বরিশাল শিশু হাসপাতাল

৫ বছর মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি নির্মাণকাজ

এম. মিরাজ হোসাইন, বরিশাল

ছবি : বণিক বার্তা

দক্ষিণাঞ্চলের প্রান্তিক শিশুদের আধুনিক উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা দিতে বরিশালে নির্মাণ করা হচ্ছে ২০০ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল। নির্ধারিত সময়ের পর পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়িয়েও নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এমনটা ঘটেছে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন সংস্থা গণপূর্ত অধিদপ্তর জানায়, হাসপাতাল ভবন নির্মাণ হলেই চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করা যাবে না। দরকার বিদ্যুৎ সংযোগ, চিকিৎসক, নার্স স্টাফ নিয়োগ। গণপূর্ত বিভাগ হাসপাতাল ভবন নির্মাণকাজের ৯৮ ভাগ সম্পন্ন করেছে। নকশা না পাওয়ায় বিদ্যুতের সাবস্টেশনের দোতলা ভবনের কাজ শুরু করা যায়নি। এই ভবন নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও নকশা না আসায় কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া এখন পর্যন্ত চিকিৎসক, নার্স স্টাফ নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে এই হাসপাতাল কবে চালু হবে তার কোনো সদুত্তর নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জিওবির অর্থায়নে বরিশালে ২০০ শয্যার শিশু হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে অনুযায়ী শিশু হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। দুই বছরের মধ্যে হাসপাতালটি নির্মাণকাজ শেষ করে চালু হাওয়ার কথা ছিল। এখন সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুনে হস্তান্তরের কথা থাকলেও তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

গণপূর্ত অধিদপ্তর বরিশাল নগরীর আমানতগঞ্জে ১৯ কোটি ৪৮ লাখ ৩৩ হাজার ৫১ টাকা ব্যয়ে ১০ তলা ভিতের ওপর প্রাথমিকভাবে চারতলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। কার্যাদেশ অনুযায়ী বিগত ২০১৯ সালে এই হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এর নির্মাণকাজ শেষ হয়নি গত পাঁচ বছরেও।

নির্মাণকাজে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে শিশু হাসপাতালটির ঠিকাদার কেএসবিএল/এসআরআরের মালিক বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘হাসপাতালের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জটিলতা ছিল। এছাড়া হাসপাতালের জায়গাটি ছিল একটি ডোবা। সেটি ভরাট করে কাজ শুরু করতে হয়েছে। এজন্য চলতি ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বর্ধিত করা হয়েছে। আশা করি, এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, শহীদ সুকান্ত বাবু শিশু হাসপাতালের প্রথম তলায় থাকবে জরুরি, রেডিওলজি, ডায়াগনস্টিক ওষুধ সরবরাহ বিভাগ। দ্বিতীয় তলায় থাকবে বহির্বিভাগ পেসেন্ট ডিপার্টমেন্ট, থেরাপি, ডায়াগনস্টিক প্যাথলজি বিভাগ। তৃতীয় তলায় থাকবে নিউনেটাল আইসিউ, অপারেশন ব্লক, কনফারেন্স রুম, অস্ত্রোপচার পরবর্তী সেবা ব্লক। চতুর্থ তলায় থাকবে প্রশাসনিক ব্লক, সাধারণ শিশু ওয়ার্ড, নিউনেটাল কেয়ার ইউনিট, ক্যান্টিন, অস্ত্রোপচার ব্লক সম্মেলন কক্ষ।

বর্তমানে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৬ শয্যার ওপর নির্ভর করে চলছে এখানকার শত শত শিশুর চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। অথচ এখানে প্রতিদিন ধারণক্ষমতার চার থেকে পাঁচ গুণ রোগী ভর্তি থাকছে। শীত মৌসুমে এই চাপ আরো বেড়ে যায়। তখন নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। সারা বছর এই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে ছয়টি জেলা ৪২টি উপজেলা থেকে আসা অসুস্থ শিশুরা। এই হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় একই শয্যায় দুজন, আবার অনেককে মেঝেতে শয্যা পেতে চিকিৎসা নিতে হয়। একইভাবে বহির্বিভাগে লেগে থাকে শিশুরোগীর ভিড়।

সম্প্রতি সরজমিনে দেখা যায়, চারতলা মূল ভবনের কাজ এখনো চলছে। জানালার গ্রিল স্থাপন এবং আনুষঙ্গিক অনেক কাজ এখনো বাকি। তার মধ্যে চিকিৎসা সরঞ্জাম, আসবাবপত্র, পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি স্থাপন তো দূরের কথা, তা কবে আসবে তাও বলতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কেউই।

বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেন হাওলাদার (হাসপাতাল) বলেন, ‘হাসপাতালের চারতলা মূল ভবনের কাজ ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শিশু হাসপাতালের সব কাজ সম্পন্ন করে ভবনটি হস্তান্তর করা যায়। তিনি আরো বলেন, ‘হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহে সাবস্টেশনের জন্য দোতলা ভবন নির্মাণকাজের সম্প্রতি দরপত্র কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। এখনো নকশা পাওয়া যায়নি, তাই কাজ শুরু হয়নি। কাজের অগ্রগতিও খুব একটা নেই।

বরিশালে এই প্রথম কোন বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল নির্মাণ হচ্ছে বলে জানান নির্মাণকাজ তদারক কমিটির সদস্য বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান। তিনি বলেন, ‘শহীদ সুকান্ত বাবু শিশু হাসপাতালটির সেবা কার্যক্রম শুরু হলে বরিশাল বিভাগের শিশুরা আধুনিক উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাবে। ভবন নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি ডিজি (মহাপরিচালক) সরজমিনে দেখে গেছেন। ভবন নির্মাণকাজ শেষ হলে হস্তান্তরের পর লোকবল নিয়োগ চিকিৎসা সরঞ্জাম বা আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখব। আশা করি, চলতি বছর আমরা এই হাসপাতালটি চালু করতে পারব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন