প্রযুক্তিগত বস্ত্র-পোশাকের মাধ্যমে মূল্য সংযোজন ও রফতানি আয় বাড়াতে চান বাংলাদেশের রফতানিকারকরা

শুরু হয়েছে টেকটেক্সটাইল ও টেক্সপ্রসেস প্রদর্শনী ২০২৪

বদরুল আলম I ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে গতকাল টেকটেক্সটাইল ও টেক্সপ্রসেস প্রদর্শনী ২০২৪-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে গতকাল শুরু হয়েছে প্রযুক্তিগত কারিগরি বস্ত্র ও বস্ত্র প্রক্রিয়াকরণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী টেকটেক্সটাইল ও টেক্সপ্রসেস প্রদর্শনী ২০২৪। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের পাঁচ প্রতিষ্ঠান। প্রযুক্তিগত বস্ত্র-পোশাকের মাধ্যমে মূল্য সংযোজন ও রফতানি আয় বাড়াতে চান বাংলাদেশের রফতানিকারকরা।

প্রদর্শনীর আয়োজক মেসে ফ্রাঙ্কফুর্টের তথ্য অনুযায়ী, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সহপ্রদর্শক হিসেবে প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে এমন পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে টিমস ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, আকিজ জুট মিলস, স্মী অ্যাপারেলস, এম অ্যান্ড এ সোর্সিং বাংলাদেশ এবং নেক্সজেন অ্যাপারেল। এ টেকটেক্সটাইল ও টেক্সপ্রসেস প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো অংশগ্রহণ করছে।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলো প্রদর্শনীতে প্রদর্শন করবে এমন বস্ত্র ও পোশাক পণ্যের মধ্যে রয়েছে কোটস অ্যাপারেল, প্রফেশনাল অ্যান্ড প্রটেকটিভ ক্লদিং, অ্যাকটিভ ওয়্যার, পাটজাত সুতা, পাটজাত কাপড়ের ব্যাগ ও অন্যান্য পণ্য, মেনস অ্যান্ড লেডিস লং অ্যান্ড শর্ট প্যান্ট, ওয়ার্কওয়্যার/ইউনিফর্ম, ওভেন ও নিট পোশাক ও লঞ্জারি।

গতকাল প্রদর্শনীর উদ্বোধনী দিনে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে উপস্থিত ছিলেন বার্লিনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর সাইফুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) পরিচালক রাজীব চৌধুরী।

বার্লিনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর সাইফুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এ প্রদর্শনীটি বাংলাদেশের পণ্য রফতানি খাতকে বৈচিত্র্যময় করে তুলতে সহায়ক। বিশেষ করে পোশাক পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে প্রদর্শনীটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’

পোশাক রফতানিকারকরা জানান, বৃষ্টির পানি নিরোধক পোশাক ও অগ্নিপ্রতিরোধী পোশাক তৈরির প্রধান উপকরণ বিশেষ প্রযুক্তিতে উৎপাদিত বস্ত্র বা কাপড়। এ ধরনের বস্ত্র ও পোশাক উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা যৎসামান্য। পর্যায়ক্রমে হলেও এ সক্ষমতা বাড়াতে চান সংশ্লিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তারা। এ লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত কারিগরি বস্ত্র ও বস্ত্র প্রক্রিয়াকরণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতেও অংশগ্রহণ করছেন তারা।

বিজিএমইএ পরিচালক রাজীব চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌ক্রেতাদের ধারণা বাংলাদেশের পোশাক রফতানিকারকরা শুধু মৌলিক পোশাক পণ্য উৎপাদনে সক্ষমতা রাখে। কিন্তু যৎসামান্য হলেও বাংলাদেশ যে টেকনিক্যাল এবং ফাংশনাল পোশাক উৎপাদনে সক্ষমতা রাখে, তা এ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ক্রেতাদের অবগত করা সম্ভব হচ্ছে। হাইএন্ড পণ্য উৎপাদনে না যেতে পারলে রফতানি আয় ব্যাপক হারে বাড়ানো সম্ভব না। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে এ প্রদর্শনী কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।’

প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্য প্রস্তুতকারক আকিজ জুট মিলস। প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত পাটজাত সুতা কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে প্রদর্শনীতে আসা ফ্রান্সভিত্তিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান গোডেটের ডিরেক্টর জেনারেল বার্নাড অবরি। জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘‌আমরা অনেক দিন ধরে বাংলাদেশ থেকে পাটজাত সুতা ক্রয় করি। কিন্তু তা সরাসরি ক্রয় করা হতো না। বরং ট্রেডারদের মাধ্যমে কিনতাম। আমরা এখন বছরে ৬০ টন পাটজাত সুতা সরাসরি কিনব বলে পরিকল্পনা করেছি। এ সুতা থেকে ফ্যাশন পণ্য তৈরি হবে।’

আকিজ জুট মিলসের চেয়ারম্যান সেখ নাসির উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌শুধু পাটজাত বস্তা দিয়ে সোনালি আঁশের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা যাবে না। ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য উৎপাদনে যেতে হবে। আমরা সেই পথে আছি। এ প্রদর্শনীটি পাটজাত পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য আদর্শ।’

টেকটেক্সটাইল প্রদর্শনীতে এগ্রোটেক, বিল্ডটেক ও মেডটেকের মতো বিভিন্ন খাতের প্রযুক্তিগত বস্ত্রের প্রদর্শন করা হচ্ছে। যেগুলো ওভেন ও ননওভেন কাপড়, কম্পোজিট ও ফাংশনাল পোশাকের বস্ত্র। টেক্সপ্রসেস প্রদর্শনীতে মেশিনারিজ বা যন্ত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। এসব যন্ত্র ডিজাইন, কাটিং, সেলাই, নিটিং এবং এমব্রয়ডারি থেকে ফিনিশিং, রিফাইনিং, আইটি ও লজিস্টিকস সম্পর্কিত।

আয়োজক সংস্থা জানিয়েছে, টেকনিক্যাল বা কারিগরি বস্ত্র আধুনিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য উপাদান, যা অ্যাকটিভওয়্যার এবং খেলাধুলার পোশাক থেকে শুরু করে জীবন রক্ষাকারী অগ্নিরোধী উপকরণ এবং চিকিৎসা বস্ত্র পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের প্রায়োগিক ক্ষেত্রে বিস্তৃত। গতিশীল জীবনযাপনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এবং কভিড-১৯-পরবর্তী ঘরের বাইরের কার্যক্রমে উচ্চ পারদর্শিতাসম্পন্ন বৃষ্টির পানি নিরোধক ও তাপপ্রতিরোধী উপকরণের চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ধরনের উদ্ভাবন প্রদর্শনের মূল কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে টেকটেক্সটাইল, যা হালনাগাদ বস্ত্র প্রযুক্তির পাশাপাশি টেক্সপ্রসেসের মাধ্যমে পোশাক ও বস্ত্র যন্ত্র প্রদর্শন করে।

প্রদর্শনীতে ইপিবি জাতীয় প্যাভিলিয়ন নিয়েছে, যা বাংলাদেশের অংশগ্রহণকে জোরদার করেছে। টেকটেক্সটাইলে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি টেক্সপ্রসেসে অংশ নিচ্ছে ট্রিপল ট্রি সলিউশন। এবারের আয়োজনে ১ হাজার ৬০০-এরও বেশি প্রদর্শকের পাশাপাশি ৫০ হাজারের বেশি দর্শনার্থীর উপস্থিতি প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আয়োজকদের দাবি প্রদর্শনীতে নেটওয়ার্কিং ও জ্ঞান আহরণের অবাধ সুযোগ রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন