১০০ কোটি রুপির সমপরিমাণ বকেয়া

কমানো হয়েছে ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

১০০ কোটি রুপি বকেয়া থাকায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ সীমিত করে দিয়েছে ত্রিপুরা স্টেট ইলেকট্রিসিটি করপোরেশন লিমিটেড (টিএসইসিএল)। যথাসময়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছ থেকে বিল না পাওয়ায় এক বছর ধরে এ ব্যবস্থা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেয়া এক বক্তব্যে এ তথ্য জানিয়েছেন টিএসইসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেবাশীষ সরকার।

এনএনআইকে তিনি জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ বিপিডিবির কাছে ১০০ কোটি রুপির মতো বকেয়া পড়েছে। এ অর্থ পেতে অব্যাহতভাবে টিএসইসিএলের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে তারা জেনেছেন, আর্থিকভাবে বিপিডিবি সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এক বছর ধরে বিপিডিবি সময়মতো বিল পরিশোধ না করায় বকেয়ার পরিমাণ বেড়েছে।

টিএসইসিএল তাদের বকেয়ার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি দিয়েছে। এমনকি অর্থ পেতে বিপিডিবির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করেছে। বকেয়া অর্থের বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে টিএসইসিএল। বকেয়া বেড়ে যাওয়ায় টিএসইসিএলের বর্তমান আর্থিক ব্যবস্থাপনায় প্রভাব পড়েছে।

বাংলাদেশ থেকে সময়মতো অর্থপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এনভিভিএনের (এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগম লিমিটেড) সঙ্গে আলোচনা করেছে রাজ্যভিত্তিক বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান টিএসইসিএল।

ভারত থেকে সরকারিভাবে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে ১ হাজার মেগাওয়াট এবং ত্রিপুরা দিয়ে ১৬০ মেগাওয়াট। ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে ভারতীয় বিদ্যুৎ খাতের প্রতিষ্ঠান এনভিভিএনের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে বিপিডিবির।

টিএসইসিএলের ভাষ্য অনুসারে, ত্রিপুরা থেকে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি রয়েছে। বর্তমানে সংস্থাটি ১০০ থেকে ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। সংস্থাটির প্রধান জানিয়েছেন, বর্তমানে তারা জানুয়ারি মাসের বিদ্যুৎ সরবরাহের বিল পেয়েছেন। এটা পাওয়ার পরও তিন থেকে চার মাসের বকেয়া এখন নিয়মিত থাকছে। এ কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ সীমিত করা হয়েছে।

দেবাশীষ সরকার বলেন, ‘আমরা হঠাৎ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারি না। এটি একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অংশ। বিদ্যুৎ সরবরাহ সীমিত করার কারণ সময়মতো অর্থ না পাওয়া। আমরা যদি নিয়মিত বিল পেতাম, তাহলে টিএসইসিএলের রাজস্ব আয় আরো ভালো থাকত। রাজ্যের অর্থনীতিতে বড় আকারে অবদান রাখতে পারতাম। কিস্তিতে বকেয়া পরিশোধ করছে বাংলাদেশ। রাজ্যের বিদ্যুৎ করপোরেশনের তহবিল ব্যবস্থাপনায় এর প্রভাব পড়ছে।’

ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিপিডিবির শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

দেশে আমদানীকৃত বিদ্যুতের লোড ম্যানেজমেন্ট করা হয় ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টার (এনএলডিসি) থেকে। এটি পরিচালনা করে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। সংস্থাটির ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিগত তিন মাসের তথ্য থেকে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত রাজ্যটি থেকে বিদ্যুৎ আমদানি হয়েছে সর্বোচ্চ ১৩২ মেগাওয়াট। আর সর্বনিম্ন ৮০ মেগাওয়াটের মতো। গতকাল রাত ৯টায় ৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এসেছে, দিনে আসে সর্বোচ্চ ৮৬ মেগাওয়াট।

দেশের বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ বিপিডিবি বিপুল পরিমাণ বকেয়া ফেলেছে বেসরকারি ও আমদানি করা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কাছে। এ বকেয়ার পরিমাণ একটা সময় ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। যদিও বকেয়া পরিশোধে ভর্তুকির মাধ্যমে বিশেষ বন্ড ইস্যু করছে সরকার। এর পরও বকেয়া থেকে বের হতে পারছে না সংস্থাটি।

বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার অংশ হিসেবে ২০১০ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। এর আওতায় ত্রিপুরার বিদ্যুৎ কোম্পানি টিএসইসিএলের কাছ থেকে এনভিভিএনের মাধ্যমে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি হয়। এরপর ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ এনটিপিসি ও পিডিবির মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি হয়। পরে ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল আরো ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে পিডিবি ও এনভিভিএনের মধ্যে আরেকটি চুক্তি হয়। 

বর্তমানে ত্রিপুরার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে ৬০-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। এক সময় রাজ্যে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত ছিল। বর্তমানে চাহিদা বাড়ায় বিনিময়ের মাধ্যমে সেখানে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। গ্যাসের সংকটের কারণে ত্রিপুরায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো যাচ্ছে না। সেখানে তাপভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবহার বেড়ে গেছে। এতে সেখানকার বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন