ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ

বিদ্যুচ্চালিত ট্রেন প্রবর্তনে খরচ হবে ৯ হাজার ১৭০ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

দেশের ব্যস্ততম রেলপথ ঢাকা-চট্টগ্রাম। রেলপথটি বিদ্যুচ্চালিত হিসেবে রূপান্তর করতে সম্প্রতি একটি সমীক্ষার কাজ শেষ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সমীক্ষা অনুযায়ী, ৭০টি স্টেশনসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ৩৪৮ কিলোমিটারের বেশি রেলপথ বিদ্যুচ্চালিত হিসেবে রূপান্তর করতে দরকার হবে ৭৮ কোটি ১৭ লাখ ৯৪ হাজার ৫৮৩ ডলার। ২৩ মে’র মুদ্রা বিনিময় হার অনুযায়ী যা ৯ হাজার ১৭০ কোটি টাকার সমান। ওভারহেড ক্যাটেনারি স্থাপন, বিদ্যুচ্চালিত ইঞ্জিন-কোচ (রোলিংস্টক) সংগ্রহ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়ার্কশপ-লোকোশেড নির্মাণে এ টাকা খরচ হবে।

সমীক্ষায় প্রস্তাবিত রেলপথটি দুটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে গেন্ডারিয়া-ঢাকা-জয়দেবপুর ও গেন্ডারিয়া নারায়ণঞ্জের মধ্যে হবে ‘‌কমিউটার লাইন’। ২০২৮ সালের মধ্যে বিদ্যুচ্চালিত এই কমিউটার লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। এই লাইনে ট্রেন চালানোর জন্য তিন-চারটি বিকল্প পরিকল্পনা রাখা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩০ মিনিট, ২০ মিনিট, ১৫ মিনিট অথবা ১০ মিনিট পর পর ট্রেন পরিচালনা করা হতে পারে।

দ্বিতীয় ভাগে গড়ে তোলা হবে টঙ্গী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ‘‌ইন্টারসিটি লাইন’। ২০৩২ সালে এ অংশের কাজ শেষ হবে। ট্রেন চলাচল শুরু হবে ২০৩৩ সালে। এই লাইনে ট্রেন পরিচালনার জন্যও তিনটি বিকল্প পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রথম পরিকল্পনায় ৬৬টি যাত্রীবাহী ট্রেন ও আটটি পণ্যবাহী ট্রেন, দ্বিতীয় পরিকল্পনায় ১০২টি যাত্রীবাহী ট্রেন ও ২২টি পণ্যবাহী ট্রেন এবং তৃতীয় পরিকল্পনায় ১৯০টি যাত্রীবাহী ট্রেন ও ২৬টি পণ্যবাহী ট্রেনের সংস্থান রাখা হয়েছে। পণ্যবাহী ট্রেনগুলো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রস্তাবিত ধীরাশ্রম ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর (আইসিডি) মধ্যে চলাচল করবে। যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো চলবে ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে। যাত্রীবাহী ট্রেনে ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে ৫০০ টাকা। পণ্যবাহী ট্রেনে প্রতি টন পণ্যের জন্য ৭৫০ টাকা রাজস্ব আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত রেলপথটির ব্যয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি অর্থ দরকার হবে বিদ্যুচ্চালিত ইঞ্জিন-কোচ সংগ্রহে। সব মিলিয়ে ৫২ কোটি ৬০ লাখ ডলার (প্রায় ৬ হাজার ১৭০ কোটি টাকা) ব্যয় হবে রোলিংস্টকের পেছনে। প্রায় ১৮ কোটি ডলার (২ হাজার ১০০ কোটি টাকা) খরচ হবে ওভারহেড ক্যাটেনারি স্থাপনের কাজে। অবশিষ্ট ৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার (প্রায় ৯০০ কোটি টাকা) লাগবে ওয়ার্কশপ ও লোকোশেড নির্মাণের জন্য। পুরো প্রকল্প এলাকায় দুটি করে ওয়ার্কশপ ও লোকোশেড নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিদ্যমান রেলপথটি বিদ্যুচ্চালিত ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য বর্তমানে একটি সমীক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সমীক্ষা প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ১৫ কোটি টাকা। রেলওয়েকে এ সমীক্ষার কাজটি করে দিচ্ছে ‘‌তুমাস তুর্কি ইঞ্জিনিয়ারিং কনসাল্টিং অ্যান্ড কনস্ট্রাক্ট্রিং কোম্পানি’ নামের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। বিদ্যুচ্চালিত রেলপথ রূপান্তরের সুযোগ অনুসন্ধানের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত, অর্থনৈতিক ও আর্থিক এবং পরিবেশ ও সামাজিকভাবে কতটা কার্যকর তা-ও নিরূপণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর বাইরে বিদ্যুচ্চালিত রেলপথ নির্মাণের বিস্তারিত প্রকৌশলগত নকশা প্রণয়ন করছে তারা। সম্প্রতি রেল ভবনে চূড়ান্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করা ট্রেনগুলো পরিচালনা করতে প্রায় ৩৫ শতাংশ খরচ কমবে। যাতায়াতে সময় কমবে ১০-১৫ শতাংশ। রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কমবে ৩০-৫০ শতাংশ। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন নিঃসরণ করবে ২০-৩০ শতাংশ। এসবের পাশাপাশি প্রকল্পটি রেলওয়ের রাজস্ব আয় বাড়াতেও ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

প্রকল্পটির জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দেশের অন্যতম শিল্প ও বাণিজ্যনগরী নারায়ণগঞ্জ। অন্যদিকে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম যেখান দিয়ে দেশের আমদানি-রফতানি পণ্যের ৯০ শতাংশ পরিবহন হয়। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রামের বিদ্যমান লাইনটি বিদ্যুচ্চালিত ট্রেন চলাচলের উপযোগী করলে তা দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। দেশের অর্থনীতির বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ প্রকল্প।

প্রকল্পটি সম্পর্কে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা এখনো সমীক্ষার পর্যায়েই রয়েছি। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে বিদ্যুচ্চালিত রেলপথ কতটা লাভজনক হবে, কোন প্রক্রিয়ায় রেলপথের কাজ বাস্তবায়ন হবে ইত্যাদি কাজগুলো করা হচ্ছে। সমীক্ষার পর আমরা যদি মনে করি, প্রকল্পটি রেলওয়ে ও দেশের অর্থনীতির জন্য লাভজনক, তাহলে আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরুর উদ্যোগ গ্রহণ করব। এর আগে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থান করা। এ কাজ যদিও সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ করবে, তার পরও আমরা বিষয়গুলো নিয়ে পরিকল্পনা-পর্যালোচনা শুরু করেছি।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন