে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ ও রেভিনিউ ক্লিয়ারেন্সের বিষয়গুলো নির্ভর করছে।

রামাল্লার আরব আমেরিকান ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক নাসের মুফরেজ বলেন, ‘ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর থেকে ফিলিস্তিনের অর্থনীতি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাজার অর্থনীতি এখন প্রায় শূন্য। গাজার অর্থনীতি ফিলিস্তিনের জিডিপিতে রাখা সব অবদান হারিয়েছে, যা আগে বার্ষিক ভিত্তিতে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার ছিল। অন্যদিকে জিডিপি হিসাবে এখন পর্যন্ত ১৫-২০ শতাংশ সক্ষমতা হারিয়েছে পশ্চিম তীরের।’

তার মতে, ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি শ্রমিকদের প্রবেশাধিকার প্রত্যাখ্যান, গাজা ও পশ্চিম তীরে ব্যবসায়িক কার্যকলাপের পতন, সেই সঙ্গে ইসরায়েল থেকে রাজস্ব ছাড়ের হ্রাস সামগ্রিক পরিস্থিতির জন্য দায়ী। নাসের মুফরেজ বলেন, ‘রাজস্ব ছাড়ের ৫০ শতাংশ অর্থ আটকে রেখেছে ইসরায়েল। সাত মাস ধরে তারা আগের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ অর্থ স্থানান্তর করেছে, এর পরিমাণ প্রায় ১২ কোটি ডলার। এ অর্থ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কর্মচারীদের বেতন, সামরিক ও বেসামরিক পরিষেবা খরচের প্রায় ৪০ শতাংশ।’

তারল্য সংকটের কারণে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ অভূতপূর্ব মাত্রার অনিশ্চয়তা ও নজিরবিহীন আর্থিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছে। অর্থনৈতিক কার্যকলাপ হ্রাসের কারণে স্থানীয় করও হ্রাস পেয়েছে বলে জানান তিনি।

বিশ্বব্যাংক বলছে, যুদ্ধের মধ্যে ফিলিস্তিনের মাথাপিছু জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০২৩ সালে মাথাপিছু জিডিপি কমে দাঁড়িয়েছিল ৩ হাজার ৩৬০ ডলারে, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১২ শতাংশ কমেছে। এর মধ্যে শুধু গাজায় মাথাপিছু জিডিপি কমেছে ২৮ শতাংশ। এছাড়া ২০২৩ সালে মাথাপিছু প্রকৃত আয়ে সর্বনিম্ন রেকর্ড করেছে অঞ্চলটি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন