অংশীজনদের সহযোগিতা ছাড়া আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা সম্ভব নয় —অর্থ বিভাগের সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

দেশে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীজনদের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। সহযোগিতা না থাকলে এক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার। তিনি গতকাল রাজধানীর পর্যটন ভবনে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) আয়োজিত এফআরসির অগ্রযাত্রায় পেশাদারদের ভূমিকা শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থ বিভাগের সাবেক সচিব ও সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী। তিনি তার প্রবন্ধে এফআরএ আইনের নানা দিক ও বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং অংশীজনদের সঙ্গে এফআরসির কার্যক্রমের সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন। সেমিনারে আলোচক হিসেবে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিন নিরীক্ষা চর্চার মানোন্নয়নে এফআরসি ও আইসিএবির একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) প্রেসিডেন্ট ড. মো. সেলিম উদ্দিন তার বক্তব্যে অনিয়ম রোধে নিরীক্ষকদের সুরক্ষা দিতে আইনী কাঠামো থাকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্টের (এফআরএ) মাধ্যমে ২০১৬ সালে এফআরসির যাত্রা শুরু হয়। তার পর থেকে সংস্থাটি দেশের হিসাব ও নিরীক্ষা চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। এরই মধ্যে এফআরসি বেশকিছু স্ট্যান্ডার্ডস ও প্রবিধান তৈরি করেছে। শুধু এগুলো তৈরি করলেই হবে না এর বাস্তবায়নও করতে হবে। এগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অংশীজন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় দরকার।’

এফআরসির চেয়ারম্যান ড. মো. হামিদ উল্লাহ ভূঁঞা বলেন, ‘এফআরসি সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো জনস্বার্থ সংস্থার (পিআইই) আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য কাজ করছে। পাশাপাশি নিরীক্ষকদের নিয়ন্ত্রক হিসেবেও আমরা কাজ করছি। এরই মধ্যে ২০২৩ সালের জন্য নিরীক্ষকদের তালিকাভুক্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এতে বেশকিছু নিরীক্ষক অসত্য ও অসংগত তথ্য দেয়ার কারণে তালিকাভুক্ত হতে ব্যর্থ হয়েছেন। দেশের নিরীক্ষার মানোন্নয়নের জন্য আমরা আইসিএবি ও আইসিএমএবির সঙ্গে কাজ করছি। 

এফআরসি এখন পর্যন্ত অনেক নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এফআরসির পক্ষ থেকে নিরীক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইসিএবিকেও বলা হয়েছে। তারাও এক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিয়েছে। জনবল সংকটের কারণে এফআরসির কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমরা নতুন করে জনবল নিয়োগের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছি। নতুন কর্মীরা যোগ দেয়ায় তারা এফআরসির কার্যক্রমে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন বলে আশা করছি।’

সেমিনারের টেকনিক্যাল সেশনে চারটি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়। এর মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন কাঠামোর ওপর উপস্থাপিত প্রবন্ধে এফআরসির নির্বাহী পরিচালক এম আনোয়ারুল করিম, সরকারি সংস্থাগুলোর নিরীক্ষার মানোন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন। এফআরসির নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম আর্থিক তথ্যের ওপর উপস্থাপিত প্রবন্ধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে আর্থিক প্রতিবেদনের ব্যতয়ের বিষয়গুলো চিহ্নিত করার ওপর গুরুত্ব দেন। নিরীক্ষার চর্চার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে উপস্থাপিত প্রবন্ধে এফআরসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাঈদ আহমেদ দেশে নিরীক্ষা চর্চার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়ম চিত্র তুলে ধরে এক্ষেত্রে পেশাদারি আচরণ মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এফআরসির নির্বাহী পরিচালক ড. আহমদুজ্জামান তার প্রবন্ধে আর্থিক প্রতিবেদন ও নিরীক্ষা চর্চার আইনি কাঠামো ও এর নানা চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন